Sylhet View 24 PRINT

সিলেটে শ্রমিকের মৃত্যু, যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৪-১৮ ১৬:২৯:৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ বাঙ্কার এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের সময় কালবৈশাখির কবলে পড়ে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত শ্রমিক জহিরের মা রিনা বেগম বাদি হয়ে গত শুক্রবার কোম্পানীগঞ্জ থানায় এ মামলা করেন।

মামলায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাসেল মিয়া (৩২), শাহাবুদ্দিন (৩৫) ও যুবলীগ নেতা কেফায়েত উল্লাসহ (২৮) অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত আসামিদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার ভোরে পাথর উত্তোলনের সময় ঝড়ের কবলে পড়ে পাথর শ্রমিক জহির আলমের (২০) মৃত্যু হয়। তিনি সিলেটের জালালাবাদ থানার নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত ইউনুছ আলীর ছেলে।

জানা গেছে, লকডাউনের সুযোগে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিসংলগ্ন রেলওয়ের রজ্জুপথের (রোপওয়ে) সংরক্ষিত এলাকায় পাথর লুটপাট শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রির) ভোরের দিকে এক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় পাথর লুটপাটের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।

এদিকে, ঘটনার দিন নিহত শ্রমিকের  লাশ সরিয়ে ফেলা হলে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ওই দিন (বৃহস্পতিবার) বিকেলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশে হস্তান্তর করেন।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির ধলাই নদ হয়ে একদল পাথরশ্রমিকের সঙ্গে জহির রজ্জুপথের সংরক্ষিত এলাকায় (বাংকারে) প্রবেশ করেন। সেখান থেকে পাথর উত্তোলন করে নৌকায় করে নিয়ে যাওয়ার পথে কালবেশাখি ঝড়ে পাথরবাহী নৌকা ডুবে যায়। সকাল ১০টার দিকে জহিরের লাশ উদ্ধার করে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন তাঁর সহযোগীরা। খবর পেয়ে ভোলাগঞ্জ ফাঁড়ির বিজিবি সদস্যরা লাশ উদ্ধার করেন। বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

নিহত জহিরের এক আত্মীয় জানিয়েছেন, জহিরসহ তাঁর আত্মীয় চারজন শ্রমিককে দ্বিগুণ মজুরি দেওয়ার কথা বলে বুধবার রাতে ধলাই নদে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালে জানানো হয়, ঝড়ে নৌকাডুবিতে জহিরের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পাথর পরিবহনে স্থল কিংবা জলযানের বিকল্প হিসেবে ভোলাগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জের ছাতকে রজ্জুপথ স্থাপন হয় ১৯৬৪ সালে। এ রজ্জুপথে ১১৯টি খুঁটি রয়েছে। ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথের সংরক্ষিত এলাকার লোডিং স্টেশনকে ‘বাংকার’ বলে ডাকা হয়। প্রায় ৩৫৯ একর আয়াতনের ওই এলাকা ধলাই নদ ও ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাশে হওয়ায় সেখান থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছে একটি চক্র।

এলাকাবাসী জানান, লকডাউন ঘোষণার পর থেকে একটি চক্র রাতের বেলা রজ্জুপথের সংরক্ষিত এলাকা খোড়াখুঁড়ি করে পাথর তুলছিল। জহির সেই চক্রের মাধ্যমে মজুরির ভিত্তিতে পাথর উত্তোলনের কাজ করতে গিয়ে মারা গেছেন। তাঁকে পাথর উত্তোলনের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন শাহাব উদ্দিন, কেফায়েত উল্লাহ ও রাসেল মিয়ার নেতৃত্বে একটি চক্র। প্রতিদিন রাতে রজ্জুপথ এলাকায় নৌকাপ্রতি ২০ হাজার টাকা অগ্রিম আদায় করে চক্রটি পাথর উত্তোলনের ব্যবস্থা করে দেয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্য বলেন, রজ্জুপথের সংরক্ষিত এলাকার মাটির নিচে পাথর থাকায় পার্শ্ববর্তী পাথর কোয়ারিতে কাজ করার সূত্র ধরে একশ্রেণির পাথরখেকো চক্র নানা কৌশলে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে লকডাউনের সুযোগে ওই চক্রের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন রাতে পুলিশ-বিজিবি ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে ম্যানেজ করে বাঙ্কার এলাকায় রেলওয়ের ভূমি কেটে চলে পাথর উত্তোলন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাহাব উদ্দিন, রাসেল মিয়া ও যুবলীগ নেতা কেফায়েত উল্লার একটি চক্র মিলে প্রতিটি নৌকা থেকে ৩ হাজার টাকা আদায় করে পাথর উত্তোলনের ব্যবস্থা করে দেন। নিজেরা এক হাজার ৫০০ টাকা রেখে বাকিটা প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে ব্যয় করেন তারা।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ১৮ এপ্রিল, ২০২১ / ডালিম

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.