Sylhet View 24 PRINT

বড়লেখায় প্রশাসনের অভিযানে সহায়তা করায় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-০৯ ০৩:৪৪:৩৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের পলিথিনবিরোধী অভিযানে সহায়তা করায় বড়লেখা পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুল মালিক ঝুনুর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৬ জুলাই পলিথিনবিরোধী অভিযানে দণ্ডিত পলিথিন ব্যবসায়ী সেলিম আহমদ বাদি হয়ে এ মামলাটি করেছেন। পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অভিযোগ, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সহযোগিতা করার কারণে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই মামলাটি করা হয়। এদিকে কাউন্সিলর ঝুনুকে আসামি করায় পৌর কর্তৃপক্ষ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জুলাই বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শামীম আল ইমরানের নেতৃত্বে পৌর শহরে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিষিদ্ধ পলিথিন বিরোধী অভিযান চালায়। অভিযানে পুলিশ, পৌরসভার কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন সংস্থা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেন। অভিযানে শাহজালাল শপিং সিটি,  বিসমিল্লাহ মার্কেট ও উত্তর বাজার এলাকার কয়েকটি গোদাম থেকে মজুদ করা প্রায় ৭০ মন নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করা হয়। এসময় পলিথিন ব্যবসায়ী সেলিম আহমদকে ২০ হাজার টাকা, আব্দুল হাছিবকে ৫ হাজার, আব্দুস সামাদকে ৫ হাজার ও মো. ওমর হোসেন নামের আরেক ব্যবসায়ীকে ৬ হাজার টাকা জারিমানা করা হয়। ঘটনার পরদিন ০২ জুলাই প্রশাসনকে তথ্য দিয়েছেন সন্দেহে পলিথিন ব্যবসায়ীরা পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুল মালিক ঝুনুর চাচাতো ভাই শামীম আহমদের উপর পৌর শহরে প্রকাশ্যে হামলা করে গুরুতর আহত করে। আহত শামীমকে উদ্ধার করে বড়লেখা হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে থাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে তার স্বজনরা ঘটনাস্থলে গেলে পলিথিন সিন্ডিকেটের লোকজনের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় পর পর তিন রাউন্ড গুলির শব্দ শোনেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সংঘর্ষে শামীম আহমদের ছোট ভাই জসীম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। তারা ওসমানীসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় শাহজালাল শপিং সিটির অংশীদার সাইদুল ইসলামকে প্রধান আসামী করে বড়লেখা থানায় শামীম আহমদ ও জসীম উদ্দিন বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। এর মধ্যে শামীম আহমদের মামলায় পলিথিন ব্যবসায়ী সেলিম আহমদ ৬ নম্বর আসামি। দুটি মামলার বাদীদের অভিযোগ, সাইদুলের নেতৃত্বে সেলিমসহ আসামিরা আগ্নেআস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা চালান এবং সাইদুল সরাসরি তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছেন। তবে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক ভিডিও বার্তায় সাইদুল ইসলাম দাবি করেন, ঘটনার সময় তিনি এলাকায় ছিলেন না। এদিন তিনি ব্যবসায়ীক কাজে সিলেট ছিলেন। এদিকে অভিযোগ উঠেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জেরে সংঘর্ষের ঘটনার দুটি মামলার পর গত ৬ জুলাই বড়লেখা থানায় পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুল মালিক ঝুনুকে প্রধান আসামি করে ২১ জনের নাম উল্লেখ করে হামলাসহ নানা অভিযোগ এনে থানায় পাল্টা একটি মামলা করেন পলিথিন ব্যবসায়ী সেলিম আহমদ।

পৌরসভার কাউন্সিলরকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়েরের বিষয়ে জানতে বাদী সেলিম আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। পরে সেলিমের ভাই নাহিদ আহমদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানি না।

এ ব্যাপারে পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুল মালিক ঝুনু বুধবার রাতে বলেন, ‘পলিথিন উদ্ধার অভিযানে উপজেলা প্রশাসন পৌরসভার সহযোগিতা চাওয়ায় পৌর মেয়র দুটি গাড়িসহ শ্রমিক নিয়ে আমাকে যেতে বলেন। অভিযানে পৌরসভার লোকজন নিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করি। এঘটনার পরদিন প্রশাসনকে তথ্য দিয়েছে সন্দেহ করে শাহজালাল মার্কেটের অংশীদার সাইদুলের নেতৃত্বে আমার চাচাতো ভাই শামীমের উপর অস্ত্রসহ আক্রমণ করে তাকে আহত করা হয়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠনো হয়। খবর পেয়ে আমাদের স্বজনরা ঘটনাস্থলে গেলে সাইদুলের নেতৃত্বে আবারও আক্রমণ করা হয়। ঘটনার সময় সাইদুল সরাসারি গুলি করে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এসময় আমার আরেক চাচাতো ভাই পৌর যুবলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিনও আহত হয়। এদিন মেয়র না থাকায় আমি পৌরসভায় প্যানেল মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। শুধুমাত্র প্রশাসনকে সহযোগিতা করায় আমাকে প্রধান আসামি করে একটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হয়রানিমূলক।’

বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, ‘গত বুধবার প্রশাসনের পলিথিন বিরোধী অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পৌরসভাকে সহযোগিতা করতে বলেন। আমি পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুল মালিক ঝুনুকে পৌরসভার দুটো গাড়ি ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সাথে নিয়ে অভিযানে যেতে বলি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় পরদিন ঝুনুকে জড়িয়ে নানা কুৎসা রটানো হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সেলিম উদ্দিন বাদী হয়ে পলিথিন জব্দ করার কারণে আব্দুল মালিক ঝুনুকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করেন। অথচ ঘটনার দিন সংঘর্ষের ঘটনার আমার ও প্যানেল মেয়র- ১ এর অবর্তমানে প্যানেল মেয়র- ২ আব্দুল মালিক ঝুনু অফিসিয়াল কাজ করছিলেন। এতে আমরা অবাক হয়েছি। মামলাটি যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আর প্রশাসের অভিযানে সহযোগিতা করার কারণে কোনো ব্যক্তি যদি জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে এভাবে মামলা করেন তবে ভবিষ্যতে আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবো কিনা তা এখন ভাবতে হবে। 

এ ব্যাপারে বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, ‘পলিথিন উদ্ধার অভিযানে কাউন্সিলর পৌরসভার প্রতিনিধি হিসেবে প্রশাসনকে সহায়তা করেন। পলিথিন উদ্ধারের ঘটনার জেরে পরদিন সংঘর্ষ হয়েছে এমনটি স্থানীয়ভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু  প্রশাসনকে সহায়তার জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনায় তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে এ সম্পর্কে আমি বলতে পারছি না। কেন তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তা একমাত্র বাদিই বলতে পারবেন। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’


সিলেটভিউ২৪ডটকম/৯ জুলাই ২০২০/লাভলু

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.