Sylhet View 24 PRINT

বড়লেখায় আত্মহত্যা নয় খুন হয় প্রান্ত, ভাই আটক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১১-১২ ২০:২৩:০২

বা পাশে খুন হওয়া প্রান্ত

এ. জে লাভলু, নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা :: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার এম মন্তাজিম আলী কলেজের ছাত্র প্রান্ত দাস (১৮) আত্মহত্যা করেননি। তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লুঙ্গি দিয়ে মুখ ও গলা বেঁধে পরিত্যক্ত রান্নাঘরের জানালার গ্রিলের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল খুনি।

ঘটনার প্রায় ১২ দিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত প্রান্তের পিসাতো ভাই সুমন দাসকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গত রবিবার (১১ নভেম্বর) রাতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে পুলিশের কাছে। প্রতিবেদনে হত্যার বিষয়টি উঠে আসায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে থানায় নিয়ে আসে। এদের মধ্য থেকে পিসাতো ভাই সুমন দাস (৪০) পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

সোমবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে প্রান্তের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়। হত্যার সাথে জড়িত থাকার ঘটনায় পুলিশ প্রান্তের পিসাতো ভাই সুমনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে সুমনের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৯ অক্টোবর রাতে সুমন দাস বাজার থেকে বাড়ি আসেন। এসময় তাঁর স্ত্রীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় মামাতো ভাই প্রান্তকে দেখতে পান। এরপরই প্রান্তকে ধাওয়া দেন সুমন। একপর্যায়ে বাড়ির রাস্তায় গিয়ে প্রান্তকে ধরে ফেলেন তিনি। এরপর প্রান্তের মুখ চেপে ধরলে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাঁর হাত, পা ও মুখ বেঁধে পরিত্যাক্ত রান্না ঘরের খাটের নিচে রেখে দেয় সুমন। এখান থেকে ঘরে ফিরে প্রান্তের বড় ভাই শুভকে ফোন দিয়ে জানায় প্রান্তকে পাওয়া যাচ্ছে না। খবর পেয়ে প্রান্তের বড়ভাই শুভ সুমনদের বাড়িতে আসে। সে (সুমন) শুভ’র সাথে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির নাটক করে। পরদিন ৩০ অক্টোবর রাত পর্যন্ত প্রান্তকে না পেয়ে শুভ তাঁর মামার বাড়ি চলে যায়। ওই রাতেই পরিত্যাক্ত রান্না ঘরের খাটের নিচে থেকে প্রান্তকে বের করে আনে সুমন। তখনও প্রান্ত জীবিত ছিলো। মুখ বাঁধা থাকায় সে কথা বলতে পারেনি। এ রাতেই আনুমানিক তিনটার দিকে প্রান্তকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে লুঙ্গি দিয়ে মুখ ও গলা বেঁধে পরিত্যক্ত রান্নাঘরের জানালার গ্রিলের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে রেখে দেয়। এছাড়া ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে প্রান্তের মুঠোফোন থেকে কয়েকটি মেসেজ প্রান্তের সহপাঠিসহ কয়েকজনের কাছে পাঠানো হয়। পরে প্রান্তের প্যান্টের পকেটে মুঠোফোন রেখে দেওয়া হয়। পরদিন ওই পরিত্যক্ত ঘরের পাশে বাড়ির বাচ্চারা ফুল তুলতে গিয়ে প্রান্তের লাশ দেখে বাড়ির লোকজনকে জানায়। স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রান্তের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে প্রেরণ করে।

কলেজ শিক্ষার্থী প্রান্তের বড়ভাই শুভ দাস বলেন, ‘আমার ভাইকে পিসাতো ভাইয়েরা মিলে খুন করেছেন। এটা প্রথম থেকেই সবার কাছে পরিষ্কার ছিল। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যার বিষয়টি এসেছে। আমরা প্রথম থেকেই এ ঘটনাকে হত্যা হিসেবে দাবী করছিলাম। তারা পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে খুন করেছে। পিসাতো আরেক ভাই সুজন ফ্রান্স থেকে ফোন করে হুমকিও দিয়েছিলো। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করেছি। যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) আবু ইউছুফ গতকাল সোমবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুরু থেকেই প্রান্তের মৃত্যুটি রহস্যজনক মনে হয়েছিল। বাদী বা অন্য কেউ হত্যাকান্ডের বিষয়ে ধারণা দিতে পারেনি। বাদী মামলা করেননি। সবাই অপেক্ষায় ছিল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের। ময়নাতদন্তে সময় আমরা ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি। তখনই হত্যাকাÐ সর্ম্পকে কিছু ইঙ্গিত পেয়েছিলাম। ফলে পুলিশ সুপার স্যারসহ আমরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দ্রæত আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। যার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়। প্রতিবেদনে হত্যার বিষয়টি উঠে আসায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে নিয়ে আসে। তাদের মধ্যে থেকে নিহতের পিসাতো ভাই সুমন একাই হত্যা করেছে এবং সে সবাইকে মেসেজ পাঠিয়েছে বলে পুলিকে জানিয়েছে। তবে হত্যা করা এবং মেসেজ পাঠানোসহ অনেকগুলো কার্যক্রম ঘটেছে। যা তাঁর (সুমন) একার পক্ষে করা সম্ভব কিনা সন্দেহজনক। অবশ্য এর সাথে অন্য কেউ জড়িত আছে কি-না আমরা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, গত ৩১ অক্টোবর সকালে বর্ণি ইউনিয়নের নয়াগ্রামের পিসির বাড়ির পরিত্যক্ত রান্নাঘর থেকে প্রান্ত দাসের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রান্ত বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামের সনত দাসের ছেলে। ঘটনার পর প্রান্তের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি অপমৃত্যু দায়ের করা হলেও প্রান্তকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এমনটা দাবি করে আসছিল তাঁর পরিবার। এছাড়া ঘটনার পরদিন থেকে প্রান্তের মৃত্যুরহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রান্তের সহপাঠীরা পাঁচদিন ক্লাস বর্জন করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় হুইপ ও স্থানীয় সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিন ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, হুইপের এমন আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যায়।

সিলেটভিউ/১২ নভেম্বর ২০১৮/এজেএল/পিডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.