Sylhet View 24 PRINT

সিলেটে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ডিজেবলড!

ফ্রি ওয়াইফাই’র হ-য-ব-র-ল অবস্থা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১১-২৪ ১৭:৪৪:৩৬

ছবি : মো. মুজাম্মেল হক

মো. রেজাউল হক ডালিম :: দেশের প্রথম ‘ওয়াইফাই সিটি’ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলো সিলেট। নগরীর ১২৬টি এক্সেস পয়েন্টে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা চালুর মধ্য দিয়ে ‘ওয়াইফাই সিটি’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এ আধ্যাত্মিক নগরী। কিন্তু বর্তমানে নগরীতে সেই ফ্রি ওয়াইফাই’র অবস্থা হ-য-ব-র-ল। ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো স্থানে দেখায় ‘ডিজেবলড’, আবার কোনো স্থানে ব্যবহার করতে পারলেও গতি থাকে ‘বিরক্তিকর’ পর্যায়ের।

২০১৯ সালের ২৭ জুন ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’র উদ্বোধন করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় চালু হয় ‘পাবলিক ওয়াই-ফাই জোন’। গত বছর উদ্বোধন করা হলেও এর ব্যবহার শুরু হয় চলতি বছেরের এপ্রিল মাস থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সিলেটকে ‘ওয়াইফাই সিটি’ আখ্যা দিয়ে এর ইউজার নেম দেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ও পাসওয়ার্ড হিসেবে রাখেন জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’।

সিলেট নগরীর ৬২টি এলাকার ১২৬টি স্থানে ফ্রি ওয়াইফাই সেবা চালুর মধ্য দিয়ে ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’র বাস্তবায়ন শুরু হয়। এতে নগরীর যে কোনো বাসিন্দা ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন বলে জানানো হয়।

ফ্রি ওয়াইফাই’র ১২৬টি এক্সেস পয়েন্ট (এপি) হচ্ছে- চৌকিদেখিতে ১টি, আম্বরখানা পয়েন্টে ৪টি, দরগা গেইটে ২টি, চৌহাট্টায় ৩টি, জিন্দাবাজারে ৪টি, বন্দরবাজার ফুটওভার ব্রিজ এলাকায় ৩টি, হাসান মার্কেট এলাকায় ৫টি, সুরমা ভ্যালি রেস্ট হাউস এলাকায় ২টি, সার্কিট-হাউস জালালাবাদ পার্ক এলাকায় ৩টি, ক্বিন ব্রিজের দুই প্রান্তে ৬টি, রেলওয়ে স্টেশনে ৪টি, বাস টার্মিনালে ৩টি, কদমতলী পয়েন্ট ও সংলগ্ন এলাকায় ৫টি, হুমায়ুন রশীদ চত্বরে ৩টি, আলমপুর পাসপোর্ট অফিস এলাকায় ২টি, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় এলাকায় ৩টি, সিলেট শিক্ষাবোর্ডে ২টি, উপশহর রোজভিউ পয়েন্টে ২টি, শহাজালাল উপশহর ই-ব্লক ও বি-ব্লকে ১টি করে ২টি, টিলাগড় পয়েন্টে ৩টি, এমসি কলেজ এলাকায় ২টি, শাহী ঈদগাহ এলাকায় ৩টি, কুমারপাড়া এলাকায় ৩টি, কুমারপাড়া সড়কে ২টি, দক্ষিণ বালুচরে ১টি, টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ১টি এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ১টি,  নাইওরপুল পয়েন্টে ২টি, মিরাবাজার সড়কে ১টি, রায়নগর এলাকায় ১টি, সোবহানীঘাট পুলিশ স্টেশন এলাকায় ২টি, ধোপাদিঘীরপাড় বঙ্গবীর ওসমানী শিশু উদ্যানে ১টি, বন্দরবাজার জামে মসজিদ এলাকায় ২টি, নয়াসড়ক পয়েন্ট ও সংলগ্ন এলাকায় ৪টি, কাজীটুলা এলাকায় ২টি, চৌহাট্টা সড়কে ৩টি, হাউজিং এস্টেট সড়কে ১টি, সুবিদবাজারে ১টি, মিরের ময়দানে ১টি, পুলিশ লাইন সড়কে ১টি, রিকাবীবাজার জেলা স্টেডিয়ামে ২টি, মদন মোহন কলেজ এলাকায় ১টি, মির্জাজাঙ্গাল সড়ক এলাকায় ২টি, পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট এলাকায় ১টি, খুলিয়াপাড়া এলাকায় ১টি, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি এলাকায় ১টি, তালতলা হোটেল গুলশান এলাকায় ১টি, কাজিরবাজার সেতু এলাকায় ১টি, কাজিরবাজার সড়কে ২টি, খোজারখলা সিলেট টেকনিক্যাল কলেজ এলাকায় ১টি, বাগবাড়ি ওয়াপদা মহল্লা এলাকায় ১টি, পাঠানটুলায় ১টি, মদিনা মার্কেট পয়েন্টে ২টি, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গেটে ২টি এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজ এলাকায় ১টি।

উদ্বোনকালে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, এসব এক্সেস পয়েন্টের প্রতিটিতে একসঙ্গে ৫০০ জন যুক্ত থাকতে পারবেন। এরমধ্যে একসঙ্গে ১০০ জন উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিটি এক্সেস পয়েন্টের চতুর্দিকে ১০০ মিটার এলাকায় ব্যান্ডউইথ থাকবে ১০ মেগাবাইট/সেকেন্ড।

