Sylhet View 24 PRINT

দুবাইয়ে মায়ের কিডনি নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন বড়লেখার বেলাল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৬-২২ ২২:০০:২৬

এ.জে লাভলু, বড়লেখা :: ‘মা-বাবার কারণেই আজ পৃথিবীতে বেঁচে আছি। তাদের কাছে আমি ঋণী। এ ঋণ শোধ করবার মতো নয়।’- এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন মায়ের দেওয়া কিডনিতে নতুন জীবন পাওয়া বেলাল আহমদ।

মায়ের দেওয়া কিডনি প্রতিস্থাপনের পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। এতে আবারও নতুন করে পৃথিবীতে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। বেলাল বর্তমানে আরব-আমিরাতের শেখ খলিফা হাসপাতালে আইসিউতে রয়েছেন। শনিবার বিকেলে বেলালে সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

আলাপকালে বেলাল বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। অনেকটা সুস্থবোধ করছি। মায়ের দেওয়া কিডনিতে নতুনভাবে বাঁচার আশা জেগেছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন খেতে পারছি। বসতেও পারছি। সমস্যা হচ্ছে না। অনেকে আমাকে দেখতে আসছেন।’

আপনার মা কেমন আছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে কিডনি দেওয়ার পর মাও ভালো আছেন।  তিনি খেতে পারছেন। হাঁটতেও পারছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘প্রথমে বাবা আমাকে কিডনি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উনার শারীরিক অবস্থা ভালো না। তাই মা আমাকে কিডনি দিতে রাজি হন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মায়ের সাথে কিডনি মিলে যাওয়ায় প্রায় ৮ মাস আগে তিনি এখানে (দুবাই) আসেন। ডাক্তাররা দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মায়ের দেহ থেকে প্রথমে কিডনি বের করেন। পরে সেটি আমার দেহে প্রতিস্থাপন করেন।’

তিনি জানান, কিডনি দিলে কারো কোনো ক্ষতি হয়না। যিনি কিডনি দেবেন, তাঁর কোনো ক্ষতি নেই। আর যাকে কিডনি দেবেন তিনিও ভালো থাকেন। এটা চিকিৎসকররা বলেছেন।

এ সময় বেলালের বাবা ফখর উদ্দিনের সাথেও কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও ছেলে দুজনেই সুস্থ আছেন। বেলালকে এখনো আইসিউতে রাখা হয়েছে। ধীরে ধীরে তাঁর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। দুদিন পর আইসিইউ থেকে বের করা হবে। সে কথা বলতে পারছে। খেতে পারছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তাঁর (বেলালের) মায়েরও অবস্থা ভালো। তিনিও হাটছেন। খেতে পারছেন। কোনো সমস্যা হয়নি এখনো।’ তিনি জানান, বেলালের অনেক বন্ধু আছেন এদেশে। সবাই প্রতিদিনই তাকে থাকতে দেখতে আসছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ খলিফা হাসপাতালে মায়ের দেওয়া কিডনি বেলালের দেহে প্রতিস্থাপন করেন চিকিৎসকরা।এনিয়ে সিলেটভিউয়ে ‘বড়লেখায় ছেলের জীবন বাঁচাতে গর্ভধারিণীর মমতার দৃষ্টান্ত’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে তা দ্রুত ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে সংবাদটি ফেসবুকে শেয়ার করে ওই মায়ের প্রশংসা করেন। একই সাথে তারা মা-ছেলের সুস্থতা কামনা করেন।

বেলালের স্বজন, প্রতিবেশী ও প্রবাসী সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা পৌরসভার পাখিয়ালা গ্রামের বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী ফখর উদ্দিনের ছেলে বেলাল আহমদ (২৮) প্রায় ৬ বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি তার বাবার সাথে থাকেন। তিনি সেখানে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। কিন্তু বেলাল দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।

কিডনি ডায়ালাইসিস করেও তাঁর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসরা বেলালকে জানান তাঁর দুটো কিডনি একেবারে অকেজো হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা তাঁকে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন।

এদিকে বেলালের দুটো কিডনি নষ্ট হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তাঁর মা সালেহা বেগম। এই অবস্থায় নিজের কথা চিন্তা না করে একটি কিডনি ছেলেকে দেওয়ায় সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছেলের কিডনি সাথে মিলে যাওয়ায় প্রায় ৮ মাস আগে সালেহা বেগম সংযুক্ত আরব-আমিরাতে যান। অবশেষে গত ১৯ জুন আমিরাতে আবুধাবি শেখ খলিফা হাসপাতালের চিকিৎসকরা মায়ের দেওয়া একটি কিডনি ছেলের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ জুন ২০১৯/এজেএল/পিডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.