Sylhet View 24 PRINT

মৌলভীবাজারে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ, না খেয়ে রোজা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-১৪ ২২:৩৩:৩১

শাকির আহমদ, কুলাউড়া প্রতিনিধি :: ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পাশের উঁচু স্থান, রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছে বানভাসি মানুষ। ঘর থেকে রান্নার উপকরণ থালা বাসন নিয়ে আসতে পারলেও রান্না করার নেই কোন পরিবেশ। তাই না খেয়ে রোজা রাখতে হলো বানভাসি মানুষের। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) অনেকে পানি ও শুকনো খাবার খেয়ে ইফতার করেছেন। যত সময় যাচ্ছে বন্যাদূর্গত মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।

বানভাসি মানুষের জন্য সরকারীভাবে ত্রাণ বরাদ্দ হলেও এখনো সেই বরাদ্দ তাদের কাছে পৌছানো হয়নি। বেসরকারীভাবে ত্রাণ সহায়তা করতে চাইলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে তা পৌছাতে পারছেন না তারা। কিছু শুকনো খাবার বানভাসি মানুষের জন্য সরবরাহ করা হলেও তা মানুষের কাছে পৌছানো দুষ্কর বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা।

উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙ্গণে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার ৫ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ৬টি ভাঙনের পর আরও নতুন করে আরও ২টি ভাঙ্গণের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।

কুলাউড়ার টিলাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক জানান, সৃষ্ট ভাঙনের ফলে দেড় হাজারের বেশি পরিবার রয়েছে খোলা আকাশের নিচে। এরমধ্যে ৫ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়ে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে। বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। এসব পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার ও পানি বিতরণ করা হয়েছে। তবে পানির মধ্যেও বেশির ভাগ মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে যাননি। এসব মানুষ বেশির ভাগ না খেয়ে রোজা রেখেছেন।

শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুনাব আলী জানান, মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৪টি ভাঙন দেখা দিয়েছে শরীফপুর ইউনিয়নে। প্রায় ২ হাজার পরিবার খোলা আকাশের নিচে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তবে অনেক মানুষ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাননি। এরা অত্যন্ত কষ্টে রয়েছেন। এদেরকে কোন প্রকার সাহায্যও করা সম্ভব হচ্ছে না। ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে পানি বেরিয়ে যাওয়ায় আটকা পড়া মানুষকে উদ্ধার করাও সম্ভব হচ্ছে না।

এছাড়া উপজেলা পৃথিমপাশা ও হাজিপুর ইউনিয়নে এবং রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি। গত ২দিন থেকে মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

হাজিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু জানান, আমার এলাকার প্রায় ২শতাধিক পরিবারের সদস্যরা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। ইতিমধ্যে ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে আরও ৩০টির মতো গ্রাম। সরকারী ত্রাণের আশ্বাস পেয়েছি তবে তা এখনো আমাদের কাছে এসে পৌছায়নি। যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতির কারনে তা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে ঈদের আগ মুহুর্তে কুলাউড়ার ৪ ইউনিয়ন, কমলগঞ্জের ৩টি ইউনিয়ন, রাজনগরের কামারচাক ইউনিয়নসহ মনু নদীর ভাঙনে ৫ ইউনিয়নের জনপদ লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত এই ৫টি ইউনিয়নকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যানরা।

এছাড়া যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কামাল হাসান ইতিমধ্যে বানভাসি প্রায় ৩শতাধিক মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। তিনি দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষে ভাঙন কবলিত এসব এলাকাকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান।

কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বি জানান, প্রথম দিন কুলাউড়ার ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়নগুলোতে শুকনো খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়েছে। এসব দুর্গত মানুষের জন্য ৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অনুদানগুলো পাওয়া মাত্রই দুর্গত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ জুন ২০১৮/এসএ/পিডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.