Sylhet View 24 PRINT

বয়ঃসন্ধিকালের বিপদ-বিপত্তির নেপথ্যে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৭-০৮ ০০:৩১:২৫

গোলাম মাওলা রনি ::  আপনার-আমার ১৩-১৪ বছর বয়সী সন্তানটিকে শাসন করতে গিয়ে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই ঠিক ওই বয়সে আমরা কী করেছিলাম এবং প্রতিদানে আমাদের পিতা-মাতাই বা কী করতেন। আপনার কথা আমি বলতে পারব না, তবে আমার কিশোরবেলার দুরন্তপনার ভুল-ভ্রান্তি ও অপরাধসমূহ যদি আমার পিতা-মাতা অবলীলায় ক্ষমা না করতেন তবে নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমি আমার আজকের অবস্থানে পৌঁছতে পারতাম না। স্কুল ফাঁকি দেওয়া, বাড়ির কাজ বা হোমওয়ার্ক না করা, অসময়ে খেলাধুলা, নাটক-সিনেমা-যাত্রাপালা কিংবা সার্কাসে গিয়ে সময় নষ্ট করা, অন্যের গাছের তাল-বেল-আতা-নারকেল ইত্যাদি চুরি করা থেকে শুরু করে কী যে সব করেছি তা বিস্তারিত লিখতে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে। দস্যিপনা, অবাধ্যতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকা, সময়মতো না খাওয়া, কারণে-অকারণে রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে বন-জঙ্গল, পরিত্যক্ত বাড়িঘর কিংবা দূরের কোনো গঞ্জে গিয়ে লুকিয়ে পিতা-মাতাকে যেভাবে পেরেশান করেছি তার এক শতাংশও আমার সন্তানরা আধুনিক নগরজীবনে আমার সঙ্গে করে না। অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে আমি অবাক হয়ে যাই আমার কিশোর বয়সের উদ্ভ্রান্ত ও বিশৃঙ্খল চিন্তা-চেতনা, কর্ম ও অনিয়মের কথা ভেবে। অন্যদিকে আমার পিতা-মাতার আদর-যত্ন, ধৈর্য-সহ্য এবং হৃদয়ের বিশালতার কথা ভেবে অবাক না হয়ে পারি না। আমরা সাত ভাই বর্তমানে যে যার পেশায় প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু কিশোরবেলায় আমাদের দুরন্তপনার বাড়াবাড়ি এতটা বেশি এবং প্রবল ছিল যে, মুখরা, পাড়া-প্রতিবেশীরা প্রায় একবাক্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল যে, আমাদের দ্বারা কিছু হবে না। কিন্তু আমাদের পিতা-মাতা ধৈর্যহারা হয়ে আশাহত হয়ে যাননি ঠিক যেমনটি আমি হয়ে যাই মাঝেমধ্যে। এ কথা আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমার শৈশবে, কৈশোরে কিংবা জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে কোনো দিন আমার পিতা-মাতা আমাকে প্রহার তো দূরের কথা একটি আঁচড়ও দেননি। মা আমার সব আবদার মেনে নিতেন হাসিমুখে, আর আব্বা আমায় খুব ছোটকাল থেকেই সম্মান করতেন যাতে অন্যরাও তার সন্তানকে সম্মান ও সমীহ করে।

আমি যদি আমার পিতা-মাতার সঙ্গে নিজেকে এবং আমার স্ত্রীকে নিজ সন্তানদের পিতা-মাতারূপে তুলনা করি তবে অবশ্যই নিজেদের ধৈর্যহারা, অস্থির, স্বার্থপর এবং নিষ্ঠুর হিসেবে দেখতে পাই। আমাদের পিতা-মাতা তাদের পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের ঐশ্বর্য দ্বারা আমাদের সব দুর্বলতা, অক্ষমতা, চাওয়া-পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, অভাব-অভিযোগ, আনন্দ-বেদনা এবং অসুস্থতাকে ধারণ ও মূল্যায়ন করতেন। আমাদের বেঁচে থাকা এবং বড় হওয়াকে তারা প্রাধান্য দিতেন। আমাদের মুখের হাসি, হৃদয়ের বেদনা এবং অশ্রুকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে পারতেন। তারা আমাদের অসাধ্য কোনো কিছুই জোর করে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতেন না। অন্যদিকে, আমরা আমাদের যাবতীয় দুর্বলতা, অক্ষমতা, ব্যর্থতা সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিই এবং আমাদের অত্যাচারের সর্বোচ্চ হাতিয়ার দিয়ে তাদের জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলি। উঠতে বসতে গালাগাল, কথা-কর্ম-আচরণ দ্বারা তাদের অপমান ও অবদমিত করে রাখার নিরন্তর প্রয়াস চালাই। আমরা প্রায়ই তাদের সঙ্গে হয় মিথ্যা বলি নয় তো বাড়িয়ে বলি অথবা প্রকৃত সত্য গোপন করে অনেক কিছু ধামাচাপা দিয়ে নিজের যোগ্যতা, দুর্বলতা, অক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে তাদের বিভ্রান্ত করে তুলি।

