Sylhet View 24 PRINT

ওসমানী মেডিকেল কলেজ : বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজন শুধু স্বীকৃতির

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৬-০১-২১ ০০:০৬:০২

সিলেট, বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি ২০১৬ :: দেশের প্রথম সরকারি ৮টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে অন্যতম সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ। ঈর্ষনিয় ফলাফল ও সাফল্যে ইতোমধ্যে আলোকিত বিদ্যাপীট হিসেবে দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে কলেজটি। এমবিবিএস কোর্স ছাড়াও কলেজটিতে স্নাতকোত্তর (পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন) পড়ালেখা ও গবেষণা চলছে প্রায় ৮ বছর ধরে। কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের। সিলেটবাসীর এই দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সিলেটে একাধিক জনসভায় তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিতকরণের আশ্বাস দেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্র“তি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। আগামী ২১ জানুয়ারি সিলেট সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষনা আসতে পারে বলে প্রত্যাশা সিলেটবাসীর। প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো বিদ্যমান থাকায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হতে কেবলমাত্র একটি স্বীকৃতি বা ঘোষণাই প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

১৯৬২ সালে মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এমবিবিএস কোর্সের যাত্রা শুরু করেছিল সিলেট মেডিকেল কলেজ (বর্তমান ওসমানী মেডিকেল কলেজ)। এরপর ধীরে ধীরে কলেজটির মুকুটে সাফল্যের অনেক পালক যুক্ত হয়। বর্তমানে এমবিবিএস কোর্সে প্রতিবছর ১৯৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশের বাইরে নেপাল, কাশ্মির, ফিলিস্তিন, ইরান, ইরাক, মালয়েশিয়া, ভুটান, ব্রিটিশ ও আমেরিকান বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছেন। কলেজটিতে বর্তমানে অর্ধশতাধিক বিদেশী শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী।

অধ্যক্ষ মোর্শেদ চৌধুরী জানান- ২০০৯ সাল থেকে কলেজটিতে ডেন্টাল ইউনিট চালু হয়েছে। প্রতি বছর ডেন্টাল বিভাগে ৫২ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। দেশের অন্য যে কোন মেডিকেল কলেজের চেয়ে পড়ালেখায় ওসমানী পিছিয়ে নেই দাবি করে অধ্যক্ষ আরো জানান- হরতাল-অবরোধেও কলেজটির পাঠদান ও পরীক্ষায় কোন ব্যাঘাত ঘটে না। পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হয়। কোন অবস্থাতেই পরীক্ষা ও ফলাফলের তারিখ পরিবর্তন হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন- গত বছর পরীক্ষার সময় প্রচুর বৃষ্টি ছিল। পরীক্ষা হলে পানি ওঠে যায়। হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছে, তবুও তারিখ পেছানো হয়নি।

কলেজ সূত্র জানায়- ১৯৯৮ সালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (স্নাতকোত্তর) চালু করা হয়। ৪টি ডিপ্লোমা কোর্স দিয়ে শুরু হয়েছিল পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন। বর্তমানে কলেজটিতে ২৬টি কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া কলেজটি থেকে শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা, এমএস, এমডি ও এমফিল করার সুযোগ পাচ্ছেন।

২০১৪ সালে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন ওসমানী হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী। অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তিনি কলেজটিকে দেশসেরা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কলেজের শিক্ষার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করারও নানা চেষ্টা চালাচ্ছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পরই তিনি মেডিকেল কলেজে স্থাপন করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশালাকার প্রতিকৃতি। কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিতকরণেও তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কলেজ অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী জানান- বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত না হওয়ায় বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ওসমানী মেডিকেল কলেজের পাঠদান চলছে। অথচ কলেজটিতে স্নাতকোত্তর পড়ালেখা, গবেষণা চলছে। একটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত করতে যেসব সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার সবই আছে ওসমানীতে। ওসমানী মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত করতে বাড়তি জনবল ও অবকাঠামোর প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে অধ্যক্ষ মোর্শেদ বলেন- ওসমানী মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে প্রয়োজন শুধু স্বীকৃতি। আগামী সিলেট সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন বছরের উপহার হিসেবে ওসমানী মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা দেবেন এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়- ১৯৪৮ সালে নগরীর চৌহাট্টায় (বর্তমান শহীদ সামসুদ্দীন হাসপাতাল) সিলেট মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর স্কুলটিকে কলেজে রূপান্তরের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। এই দাবিতে ডা. দেওয়ান নূরুল হোসেন চঞ্চল ও দেওয়ান ফরিদ গাজীসহ সিলেটের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১৯৬২ সালে স্কুলটিকে কলেজে উন্নিত করা হয়। ১৯৬৮-৬৯ সালে কলেজ ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৭১-৭২ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজের কিছু কার্যক্রম বর্তমান ক্যাম্পাসে (কাজলশাহ) স্থানান্তর করা হয়।

১৯৭৬-৭৭ সালে কাজলশাহ ক্যাম্পাসে পুরো কলেজ ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮৬ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/শাদিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.