আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ডা. ফরাসউদ্দিনকে ঘিরে অর্থনৈতিক প্রসারের স্বপ্ন দেখছেন চুনারুঘাটবাসী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১১-১৯ ০০:০৫:২১

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ :: দিন যত ঘনিয়ে আসছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আমেজ ততই বাড়ছে। গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার থেকে শুরু করে সর্বত্র নির্বাচনী আলোচনা। চারদিকে যখন নির্বাচনের বিস্তর আলোচনা, তখন চুনারুঘাটবাসি দেখছেন নতুন স্বপ্ন।

হঠাৎ করেই হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে চমক হিসেবে আবির্ভূত হন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. ফরাসউদ্দিন। তাঁর আগমনি এই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বাড়াভাতে ছাই ঢালা হলেও খুশি চুনারুঘাটবাসী। ড. ফরাসউদ্দিন হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করায় আবার অর্থমন্ত্রী পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হবিগঞ্জবাসী। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নের হাতছানি দেখছেন চুনারুঘাটবাসী।

চুনারুঘাটবাসী মনে করছেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ড. ফরাসউদ্দিনকে অর্থ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী দেয়া হবে। আর তিনি অর্থমন্ত্রী হলে এলাকার ব্যপক উন্নয়ন করবেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও যোগাযোগ ক্ষেত্রের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাখবেন বিশেষ নজরদারী। ডা. ফরাসউদ্দিনকে ঘিরে যেসব বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছেন চুনারুঘাটবাসী তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বাল্লা স্থলবন্দর আধুনীকায়ন, ইকনোমিক জোন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো। সেই সাথে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও যোগাযোগ ক্ষেত্রসহ সবধরণের উন্নয়নের যুগান্তকারী পরিবর্তনের স্বপ্নতো আছেই।

বাল্লা শুল্ক স্টেশন: অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় হওয়ার পরও দীর্ঘ ৬৭ বছরে স্থলবন্দর হলো না চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা শুল্ক স্টেশন। জেলার সীমান্তে এই শুল্ক স্টেশনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫১ সালে। স্থাপনের পর এই শুল্ক স্টেশনটিকে স্থলবন্দরে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে তা চূড়ান্ত রূপ পায়নি। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আবারও এই শুল্ক স্টেশনটি স্থল বন্দরে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বাল্লা শুল্ক স্টেশন পরিদর্শনও করেছেন।

১৯৫১ সালে ৪ দশমিক ৩৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। বাংলাদেশের বাল্লা সীমান্তের পশ্চিমে কেদারাকোট দিয়ে বর্তমানে দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। এখানে চেকপোস্টসহ সীমান্ত ঘাঁটি রয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ব্যবসায়ীদের একটি দল বাল্লা শুল্ক স্টেশনের ২ কিলোমিটার পশ্চিমে কেদারাকোটে স্থলবন্দর স্থাপনের চেষ্টা করেন। ২০১২ সালের ১১ জুন কেদারাকোটে স্থলবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে। বাংলাদেশের পক্ষে ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন তখনকার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোকাব্বির হোসেন। ভারতের পক্ষে ৫ সদস্যের নেতৃত্ব দেন সে দেশের কমার্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ইন্দিরা মারাঠি। পরিদর্শন শেষে উভয় দেশের প্রতিনিধি দল সাংবাদিকদের বলেন, দু’দেশের সরকার ত্রিপুরা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে আগ্রহী। তাই বাল্লা সীমান্তের কেদারাকোটে স্থলবন্দর স্থাপন করা যায় কি-না তার সম্ভাব্যতা সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। ভারতীয় দল ওই জায়গায় স্থলবন্দর নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবও প্রদর্শন করে।

এর আগে ২০১১ সালের ৩০ জুলাই বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যানও কেদারাকোট পরিদর্শন করেন এবং স্থলবন্দর স্থাপনের গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। এতো কিছুর পরেও বাল্লায় পুরোপুরি স্থলবন্দর করা হয়নি। ফলে হতাশা দেখা দেয় চুনারুঘাটসহ জেলাবাসীর মধ্যে।

বর্তমানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ফরাসউদ্দিন নির্বাচিত হলে বাল্লা শুষ্ক স্টেশনটি আধুনিকায় করবেন এমন প্রত্যাশী চুনারুঘাটবাসীর।

স্পেশাল ইকোনমিক জোন : চুনারুঘাট শহরের সন্নিকটে সুতাং নদীর পাশে নির্মিত হচ্ছে এ স্পেশাল ইকোনমিক জোন। প্রস্তাবিত ভূমিটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ (বেজা) কে ১ লাখ ১ টাকা প্রতীকী মূল্যে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। পুরাতন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে চানপুর চা বাগানের অব্যবহৃত ৫১১ একর জমির উপর স্থাপিত হচ্ছে এ বিশেষ ইকোনমিক জোন। ২০১৬ সালের ২৬শে আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শোয়াইব আহমেদ বেজার নামে ভূমিটি হস্তান্তর করার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে শুরু হয় কার্যক্রম। এখানে অর্থনৈতিক জোন স্থাপিত হলে ১৮টি চা বাগানের শ্রমিকসহ লক্ষাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান থাকবে হাতের নাগালে। গ্যাস-বিদ্যুতের সহজলভ্যতা এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য বেছে নেয়া হয়। আরেকটি কারণ ছিল চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন। এ ছাড়া এ এলাকায় স্বল্প মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া আরেকটি বড় সুবিধা।

শুরুতে ইকোনমিক জোন স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের যুগ্ম সচিব ও বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী চুনারুঘাটের চা বাগানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় চা-শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ এলাকাবাসী সর্বসম্মতিক্রমে এ স্থানে ইকোনমিক জোন স্থাপনের ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে প্রস্তাবিত স্থানে ইকোনমিক জোন স্থাপন করার উদ্যোগ নিলে চা শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে একটি কুচক্রি মহল মানববন্ধনসহ আন্দোলন করায়। অভিযোগ রয়েছে, চানপুর চা বাগান কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে বাগানের জন্য ভূমিটি লিজ নিয়ে চা বাগান না করে শ্রমিকদেরকে ধান চাষের জন্য বরাদ্দ দেয়। চা শ্রমিকরা সেগুলো দলিল ছাড়াই বিভিন্ন লোকজনের কাছে বিক্রি করে। এ কারণে অবৈধভাবে সুবিধাভোগী একটি মহল ইকোনমিক জোন স্থাপনে প্রতিবন্ধকতা সসৃষ্টির চেষ্টা করে। এতে বিলম্বিত হয়ে পড়ে এর কার্যক্রম। বর্তমানেও এ অসাধু চক্রটি বিভিন্নভাবে ইকোনমিক জোন স্থাপনের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এখনও ঝুঁলে আছে ইকনোমিক জোনের কাজ। ড. ফরাসউদ্দিনকে ঘিরে তার বাস্তবায়নও দেখছেন চুনারুঘাট তথা হবিগঞ্জবাসী।

পর্যটন শিল্প : পর্যটন শিল্প যে আমাদের অর্থনীতির একটি বিশাল খাত হতে পারে- এ ধারণার বিকাশ ঘটে মূলত পঞ্চাশের দশকে। এরপর ১৯৯৯ সালে পর্যটনকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার পর্যটন কর্পোরেশনের মাধ্যমে এ শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই পর্যটন সম্ভাবনাময় একটি জেলা হবিগঞ্জ। বিশেষ করে চুনারুঘাট উপজেলার প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যে বহু পরিব্রাজক এবং ভ্রমণকারী মুগ্ধ হয়েছেন।

এখানে রয়েছে, বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম বল রেমা-কালেঙ্গা, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি বিজরিত তেলিয়াপাড়া স্মৃতিস্তম্ভ ও বিভিন্ন চা বাগানসহ আরও অনেক দর্শনীয় স্থান। কিন্তু এ শিল্পে সমন্বয়হীন এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা না থাকায় তেমন পর্যটন টানতে পারছে না এলাকাটি। আমাদের যে পর্যটননীতি আছে আমরা তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারছি না। এ খাতকে কীভাবে উন্নয়ন করা যায়- এ বিষয়ে সরকারি বা বেসরকারি কোনো ধরনের চিন্তা নেই। অথচ চুনারুঘাটে পর্যটন শিল্প দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে পারত। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় এই উপজেলায় তাই ফরাসউদ্দিনের বিকল্প ভাবছেন না কেউই।

অন্যান্য উন্নয়ন : উপরে উল্লেখিত ৩টি উন্নয়ন ছাড়াও চুনারুঘাটের অন্যান্য উন্নয়নের জন্য ফরাসউদ্দিনের আগমনকে স্বাগতম জানিয়েছেন হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের জনগণ। তাছাড়া অবহেলিত চা শ্রমিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের উন্নয়ন, বাল্লা-শায়েস্তাগঞ্জ রেল লাইন পূণরায় চালু, রাস্তাঘাট সংস্কার, শিক্ষার প্রসারে অন্য সব প্রার্থীর চেয়ে তিনিই বেশি অবদান রাখতে পারবেন বলে মনে করেন স্থানীয় জনগণ।

উল্লেখ্য, হবিগঞ্জের ৪টি (চুনারুঘাট-মাধবপুর) ড. ফরাসউদ্দিন ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন বর্তমান সাংসদ অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ মো. মুসলিম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট দেওয়ান মারুফ সিদ্দিকী, চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এম আকবর হোসাইন জিতু, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুনির, প্রয়াত মন্ত্রী এনামূল হক মোস্তফা শহীদের ছেলে নিজামুল হক রানা ও প্রকৌশলী আরিফুল হাই রাজিব।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ নভেম্বর ২০১৮/কেএস/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন