Sylhet View 24 PRINT

তুরস্কে নিষিদ্ধ হলো ‘শয়তানের চোখ’ তাবিজ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০১-২৭ ০৯:২৯:০০

সিলেটভিউ ডেস্ক :: তুরস্কে প্রায় ৫ হাজার বছর ধরে প্রচলিত একটি তাবিজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

তাবিজটির স্থানীয় নাম ‘নজর বোনচু’ যাকে ‘শয়তানের চোখ’ বলে চিহ্নিত করা হয়।

‘নজর বনজু’ নামে এ তাবিজটি মূলত বর্তমানে অলঙ্কার হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হয়। অলঙ্কারটি দেখতে নীল রঙের বৃত্ত ও তার মাঝে সাদা চোখ সদৃশ।  

প্রাচীনকাল থেকে তুর্কিদের বিশ্বাস, এ তাবিজ দুষ্ট নজর থেকে সুরক্ষা দেয়। তুরস্কে তুমুল জনপ্রিয় এ তাবিজ। দেশটির সবখানে এটি চোখে পড়ে। তুরস্কে আগত বিদেশি পর্যটকদের কাছেও বেশ আকর্ষণীয় এ ‘শয়তানের চোখ’ প্রতীকটি। অনেকেই দেশটি থেকে এটি সংগ্রহ করে সঙ্গে নিয়ে আসেন।

আর এমন জনপ্রিয় প্রতীককে এক ‘ফতোয়ার’ মাধ্যমে নিষিদ্ধ করেছে তুর্কি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

‘নজর বনজু’ কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার বিষয়ে তুরস্কের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা, বহুল প্রচলিত এ বস্তুটি আসলে কি কাজ করে তা জানা যায়নি। কিন্তু জনগণের মধ্যে এটির ব্যাপক ব্যবহার ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত হানতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্মে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বা কোনো বস্তু ভালো বা খারাপ করার ক্ষমতা রাখে না। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর ওপর বিশ্বাস এবং তার ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ।

তাই ‘শয়তানের চোখ’ প্রতীকের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করাকে শিরক বলে ফতোয়া দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এদিকে এই ‘ফতোয়া’ দেওয়ার পর তুরস্কজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বিষয়টিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এতো গুরুত্ব দেওয়ার মতো কিছু দেখছেন না কেউ কেউ।

কারও মতে, এখন আর সেই বিশ্বাসে তুর্কিরা এ নজর বনজু পড়েন না।

রাজধানী আঙ্কারায় আয়েসগুল আয়েকতিন নাম এক উপহার-সামগ্রী বিক্রেতা গণমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, ‘নজর বনজু’ আমরা এখন শুধু সাজসজ্জার উদ্দেশে ব্যবহার করি। আর কিছুই নয়। আমার দোকানে এই ‘অলঙ্কার’ অনেক বিক্রি হয়। এগুলোর কোনো শক্তি আছে এমন বিশ্বাস মানুষ করে না। এটা শুধুমাত্রই পুরনো ঐতিহ্য এবং সাজসজ্জার অলঙ্কার হিসেবে কেনে তুর্কিরা।

তবে অনেকের মতে , এটি একটি প্রাচীন বিশ্বাস ও সংস্কৃতি।  যা তুর্কিদের ৩ হাজার বছর পেছনে ফিরে নিয়ে যায়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আবার অনেক তুর্কি জানিয়েছেন, যে বিষয়টি আল্লাহর সঙ্গে শিরক হয় তা নিষিদ্ধ করাই উত্তম। কারণ আমাদের ধর্ম কখনো মহান আল্লাহতালার সঙ্গে কোনো কিছু শিরক করা একেবারেই নিষিদ্ধ। যে ঘোষণাটি এসেছে তা সঠিক।


কী এই ‘শয়তানের চোখ’ আর এর পেছনের ইতিহাস কি?

জানা গেছে, প্রায় ৫ হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়া এবং মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শয়তান বা খারাপ শক্তি থেকে বাঁচতে এই শয়তানের চোখ ব্যবহারের রেওয়াজ শুরু হয়। সেখান থেকেই তুর্কিদের মাঝে এর প্রচলন ঘটে। প্রায় ৩ হাজার ৩০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ থেকে এখন পর্যন্ত তুরস্কে এটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে আসছে।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলের বাহসেসিহির বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এক অধ্যাপক বলেন, আকাশের রঙ নীল। তাই শয়তানের চোখ অলঙ্কারটির নীল অংশটি হল ভালো কর্ম উদার মন ও শুভ শক্তির প্রতীক।  নীল রঙ মধ্য এশিয়ার সেলজুক তুর্ক জাতির দেবতা গোক টেংড়ি যিনি আকাশের দেবতা নামে পরিচিত, তার সঙ্গে সম্পর্কিত। সেলজুকরা ইসলাম গ্রহণের পরেও তারা এই রঙের ব্যবহার তাদের বিভিন্ন স্থাপত্য এবং অলঙ্কারে অব্যাহত রেখেছিলেন।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, জিওটিভি

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/মিআচৌ-১০/

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.