বর্তমানকালের অনেক পিতা-মাতা যারা তাদের স্কুলজীবনের বার্ষিক পরীক্ষাগুলোয় কোনোমতে পাস কারার জন্য হররোজ কয়েক বালতি পানিতে নাকানি-চুবানি খেতেন তারাই তাদের কিশোর সন্তানকে ক্লাসে ফার্স্ট বানানোর জন্য হররোজ অত্যাচারের স্টিমরোলার দিয়ে একটি জীবন্ত সত্তাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কিশোরবেলার শয়তানের পশ্চাদেদশে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য বটগাছের মগডালে কিংবা সবচেয়ে বড় তালগাছটিতে উঠে চৈত্র মাসের ঠা ঠা পড়া রোদের মধ্যে ভরদুপুরে ঘাপটি মেরে বসে থাকতেন তারাই তাদের সন্তানদের শান্তশিষ্ট, গোবেচারা প্রকৃতির সাক্ষাৎ দেবতা বানানোর চেষ্টায় গলদঘর্ম হয়ে পড়েন। যারা শৈশবে অহরহ মিথ্যা বলতেন, সুযোগ পেলে নিজ বাড়ি এবং আশপাশের বাড়ি থেকে কলা-কচু-মুরগি, মুরগির ডিম ইত্যাদি চুরি-চামারি করে পাশের ঝোপঝাড়ে গিয়ে চড়াইভাতি করতেন সেই তারাই নিজেদের শিশু-সন্তানদের সত্যব্রত পালনের উপদেশ দেওয়ার সময় একবারও ভাবছেন না— কেন তিনি শৈশবে ওমনটি করেছিলেন এবং তার সন্তানটিই বা কেন করছে!

আমাদের কালে পিতা-মাতার জীবনযুদ্ধ বর্তমানের চেয়ে বহুগুণে পরিশ্রমনির্ভর ও প্রকৃতিনির্ভর ছিল। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তি পেপার-পত্রিকা, গণমাধ্যম এবং যোগাযোগমাধ্যম এতটাই সেকেলে ছিল যা কোনোভাবেই বর্তমানের সঙ্গে তুলনীয় নয়। তারা কিশোর সন্তানের বয়ঃসন্ধিক্ষণের সমস্যাদি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। সন্তানদের সুষম খাদ্য, শিশুতোষ রোগবালাই, স্বাস্থ্য রক্ষা, মানসিক বিকাশ ও উন্নয়ন সম্পর্কে শতকরা ৯৯ ভাগ পিতা-মাতা সামান্য ধারণা রাখতেন না। অথচ তাদের সন্তানরাই জজ-ব্যারিস্টার হয়ে দেশ চালাচ্ছেন। অন্যদিকে অনেক জজ-ব্যারিস্টার, নওয়াব-বাহাদুর, শিল্পপতি ও লাটসাহেবের ছেলেমেয়েরা ধ্বংসের প্রান্তসীমায় যেতে যেতে প্রায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে নতুবা পুরো সমাজব্যবস্থাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়ে নিজেরা প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীতে রূপান্তরিত বা বিবর্তিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো— অতীতকালে যা ঘটেনি তা কেন বর্তমানকালে ঘটছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে কিশোর বয়সের শারীরিক-মানসিক বিবর্তন ও ঝক্কি-ঝামেলা নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলে নিই।

ইংরেজিতে টিনএজ শব্দটির অর্থ হলো— ১৩ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বয়স। এ বয়সের ছেলেমেয়েদের বলা হয় টিনএজার। বাংলায় আমরা যাকে বয়ঃসন্ধিকাল বলি তা সাধারণত টিনএজের সীমানা পেরিয়ে কারও কারও ক্ষেত্রে যেমন আট-নয় বছর হতে পারে তেমনি কেউ কেউ উনিশ বছর বয়স পার করার পরও আরও দু-তিন বছর পর্যন্ত টিনএজারের মতো আচরণ করতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো— বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীরা এমন কী আচরণ করে বা করতে পারে যার ব্যাপারে পিতা-মাতা বা অভিভাবক এবং শিক্ষকবৃন্দের যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত হওয়া দরকার। অথবা আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগে কেন আমাদের সমাজের বয়ঃসন্ধিসংক্রান্ত সমস্যা অনেক কম ছিল এবং তখনকার পিতা-মাতারা কীভাবে কোনো কিছু না জানা সত্ত্বেও সবকিছু সামাল দিয়েছিলেন।

বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে ইদানীং আমাদের দেশে যে আলোচনা-সমালোচনা কিংবা গবেষণা চলছে তা মূলত ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আমদানি হয়েছে। ওইসব দেশে বয়ঃসন্ধিকালকে বলা হয় অ্যাডলেসনস যা এখন পশ্চিমা দুনিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান বলে বিবেচিত হচ্ছে। তারা বয়ঃসন্ধিকালের স্বাস্থ্য, মন, মস্তিষ্ক, প্রজনন, গর্ভধারণ, শিক্ষা, ফ্যাশন, বিনোদন ইত্যাদি বিষয়ে কিশোর-কিশোরী, অভিভাবক, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে প্রশিক্ষিত করার জন্য জাতীয় বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখছেন। তারা মনে করছেন যথাযথ প্রস্তুতি, তদারকি এবং পরিচর্যা না করলে বয়ঃসন্ধিকালের সংকটের কারণে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। এ লক্ষ্যে তারা মনোবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, পুষ্টিবিজ্ঞান, ব্যবহারিক বিজ্ঞান, ফ্যাশন, বিনোদন, ভোগ্যপণ্য, ক্রীড়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে শত শত বিশেষজ্ঞ তৈরি করে চলেছেন এবং লাখ লাখ লোককে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। সুইডিশ সরকারের এমন একটি প্রকল্পে প্রায় মাসব্যাপী উঁচু পর্যায়ের একটি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুবাদে আমি বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেছিলাম সেই ২০১২ সালের দিকে।

এবার বয়ঃসন্ধিকালের কিছু সমস্যার দিকে আলোকপাত করা যাক। আমরা অনেকেই জানি, জন্মের পর একটি শিশুর দেহ-মন-মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য শরীরের অভ্যন্তরে বহু জৈব-রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া চলতে থাকে। আট বছর বয়সের মধ্যে মস্তিষ্কের গঠন সম্পূর্ণ হয়। এরপর শরীরের রাসায়নিক প্রক্রিয়া মস্তিষ্কের গঠন প্রক্রিয়া থেকে সরে গিয়ে কয়েক প্রকারের হরমোন তৈরি করতে থাকে। এসব হরমোনের সঙ্গে যখন মস্তিষ্কের আন্তযোগাযোগ শুরু হয় তখন কিশোর-কিশোরীর আচরণ-চিন্তাভাবনা ও অঙ্গভঙ্গিতে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ঘটনাটি বোঝানোর জন্য একটি রোবটের মধ্যে নতুন সফটওয়্যার কিংবা একটি ইঞ্জিনের মধ্যে তেল ভরে হঠাৎ স্টার্ট দিলে ওগুলোতে যে প্রতিক্রিয়া হয় তদ্রূপ মানুষের বয়ঃসন্ধিকালে নিত্যনতুন হরমোনের গঠন এবং মস্তিষ্কের সঙ্গে সেই হরমোনের যোগাযোগের ফলে শরীর-মন ও মস্তিষ্কে একটি ঝাঁকুনি লাগে এবং তা গতিপ্রাপ্ত হয়ে দিগিবদিক ছোটাছুটির জন্য চেষ্টা-তদবির করে।

বয়ঃসন্ধিকালে মানুষের মধ্যে যৌনতা, প্রেম, বিরহ ইত্যাদি হাজারও হরমোন ক্রমাগত তৈরি হতে থাকে। মানুষের রাগ, ক্ষোভ, হিংসা-বিদ্বেষ, কুটনামি ইত্যাদি হরমোনের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগবালাই এবং সেগুলোর বিনাশ সাধনের জন্য স্বয়ংক্রিয় কিছু হরমোনের সৃষ্টি হয়। এতসব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার কবলে পড়ে আমাদের কিশোর বয়সের সন্তানরা প্রথমত অবাক হতে শেখে, তারপর কৌতূহল নিবৃত্তির জন্য চিন্তা করতে আরম্ভ করে এবং সবার শেষে চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে অজ্ঞতাবশত কিংবা অনভিজ্ঞতার কারণে একটার পর একটা বিপত্তি ঘটাতে থাকে। পরিণত বয়সে মানুষ সাধারণত অবাক হয় খুব কম। অথবা অবাক হওয়ার মতো কিছু ঘটলে সে থমকে দাঁড়ায় এবং পরক্ষণে চিন্তা করে সামনে এগোতে বা পিছুটান দিতে চেষ্টা করে। অন্যদিকে, বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীরা প্রতি মুহূর্তে তার পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে নানাভাবে অবাক হতে থাকে এবং পরস্পরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে সাড়া দিয়ে কর্মকাণ্ড শুরু করে।

