সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-১৭ ১৩:২৫:২২
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: হবিগঞ্জে বিস্তীর্ণ হাওরজুড়ে সোনালী ফসলে ঢেউ। কিন্তু পাকা ধানের মধুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা হওয়ার পরিবর্তে চিন্তা ভাজ পড়েছে কৃষকের কপালে। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে বাহিরের জেলা থেকে শ্রমিক না আসায় পাকা ধান ঘরে তুলা নিয়ে চিন্তিত কৃষক। তবে প্রশাসন বলছে- দুশ্চিন্তার কারণ নেই, প্রয়োজনে সরকারি উদ্যোগে শ্রমিক এনে ধান কাটার ব্যবস্থা করা হবে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়- জেলায় এ বছর বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্র অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮শ’ হেক্টর। আর উৎপাদন লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বর্তমানে হাওরজুড়ে বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে ধান কাটা শুরু করলেও শ্রমিক সঙ্কটে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। করোনাভাইরাসের কারণে বাহিরের জেলা থেকে শ্রমিক আসছে না। আবার এলাকার শ্রমিকও করোনা সংক্রামণ রোধে মাঠে যেতে আগ্রহি নয়। এ অবস্থায় পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার কৃষক।
কৃষকরা বলছেন- প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিক আসে হবিগঞ্জে। কিন্তু এরপরও তীব্র শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয়। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে কোন অঞ্চল থেকেই শ্রমিক আসতে চাচ্ছে না। ফলে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে বন্যায় ফসলহানীর আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এদিকে, এ সপ্তাহে হবিগঞ্জসহ পুরো সিলেট অঞ্চলে আগাম বন্যার আশঙ্কা জানিয়েছে আবহাওয়া আধিদপ্তর। এতে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের বোরো জমি প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে হাওর অঞ্চলের বোরো ধান দ্রæত কাটার তাগিদ দিয়েছে হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয় বোর্ড।
হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের পুর্বাবাস অনুযায়ি আগামী ১৭ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৪ দিন হবিগঞ্জে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় ভারতের ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এতে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাবে। নদীর পানি সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে এবং আগাম বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বোরো জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এ অবস্থা বোরো ধান দ্রæত কাটার ব্যবস্থা ও হাওরের বাধগুলো নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য কৃষকদের অনুরোধ জানানো হয়।এ ব্যাপারে আজমিরীগঞ্জ জলসুখা এলাকার কৃষক মোবাশ্বির চৌধুরী বলেন- ‘আমি ২০ কের (২৮ শতকে এক কের) জমি করেছি। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক না থাকায় বিপাকে পড়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে বাহির থেকে শ্রমিক আসছে না, আবার এলাকার শ্রমিকও সংক্রামণ ভয়ে কাজ করতে চাচ্ছে না।’
কৃষক মো. রজমান মিয়া বলেন- ‘অন্য বছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর শ্রমিক আসত। কিন্তু এরপরও শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। কিন্তু এ বছর বাহির থেকে শ্রমিক না আসায় কি করে হাওরের ধান কাটব বুঝতে পারছি না।’
বানিয়াচংয়ের কৃষক মোহাম্মদ আলী হায়দার বলেন- ‘শুনলাম এই সপ্তাহেই প্রচুর বৃষ্টি হবে। এতে হাওরের ভাটি এলাকার জমি পানিতে তলিয়ে যাবে। একদিকে এই বন্যার আশংকা, অন্যদিকে শ্রমিক সংকট। কি করে ধান ঘরে তুলব চিন্তা চোখে ঘুম আসে না।’
তিনি বলেন- ‘বন্যার হাত থেকে ফসল বাঁচাতে বাহিরের জেলা থেকে সরকারি উদ্যোগে শ্রমিক আনা এবং অন্য বছরের তুলনায় অধিক ধান কাটার মেশিন বিতরণ করলে কৃষকরা কিছুটা হলেও রক্ষা পেতেন।’
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ তমিজ উদ্দিন বলেন- ‘ইতিমধ্যে বাহির থেকে দুই-তিনশ’ শ্রমিক হবিগঞ্জে এসেছে। এছাড়া ৩৩টি ধান টাকার মেশিন বিতরণ করা হচ্ছে। সুতরাং এতো চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আগাম বন্যা কৃষকের জন্য কিছুটা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।’
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন- ‘শ্রমিক সংকটের কারণে ধার কাটার বেঘাত ঘটবে না। আমরা চিন্তা করেছি সরকারি উদ্যোগে বাহিরের জেলা থেকে শ্রমিক আনব। যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে সেহেতু গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তাদের থাকার এবং সরকারিভাবে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এরজন্য বাহিরের জেলার সাথে আলোচনা চলছে।’
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৭ এপ্রিল ২০২০/কেএস/মিআচৌ