কিন্তু শুরু থেকেই এই ‘পাবলিক ওয়াই-ফাই’র গতি ছিলো অন্যান্য অপারেটরের তোলনায় খুবই কম। আর বর্তমানে নগরীর অনেক জায়গায় কাজই করছে না এই ফ্রি ওয়াই-ফাই।

প্রথমদিকে শিক্ষার্থীসহ তরুণ ও যুবকদের এ নিয়ে অনেক আগ্রহ থাকলেও কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে এখন সেটি সার্চ করেও করেন না কেউ। গত কয়েকদিনের পরিদর্শনে ফুটে উঠেছে এমন চিত্র।

জিন্দাবাজারের এক ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে জানান, ‘প্রথমদিকে কোনোমতে ফেসবুকটাই শুধু চালাতে পারতাম। কিন্তু এখন তো জিন্দাবাজার এলাকায় এটি ‘ডিজেবলড’ দেখায়।’ এ সময় ওই ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে তার হাতে থাকা স্মার্ট ফোনে সার্চ দিয়ে বিষয়টির সত্যতাও প্রমাণ করেন।

এ বিষয়ে কথা হয় নগরীর চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বসে মোবাইল ব্যবহারকারী কয়েকজন তরুণের সঙ্গে। আলাপকালে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এটি কোনো ইন্টারনেট? প্রথম প্রথম একটু-আধটু সিগন্যাল পাওয়া গেলেও এখন তো সেটি চলেই না। প্রথমেই এর গতি ছিলো ২-জি’র মতো। ফেসবুক ছাড়া আর কোনো ওয়েবসাইটে ঢুকাই যেতো না।

তবে নগরীর জিতু মিয়া সিএনজি স্ট্যান্ডের এক অটোরিকশা চালক বললেন, আমাদের এখানে সিগন্যাল মিলে। ব্যবহারও করা যায়। তবে ইউটিউব দেখার ক্ষেত্রে কয়েক সেকেন্ড পরপরই আটকে যায়। আধা ঘণ্টার কিছু দেখতে লাগে এক ঘণ্টা।

এদিকে, ১২৬টির মধ্যে অর্ধশতাধিক পয়েন্ট এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- বেশিরভাগ পয়েন্টেরই ফ্রি ওয়াই-ফাই চলে না। চললেও সেটি না চলার মতো। ফেসবুকই ঠিকমতো ব্যবহার করা যায় না।

তবে কর্তৃপক্ষ বললেন ভিন্ন কথা। বললেন- ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’র ফ্রি ওয়াই-ফাই চলছে ভালোমতোই। কিন্তু আলাপের এক পর্যায়ে কোথাও কোথাও এটি  কাজ না করা কথা স্বীকার করলেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে কথা হয় ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্পের উপ-পরিচালক মধুসূদন চন্দের সঙ্গে। তিনি সিলেটভিউ-কে বলেন, আমাদের জানামতে ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’র ফ্রি ওয়াই-ফাই-এ কোনো সমস্যা নাই।

বন্দর, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা এলাকায় এটি ‘ডিজেবলড’ দেখায় কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু কিছু স্থানে এটি ঠিকমতো কাজ করছে না এটি ঠিক। তবে বেশিরভাগ জায়গায় নগরবাসী ব্যবহার করতে পারছেন।  উল্লেখিত এলাকায় উন্নয়নকাজের জন্য কয়েক দফা লাইন কর্তনের জন্য এ সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান মধুসূদন চন্দ।

ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্পের উপ-পরিচালক জানান, খুব শীঘ্রই এই প্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ সময় একটি সংবাদ সম্মেলন করা হবে এবং মুক্তভাবে মানুষের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তীতে প্রকল্পটির সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। সিসিকের অধীনে এটি চলে গেলে সেবাগ্রহীতাদের সুবিধার্থে ২৪ ঘণ্টার জন্য একটি কন্ট্রাক্ট নাম্বার চালু করা হবে। যে নাম্বারে ফ্রি ওয়াই-ফাই\\\'র সুবিধা ভোগকারী নাগরিকের অভিযোগ ও মতামত গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করা হবে রাত-দিন।

উল্লেখ্য, ডিজিটাল সিলেট সিটি’র প্রকল্পের আওতায় আছে ‘পাবলিক ওয়াই-ফাই জোন’, ‘সার্ভিলেন্স সিস্টেম’ এবং ‘অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম’। এগুলোর অধীনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আধুনিক সুবিধা হচ্ছে- নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর নজরদারি এবং চেহারা ও যানবাহনের নাম্বার প্লেট চিহ্নিত করতে সক্ষম আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ক্যামেরা, নগরীর ১২৬টি ওয়াই-ফাই এক্সেস পয়েন্ট (এপি), ২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অটোমেশন, হেলথ ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, নগরে ৩৬ কম্পিউটার লিটারেসি সেন্টার, সিটিজেন সার্ভিস উন্নয়ন ও ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি উন্নয়ন।  

আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে এই মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রকল্প পরিচালক ও সহকারী প্রকল্প পরিচালক।

এই প্রকল্পের উপ-পরিচালক ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের সেন্টার ইনচার্জ ও প্রগ্রামার মধুসূদন চন্দ বলেন, ‘ডকুমেন্ট অব প্রজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) তথ্য অনুযায়ী এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল আরও আগেই। তবে বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ২৪ নভেম্বর, ২০২০ / ডালিম

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.