Sylhet View 24 PRINT

দখল-দুষণে অস্তিত্ব সংকটে খোয়াই ও সুতাং নদী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-০৫ ১০:২৮:৫৭

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ :: দখল আর দুষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে হবিগঞ্জের খোয়াই ও সুতাং নদী। খোয়াই নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলায় নষ্ট হচ্ছে নদীর আশপাশের পরিবেশ। অন্যদিকে শিল্পবর্জ্য নদীতে ফেলায় নষ্ট হচ্ছে সুতাং নদী। ফলে শুধু পরিবেশ বিপর্যয় নয়, মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দারা।

জানা যায়, জেলা শহরকে অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে ১৯৭৮ সালে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে খোয়াই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে শহরের বাহিরের অংশে প্রতিরক্ষাবাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বাঁধটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় নদীর দুই তীর এখন ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে নদীর দু’পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাড়ি-ঘর। আবার কয়েক বছর ধরে নদীর চৌধুরীর বাজার অংশে ফেলা হচ্ছে শহরের ময়লা আবর্জনা। ফলে নদীর পানি নষ্ট হওয়ার পাশাপশি নষ্ট হচ্ছে নদীর চারপাশের পরিবেশও।

শুধু তাই নয়, নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে নাব্যতা সংকটে পড়েছে খোয়াই নদী। আর এতে করে বেকার হয়ে পড়েছেন শতাধিক মাঝি। নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে যেখানে সেখানে নৌকা ডাঙ্গায় আটকে যাওয়ার কারণে বাড়ছে যাত্রীদের দূর্ভোগ।

অন্যদিকে, গত কয়েক বছরে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে জেলা সদর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশতাধিক শিল্প কারখানা। এসব শিল্প কারখানার বর্জ্য সরাসরি গিয়ে মিশছে সুতাং নদীতে। ফলে এসব বর্জ্য বিষিয়ে তুলছে সুতাং নদীসহ এর চারপাশের নদী ও অসংখ্য খাল-বিল।

এলাকাবাসী জানান, জেলার অলিপুরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য সুতাং নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে নদী তীরবর্তী বুল্লা, করাব, লুকড়া, নূরপুর, রাজিউড়াসহ বেশকটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কৃষি, স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক বিপর্যয়ের পাশাপাশি উদ্বেগজনক মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নদীর মাছ মরে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে হাজার হাজার জেলের আয়ের উৎস। চাষাবাদে নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দুর্গন্ধযুক্ত কালো কুচকুচে পানি ব্যবহারের কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে হুমকির মুখে ফসলি জমি। এমনকি, নদীর পানি ব্যবহার করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে এলাকাবাসী।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘নদীতে যে পানি রয়েছে তাকে পানি বলার সুযোগ নেই। বিষাক্ত বর্জ্যে নদীর পানি এখন মবিলের মতো তরল পদার্থে পরিণত হয়েছে। এই নদীর পানিতে মানুষ নামা তো দূরের কথা, কোন পশু পাখিই নামে না।’

স্থানীয় কৃষক দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘জমিতে সুতাংয়ের পানি ব্যবহার করলেই চর্মরোগে ভুগতে হয়। জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। কমে গেছে ধানসহ অন্য ফসলের পরিমাণ। আমাদের এখন পথে বসা ছাড়া কোনো পথ নেই।’

তিনি বলেন- ‘শুধু আর্থিকভাবে আমরা ক্ষতিগস্ত না, নদীপাড়ের বাসিন্দারা বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে।’

মাঝি আলী হোসেন বলেন- ‘খোয়াই নদীতে পানি থাকে না। যার কারণে প্রায় সময়ই আমাকে নৌকা ডাঙ্গায় লেগে যায়। এতে করে আমারাসহ যাত্রীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়।’

চৌধুরী বাজার এলাকার ব্যবসায়ি আহমদ আলী বলেন- ‘প্রতিনিয়িত নদীর পাড়ে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এমনকি পৌরসভার ময়লা আবর্জনাও নদীতে ফেলা হচ্ছে।’

এ ব্যপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘কৃষি, মৎস্যসম্পদ, গবাদি পশু ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রতিনিয়ত আমরা আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন নদী দুটি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’

তিনি বলেন- ‘অবিলম্বে দুটি নদী রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অন্যথায় নদীর পরিবেশ আরও নষ্ট হয়ে বিভিন্ন রোগবালাই মহামারি আকার ধারণ করে ছড়িয়ে পড়তে পারে নদী তীরবর্তী মানুষের মাঝে।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ বলেন- ‘খোয়াই এবং সুতাং নদী রক্ষায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে সম্প্রতি আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচনের কারণে বিষয়টিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৫ জানুয়ারি ২০১৯/কেএস/ডিজেএস

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.