সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৯-২৪ ১০:০২:২৭
জসিম উদ্দিন, হবিগঞ্জ :: চৌধুরী মুরাদ ইবনে সালাম। হবিগঞ্জ শহরের পুরান মুন্সেফির স্থানীয় বাসিন্দা তিনি। পেশায় হবিগঞ্জ শহরের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। এ খবর হবিগঞ্জের অনেকের কাছেই জানা। কিন্তু যে বিষয়টি অনেকেরই অজানা তা হল চৌধুরী মুরাদের ছাদকৃষি। নিজের তিন তলা বাসার ছাদে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন বিশাল এক সবুজ সাম্রাজ্য।
বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তার বাড়ির ছাদে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ছাদের একপাশে মাচার ওপর ছড়িয়ে আছে সবুজ রঙের লাউ ডগা। সেই ডগায় ফুটতে শুরু করেছে দুধ রঙের সাদা ফুল। কিছুদিনের মধ্যেই হয়ত লম্বা লম্বা লাউ ঝুলবে মাচায়। পাশেই রয়েছে শিমের বাগান।
তার ছাদ বাগান ঘুরে দেখা যায়, পুরো ছাদ শোভিত ফুল-ফল-ফসলে। ব্যবসা করার পাশাপাশি কৃষির প্রতি রয়েছে তার ব্যাপক আগ্রহ আর সবুজের প্রতি টান। মুরাদ জানান, গতবছরের মার্চ মাস থেকে ছাদে প্রথমে মাত্র পাঁচটি টবে কয়েকটি গাছের চারা রোপন করে ছাদকৃষিতে তার হাতেকড়ি। এরপর যুক্তরাজ্য প্রবাসী আপন বড় তিন ভাই গোলাম আনিস চৌধুরী, এমএ মুনতাকিম ও আবুল মুমিনের অনুপ্রেরণা আর আর্থিক সহযোগিতায় বৃহৎ পরিসরে শুরু করেন ছাদকৃষি।
তিনি জানান, এবছর করোনাকালীন লকডাউনের পুরো সময়টাই তিনি ব্যয় করেন তার ছাদে লাগানো হরেক রকমের গাছের পরিচর্যা করে।
ছাদ ঘুরে দেখা যায়, তার বাগানে রয়েছে প্রায় ১১০ প্রজাতির ফল, ফুল ও শাকসবজ ও বিভিন্ন ঔষধি গাছের আবাদ। ফলের মধ্যে রয়েছে কমলা, মাল্টা, পেঁপে, জাম্বুরা, পেয়ারা, আঁখ, আমড়া, লিচু, কামরাঙা ইত্যাদি। শাকসবজির মধ্যে আছে লাউ, শিম, টমেটো, লালশাক, পুঁইশাক, ঢেঁড়স, বেগুন, কাঁচামরিচ, নাগামরিচ, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি। রয়েছে তুলসি, পুদিনা ও অ্যালোভেরাসহ আরও হরেক রকমের ঔষধি গাছ। এছাড়াও সম্প্রতি রাজশাহী থেকে এনে লাগিয়েছেন বারমাসি আম এবং ভিয়েতনামি নারিকেল গাছের চারা।
শখের বসেই এসব শাকসবজি আর ফলমূলের চাষ করে থাকেন তিনি। তাছাড়াও ভেজালমুক্ত তাজা খাবারের একটা ব্যাপার তো আছেই। চৌধুরী মুরাদ ইবনে সালাম বলেন, আমার স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা তাসমিনা খানমও সময় পেলে আমাকে বাগানের কাজে সময় দেয়। দু’জন মিলেই কাজ করি আমাদের ছাদকৃষিতে। তাছাড়া আমার ছেলে আনাসও বাগান পরিচর্যার কাজে আমাকে সহযোগিতা করে থাকে। শাকসবজি, ফলমূল যা-ই পাই নিজে খাই এবং আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বিলিয়ে দেই। এতেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক এবং এতেই আমি সুখ অনুভব করি। এছাড়াও তার এখানের পন্য তিনি যুক্তরাজ্যে বড়ভাইদের কাছেও মাঝে মাঝে পাঠিয়ে থাকেন তিনি।
চৌধুরী মুরাদ জানান, শহরে যারা বসবাস করেন তাদের জন্য বিনোদন এবং অবসর সময় কাটানোর ভালো মাধ্যম হতে পারে ছাদকৃষি। এছাড়াও চারদিকে ভেজাল মিশ্রিত খাবারের এই যুগে ভেজালমুক্ত কিছু পেতে হলে ছাদকৃষির বিকল্প নেই। তাই শহরে বসবাসরত সবাইকে ছাদকৃষিতে আগ্রহী হতে আহ্বান জানান চৌধুরী মুরাদ ইবনে সালাম।
সম্প্রতি তার ছাদবাগান পরিদর্শন করেছেন হবিগঞ্জের উপসহকারি কর্মকর্তা আসমা আক্তার। তিনি বলেন, মুরাদের মনোমুগ্ধকর ছাদবাগান দেখে সত্যিই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্য ধারণ করে ছাদবাগান করতে পারলে অনেকেই সফল হবেন। মুরাদের ছাদবাগানের শাকসব্জি-ফলমূল সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত। শহরের যে কেউ নিজের বাড়ির ছাদে এরকম বাগান করে পেতে পারেন তাজা শাকসবজি আর ফলমূলের স্বাদ।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০/জেইউ/মিআচৌ