Sylhet View 24 PRINT

দুর্গম ঝর্ণার পাহাড় পাথারিয়া অবিরাম ধারায় সাঁ সাঁ শব্দ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৯-২৯ ০৯:৫৪:৪৫

ওমর ফারুক নাঈম, পাথারিয়া থেকে ফিরে :: দুর্গম রোমা কর পাথারিয়া পাহাড়। সবুজ অরণ্যের বুক চিরে বেরিয়ে এসেছে ঝর্ণাগুলো। স্থানীয়রা আদর করে নাম দিয়েছেন ঝেরঝেরি, কাখড়াছড়ি, ফুলঢালনি আর ইটাউরি ফুলবাগিচা ঝর্ণা। এ ঝর্ণাগুলো পাথারিয়া পাহাড়কে সাজিয়েছে অন্যরকম সৌন্দর্যে। এই পাথারিয়া পাহাড় বড়লেখা উপজেলা হয়ে একেবারে ভারত সীমা ঘেঁষা। এই অ লের লোকজনের মুখে শুনা যায়, পাথারিয়া পাহাড়ের জন্ম প্রায় দুই কোটি বছর আগে। আর এই পাহাড়ের প্রাচীন নাম ‘আদম আইল’। অনেক অনেক বছর আগে নাকি পাথরি নামক এক জনগোষ্ঠী বাস ছিল এই অ লে। সেখান থেকেই এসেছে পাথারিয়া।

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়া পাহাড় মন কাড়ে ভ্রমণপিপাসুদের। ২৫ মাইলজুড়ে সবুজ অরণ্যে ঘেরা দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এ ঝর্ণাগুলো লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল।

বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই বাজার থেকে পাথারিয়া পাহাড়ের নির্জন পল্লী ডিমাইপুঞ্জির পাশ দিয়ে দুর্গম পাহাড়ি ছড়ার পথে হেঁটে গেলেই চোখে পড়বে কয়েকটি ছোট ঝর্ণা। ৬ কিলোমিটার পিচ্ছিল পাথুরে ছড়া দিয়ে হাঁটার পর ওপরে উঠলে দুটি টিলার ভেতরে দেখা যাবে ঝেরঝেরি ঝর্ণা। ঝেরঝেরির ঠিক ডান পাশে রয়েছে ইটাউরি ফুলবাগিচা ঝর্ণা। ফুলবাগিচায় যেতে হলে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ফুট উঁচু খাড়া দুটি পাহাড়ের পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিতে হবে। পাথারিয়া পাহাড়েরই অন্য প্রান্তে দেশের অন্যতম বৃহৎ জনপ্রিয় জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড।

প্রকৃতির এক অপরূপ লীলা নিকেতন মাধবকুন্ড। প্রায় ২০০ ফুট উচুঁ পাহাড়ের উপর থেকে জলরাশি পাথারিয়ার গা বেয়ে অবিরাম ধারায় সাঁ সাঁ শব্দে নিচে পড়ছে। অবিরাম পতনের ফলে নিচে সৃষ্টি হয়েছে কুন্ডের। আর কুন্ডের প্রবাহমান স্রোতধারা শান্তির বারিধারার মতো মাধবছড়া দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কথিত আছে যে, শ্রীহট্টের রাজা গঙ্গাধ্বজ ওরফে গোবর্ধন পাথারিয়া পাহাড়ে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ শুরু করলে সেখানে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মাটির নিচে একজন সন্ন্যাসীকে দেখতে পান। তখন তিনি ওই সন্ন্যাসীর পদবন্দনা করলে সন্ন্যাসী তাকে নানা উপদেশসহ মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশ তিথিতে তাকে এ কুন্ডে বিসর্জন দিতে নির্দেশ দেন। সন্ন্যাসী বিসর্জিত হওয়া মাত্র তিনবার মাধব, মাধব, মাধব নামে দৈববাণী হয়। এ থেকেই মাধবকুন্ড নামের উৎপত্তি। আবার কারও কারও মতে, মহাদেব বা শিবের পূর্বনাম মাধব এবং এর নামানুসারে তার আবির্ভাব স্থানের নাম মাধবকুন্ড। এ কুন্ডের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে শিবমন্দির। যে পাহাড়টির গা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে এ পাথারিয়া পাহাড়টি সম্পূর্ণ পাথরের। মাধবকুন্ড থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে আরও একটি পরিকুন্ড নামের জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকেও অনবরত পানি পড়ছে।

ঝেরঝেরি ও ইটাউরি ফুলবাগিচার মতো পাথারিয়া পাহাড়ের এই অংশ থেকে চোখে পড়বে ত্রিপল ঝর্ণা, যামিনীকুণ্ড, যমজ ঝর্ণা, রজনীকুণ্ড, পুছুম ঝর্ণা, বন্দরডুবা, পাইথুং ও রামাকুণ্ড নামে আরও অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা। এগুলোর বেশিরভাগই মৌসুমি ঝর্ণা। বর্ষাকালে ঝর্ণাগুলো যৌবনদীপ্ত থাকে। শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়। এছাড়াও পাথারিয়া পাহাড়ের ফুলছড়ি নামক স্থানে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট নান্দনিক সেতু।


স্বচ্ছ জলের ছড়ার কলকলিয়ে বয়ে চলা ঠান্ডা জল। জঙ্গলপথ, পাহাড়ি ঢাল, ঝোপঝাড় আর হরেক গাছগাছালি। চারদিকে চোখে পড়বে সবুজ আর সবুজ। টিলার ভেতরের পথ খুব সরু, পিচ্ছিল পাথরের আঁকাবাঁকা পথ। পাথারিয়া পাহাড়ে অনেক উচুঁ টিলা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য দুরবিন টিলা, গগন টিলা, রাজবাড়ী টিলা। সবচেয়ে উঁচু দুরবিন টিলা। এটাতে উঠে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যাবে দূরে ভারতের লোকালয়। টিলার ভাঁজে ভাঁজে হয় খাসিয়াদের পানপুঞ্জি ও জুম চাষ।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০/ওএফএন/মিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.