Sylhet View 24 PRINT

জৈন্তাপুরে পরকীয়ার কারণেই খুন হয়েছেন জামাল: আমিনার জবানবন্দি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৮-১১ ১০:৫৯:১১

ওয়েছ খছরু, অতিথি প্রতিবেদক ::   পরকীয়ার কারণেই খুন হয়েছে জৈন্তাপুরের জামাল হোসেন। অণ্ডকোষ থেঁতলে ও চোখ উপড়ে ফেলে খুন করা হয় জামালকে। এরপর হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে লাশ ফেলে দেয় কলসী নদীতে।

মঙ্গলবার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জামাল হত্যার অনুসন্ধান শুরু করে। বুধবার পর্যন্ত পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বৃহস্পতিবার আদালতে জামালের প্রেমিকা আমিনা বেগম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি  দিয়েছে।

এতে আমিনা খুনের ঘটনা স্বীকার করে বলেছে, ডেকে নিয়ে তার মামাত ভাই জামাল হোসেনকে খুন করা হয়েছে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর আমিনাসহ গ্রেপ্তার হওয়া ৪ জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে জামাল খুনের ঘটনায় তোলপাড় চলছে জৈন্তাপুরে। শনিবার বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল জামাল হোসেন। তিনদিন নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার  জৈন্তাপুরের কেন্দ্রীয় এলাকার কলসী নদীতে জামালের লাশ ভেসে উঠে। পুলিশ জানিয়েছে তিনদিন পানির নিচে থাকা লাশ অনেকটা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তবে তার অণ্ডকোষ থেঁতলে যাওয়াসহ চোখ উপড়ে ফেলার বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা গেছে। এ কারণে লাশ উদ্ধারের পরপরই পুলিশ ধারণা করে জামাল হোসেনকে খুন করা হয়েছে। সেই ধারণা থেকে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে।

অনুসন্ধানে এক পর্যায়ে পুলিশ নিহত জামালের মামাত বোন আমিনা বেগমসহ তার শ্বশুরবাড়ির আরো ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমিনা বেগম খুনের ঘটনা স্বীকার করে। তবে গ্রেপ্তার হওয়া অন্য তিনজন মুখ খুলেনি।

বুধবার তাদের থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার সকালে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ চারজনকে সিলেটের আদালতে প্রেরণ করে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে আমিনা বেগম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

সিলেটে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) সুজ্ঞান চাকমা জানিয়েছেন, আমিনা বেগম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে সে পরকীয়ার কথা স্বীকার করেছে। একই সঙ্গে খুনের ঘটনাও স্বীকার করে। তিনি বলেন জামালের সঙ্গে মামাত বোন আমেনার পরকীয়ার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে জৈন্তাপুর থানার ওসি খান মো. ময়নুল হক জাকির জানান, গ্রেপ্তার হওয়া অপর তিনজন এখনো মুখ খুলেনি। তারা আদালতে জবানবন্দি দেয়নি। পুলিশ আদালতে তাদের রিমান্ডের আবেদন করবে। জৈন্তাপুরে জামাল খুনের ঘটনা মর্মান্তিক।

স্থানীয়রা জানান, জামাল ও আমিনার প্রেমের সর্ম্পক ছিল বিয়ের আগে থেকেই। তারা একে অপরকে ভালোবাসতেন। বিষয়টি জানতেন জামাল ও আমিনার পরিবার। প্রায় দেড়বছর আগে দুই পরিবার তাদের বিয়েতে রাজি না হওয়ার কারণে দুইজনকে পৃথক পৃথক স্থানে বিয়ে দেয়া হয়। আমিনাকে ঝিঙ্গাবাড়ি গ্রামে বিয়ে দেয়া হয়। এরপর জামালও বিয়ে করে সংসার পাতেন। কিন্তু দুইজনের দুইস্থানে বিয়ে হলেও একে অপরকে ভুলতে পারেননি। বিয়ের পরও জামাল আমিনার সঙ্গ ছাড়েননি। আমিনার টানে প্রায় সময় ঝিঙ্গাবাড়ি গ্রামে ছুটে যেতেন জামাল হোসেন। ফলে জামালের সঙ্গে আমিনার সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হয় আমিনার স্বামীর পরিবারেও। এ নিয়ে তাদের পরিবারেও অশান্তি দেখা দেয়। গত শনিবার বিকেলে জামালকে আমিনার বাড়িতে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে আমিনা, তার স্বামী, দেবর, ভাসুর মিলে নৃশংসভাবে খুন করে জামাল হোসেনকে। এ সময় তার একটি চোখ উপড়ে দেয়ার পাশাপাশি অণ্ডকোষ থেঁতলে দেয়া হয়। রাতের আঁধারে কলসী নদীতে মৃতদেহের হাতে পায়ে পাথর ও ইট বেঁধে ডুবিয়ে দেয় তারা। তিনদিন পর মঙ্গলবার দুপুরে কলসী নদীতে জামালের মৃতদেহ ভেসে উঠে।

খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। নিহত জামাল হোসেন উপজেলার বিরাইমারা (গড়েরপার) গ্রামের আবদুল কুদ্দুস মিয়ার ছেলে।

এদিকে- মঙ্গলবার লাশ উদ্ধারের পর থেকে পুলিশ ঘটনার ক্লু উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। ওই দিন রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ির মইনুল ইসলামের স্ত্রী আমিনা বেগম (২২), সিরাজ উদ্দিন মিস্ত্রীর ছেলে আইনুল ইসলাম (৩২) ও জয়নুল ইসলাম (২২), একই গ্রামের কলিম উদ্দিনের ছেলে মনির (১৯) কে গ্রেপ্তার করে। গত সোমবার রাতে জামালের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, গত শনিবার থেকে এক সন্তানের জনক জামাল হোসেন নিখোঁজ রয়েছেন। পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর এ ঘটনায় হত্যা মামলা গ্রহণ করেছে। ওসি জানান এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ কারণে পুলিশ ঘটনার পুরো রহস্য উদঘাটনে অন্য আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১১ আগস্ট ২০১৭/মাজ/এসডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.