Sylhet View 24 PRINT

বড়লেখায় খুন হওয়া সেই জাকারিয়া এসএসসিতে পেল ‘এ’ গ্রেড

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-৩১ ২০:৫৯:৩২

এ.জে লাভলু, বড়লেখা :: জাকারিয়ার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সে ডাক্তার কিংবা পাইলট হবে। একদিন পরিবারের হাল ধরবে। বাবার কষ্ট ঘোচাবে। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়াও করছিল। সে তার বাবাকে জানিয়ে রেখেছিল এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলেই ভালো কোনো কলেজে ভর্র্তি হবে।

আজ রবিবার (৩১ মে) জাকারিয়ার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বেরিয়েছে। পরীক্ষায় সে ‘এ’ গ্রেড পেয়ে পাসও করেছে। কিন্তু সেই পরীক্ষার ফল আর জানা হল না তার। কারণ এর আগেই চিরতরে নিভে গেছে তার প্রাণপ্রদীপ। ফলে জাকারিয়ার স্বপ্ন আর কোনোদিন পূরণ হবে না।

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নিজেদের দোকানের পাওনা ৮৫ টাকা চাইতে গিয়ে গত ২১ মে রাতে এক যুবকের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া জাকারিয়া হোসেন (১৮) এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.০৬ পেয়েছে। সে চলতি বছরে উপজেলার দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এদিকে জাকারিয়ার এমন কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলে তাঁর পরিবারের কারোর মুখে হাসি নেই। হাসির বদলে তাদের চোখে নেমেছে অশ্রু।

আজ বিকেলে মুঠোফোনে আলাপকালে জাকারিয়ার বাবা সালাহ উদ্দিন অশ্রুশিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘পরিবারের ছেলে-মেয়ের মধ্যে জাকরিয়া বড় ছিল। সে লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল। জাকারিয়ার স্বপ্ন ছিল সে ভবিষ্যতে ডাক্তার অথবা পাইলট হবে। তাঁর সেই স্বপ্নের কথা প্রায় আমাদের বলতো। এজন্য সে মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতো। পিইসি পরীক্ষায় সে  জিপিএ-৫ পেয়েছিল।’
 
তিনি বলেন, জাকারিয়া আমাকে বলেছিল এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পাস করলেই ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হবে। আমাদের অভাবের সংসার। এর মধ্যে ছেলেকে কষ্টেসৃষ্টে পড়াচ্ছিলাম। আজ তাঁর রেজাল্ট বের হয়েছে। ছেলে আমার পাস করেছে। কিন্তু সে তা আর ফল জানা হল না। ভর্তি হওয়া হল না ভালো কোনো কলেজে।’

সালাহ উদ্দিন আরো বলেন, ‘ঘটনার পর যে আমার ছেলেকে খুন করেছে তাকে আসামি করে থানায় মামলা করেছি। কিন্তু পুলিশ তাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।  আমি আর কিছু চাই না, আমার ছেলেকে যে হত্যা করেছে আমি তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। যাতে আর কোনো বাবা-মায়ের বুক কেউ এভাবে খালি করতে না পারে।’
 
দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশুক আহমদ আজ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, ‘জাকারিয়া এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.০৬ পেয়েছে। সে খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। মা বাবা তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। তাই পরিবারে আর্থিক অস্বচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও কষ্ট করে তাঁকে বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করিয়েছিলেন। কিন্তু দোকানের পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে তাকে নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছে। আমি জাকারিয়ার হত্যাকরীকে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
 
জাকারিয়া হত্যা মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বড়লেখা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কৃষ্ণ মোহন দেবনাথ মুঠোফোনে বলেন, জাকারিয়া হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেফতারের জন্য প্রতিদিনই বিভিন্নস্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপির আরেঙ্গাবাদ গ্রামের সালাহ উদ্দিন বাড়ির পাশে টং দোকানে পান, সিগারেট ও কাঁচামালের ব্যবসা করেন। গত ২১ মে দুপুরে তার ছেলে এসএসসি পরীক্ষার ফলপ্রার্থী জাকারিয়া হোসেন দোকানদারি করছিল। প্রতিবেশী তোতা মিয়া বাড়ি থেকে টাকা এনে দিচ্ছেন বলে ৮৫ টাকার মালামাল ক্রয় করেন। বিকাল পর্যন্তও তোতা মিয়া পাওনা টাকা পরিশোধ করেননি। রাত ৮টার দিকে জাকারিয়া হোসেন দোকানের পাওনা টাকা চাইতে তোতা মিয়ার বাড়িতে যায়। তিনি টাকা নেই বলে তাকে বিদায় করার চেষ্টা করেন।

ওই সময় তোতা মিয়ার ছেলে প্রবাস ফেরত আজিম উদ্দিন (৩৫) তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তিনি জাকারিয়া হোসেনকে ছুরিকাঘাত করেন। গুরুতর অবস্থায় জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরই ঘাতক আজিম উদ্দিন গা ঢাকা দেন। 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৩১ মে ২০২০/এজেএল/আরআই-কে

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.