বয়ঃসন্ধিকালে মানুষের মনের ইচ্ছা, বিবেক ও বুদ্ধির মধ্যে সমন্বয় হয় খুব কম। আমাদের মনে কোনো কিছু উদয় হলে কিংবা চোখ দিয়ে কিছু দেখলে, কান দিয়ে শুনলে বা ঘ্রাণ পেলে সাধারণত স্বয়ংক্রিয়ভাবে মস্তিষ্কে সংকেত চলে যায়। মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত দেয় এবং মনের মধ্যকার বিবেকবোধও তত্ক্ষণাৎ জাগ্রত হয়ে যায়। ফলে একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত পেয়ে আমরা নিজেকে সংযত করার সুযোগ পাই। অন্যদিকে, বয়ঃসন্ধিকালে উপরোক্ত ঘটনায় মন-মস্তিষ্ক এবং বিবেক সাধারণত একই সমান্তরালে কাজ করে না। ফলে কিশোর-কিশোরীরা সহজে যেভাবে ভয় পেয়ে যায় একইভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা যেভাবে দ্রুত ভালোবাসতে ও বিশ্বাস করতে পারে তেমনি ঘৃণা ও অবিশ্বাসের ক্ষেত্রে একই আচরণ করে। তারা যেমনি দয়ালু তেমনি নির্মম ও নিষ্ঠুর হয়ে থাকে। তারা যেভাবে মনোযোগী হয় ঠিক একইভাবে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। তারা বিশ্বাস রক্ষা ও বিশ্বাসভঙ্গ, আস্থা-অনাস্থা, ভদ্রতা-অভদ্রতা, অনুগত-অবাধ্যতা, সততা-অসততা ইত্যাদি বিপরীতমুখী কর্মে একই সঙ্গে সমানতালে সাড়া দিয়ে থাকে।

আমরা যারা নিজেদের পিতা-মাতা দাবি করি তাদের বেশির ভাগ সংখ্যক আপন সন্তানদের মনোজাগতিক রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না। যারা জানি, তারা তা বিশ্বাস করি না। আমরা আপন আভিজাত্য, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা এবং দম্ভের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য হররোজ তাদের ওপর যে নির্যাতন করি তা পশ্চিমা দুনিয়ায় রীতিমতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা আমাদের শাস্তি না দিলেও আমরা আমাদের অজ্ঞতার কারণে নিজেরাই নিজেদের শাস্তি কার্যকর করে থাকি। আমাদের ইদানীং কালের শহুরে সমাজ বিশেষ করে সচ্ছল পরিবারগুলোয় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা-রাতে সন্তানকে পণ্ডিত বানানোর জন্য যে মহরত চলে তাতে প্রতিটি ঘর কমবেশি হয় হাবিয়া দোজখ নয় তো পাগলা গারদের কয়েদখানায় পরিণত হয়। এভাবে চলতে চলতে একসময় কিশোর-কিশোরীরা হয় বিপথে চলে যায় নতুবা মেরুদণ্ডহীন এক অদ্ভুত প্রাণিতে পরিণত হয়ে পৃথিবীর জন্য নতুন দায় সৃষ্টি করে ফেলে।

আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন প্রকৃতি আমাদের এবং আমাদের পিতা-মাতাকে নিদারুণভাবে সাহায্য করেছে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, বরিশালের  বনজঙ্গল, গ্রামের মমতাময় পরিবেশ এবং আন্তরিক মেলামেশার সুযোগের কারণে কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিক্ষণের যন্ত্রণাময় আচরণ পরিবারের পরিবর্তে প্রকৃতির ওপরই বেশি অত্যাচার করেছে। অন্যদিকে, পিতা-মাতার সরলতা, পরম মমতা এবং সততার কারণে সেই সময়ের কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের অপকর্মের জন্য অনুশোচনা করার সুযোগ পেত। তারা দিন শেষে স্বেচ্ছায় এবং অবনত মস্তকে পিতা-মাতার কাছে ফিরে আসত এবং পিতা-মাতার ক্ষমা করার ক্ষমতা, সহজ-সরল অভিব্যক্তি ও অহংকারমুক্ত ব্যক্তিত্বের কারণে খুব সহজেই সমঝোতা হয়ে যেত। আর এভাবে অতি সাধারণ ঘর থেকে বড় বড় জজ-ব্যারিস্টার বের হয়ে আসত।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.