আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শীতে কাবু মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-২৩ ০০:১০:২১

ওমর ফারুক নাঈম, মৌলভীবাজার :: চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজার জেলা। দেশের সিংহভাগ চা উৎপাদন হয় এই অঞ্চলে। এর পেছেনের মূল কারিগররা হলেন চা শ্রমিক। আর এই চা শ্রমিকরা শীত বস্ত্রের অভাবে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন।

তাদের পাশে দাড়ানোর জন্য বিত্তশালীদের আহবান করছেন সুশীল সমাজের নাগরিকরা। সরকারের পক্ষ থেকেও কিছু বরাদ্ধা দেয়া হয়েছে তা খুবই অপ্রতুল।

সরেজমিনে দেখা যায়, সারি সারি চা বাগান কুয়াশার চাদরে ঢাকা। বাড়তে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা। প্রকৃতির এমন বৈরী আচরণ স্বভাবসুলভ হলেও শীত বস্ত্রের অভাবে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন চা বাগানগুলোতে বসবাসরত শ্রমিকরা। সকাল-সন্ধা খড়কুট জ্বালিয়ে অনেকে আগুনের তাপ নিচ্ছেন। রাতে বৃষ্টির ন্যায় ঝিরঝির করে কুয়াশা ঝরছে। আর এর সাথে বইছে হিমেল বাতাস। শীতের কারণে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। দৈনন্দিন কাজকর্ম ও শ্রমিকদের প্রাণ চাঞ্চল্যে দেখা দিয়েছে ভাটা।

জেলার অধিকাংশ চা শ্রমিকরা শীতবস্ত্র ছাড়াই চরম দুর্দশা ভোগ করছে। প্রতিদিন তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে সকাল ৯টায় কাজে যেতে হচ্ছে জেলার চা শ্রমিকদের। শীত অনুযায়ী তাদের গরম কাপড় না থাকায় এ শীতে চা শ্রমিকদের পোহাতে হচ্ছে মারাত্মক দূর্ভোগ। এখন পর্যন্ত সরকারী কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও বেসরকারী ভাবে চা বাগানগুলোতে পৌঁছেনি কোন শীত বস্ত্র। তাছাড়া বাজার থেকে শীতের গরম কাপড় কিনার মতো সার্মথ্য না থাকায় বিশেষ করে সাধারণ শ্রমিকদের দূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

চা শ্রমিকরা জানান, প্রচন্ড শীতে তারা কাবু হয়ে আছেন। এই শীতে জীবনযাপন করা খুবই কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে।

ফুলচারার চা বাগান গ্রামের ৬৩ বছর বয়সী কৃষক বলোরাম জানান, ঠান্ডা তরঙ্গে এই বছর অনেক লোক অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

জুড়ীর সোনারুপ চা বাগানের চা শ্রমিক গনসেশ জানান, পরিবারের পাঁচজন সদস্য নিয়ে একটি ছোট্ট ঘরে বসবাস করছেন। তিনি ২০১৭ সালে একটি কম্বল পাওয়ার পর এখনও কোনো জামাকাপড় পাননি। এরকম আরোও অনেক চা শ্রমিক গরম কাপড়ের জন্য কাঁদছে।

পাহচিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাজ্জাল কান্তি বাওরি জানান, গত বছর বিতরণের জন্য ২০ টি কম্বল পেয়েছিলাম কিন্তু এই বছর মাত্র ১০ টি পেয়েছি।

শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রণয়ী গোলা জানান, গরীব মানুষদের শীতবস্ত্র কিনার ক্ষমতা নেই। ঠান্ডার কারণে তারা কাজের জন্য বাইরে যেতে পারছে না।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কারমকার জানান, মৌলভীবাজারের ৯২ টি চা বাগানগুলিতে চার লাখ চা শ্রমিক বাস করে। শীতে বেশির ভাগই সবচেয়ে খারাপ অবস্থার শিকার। শীত তাদের কাবু করে রেখেছে।

জানুয়ারির শুরুতে জেলার শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রী থেকে এক লাফে ৮ডিগ্রীতে নেমে আসে যা এ এলাকার মানুষকে শীতের অনুভুতি বাড়িয়ে দিয়েছে।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার মো. আনিস আহমেদ জানান, বুধবার সকালে শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা রের্কড হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন মঙ্গলবার ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে ঘন কুয়াশার কারণে শীত বেশি অনুভূত হয়।

মৌলভীবাজারে ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ জানায়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ৩৭ হাজারটি কম্বল দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৭ টি ইউনিয়ন পরিষদ ও পাঁচ পৌরসভায় চেয়ারম্যানদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আরোও ৫০ হাজার কম্বল চাওয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক আশরাফুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা করা হয়েছে। মৌলভীবাজার-১ আসনের সাংসদ বনমন্ত্রী মো: শাহাব উদ্দিন নিজ এলাকায় ও মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাংসদ ড. আব্দুস শহীদ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় চা শ্রমিক ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। আরও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের ডাঃ পলাশ কুমার রায় বলেন, বেশিরভাগ রোগী, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ ব্যক্তিরা ঠান্ডা সংক্রামিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে।

সুশীল সমাজের নাগরিকরা জানান, সমাজে চা শ্রমিকরা এখনও অনেক পিছিয়ে ও অবেহেলিত। তাদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের ধনী লোকদের এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে প্রচন্ড শীতে তারা অসহায় হয়ে আছেন। ওদের পাশে দাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠনসহ ব্যক্তিবর্গকে আহবান জানান।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ জানুয়ারি ২০১৯/ওএফএন/এসডি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন