আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

কওমী সনদের স্বীকৃতি প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শীতার প্রতিফলন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৮-১৪ ১৫:২৩:১৭

মো. জিল্লুর রহমান জিলু :: গত ১২আগস্ট দেশের উপজেলা পর্যায়ের ২শ ৭১টি কলেজকে সরকারিকরণের ঐতিহাসিক ঘোষণা এসেছে। সরকারিকরণের এ তালিকায় সিলেট বিভাগের ২৮টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলার রয়েছে ১০টি কলেজ। বাকিগুলো হচ্ছে সুনামগঞ্জ জেলার ৮টি, মৌলভীবাজার জেলার ৫টি এবং হবিগঞ্জ জেলার ৫টি কলেজ।

না বললেই নয়, সরকারিকরণের এ প্রক্রিয়ায় আমাদের সিলেট জেলার কলেজসমুহের মধ্যে রয়েছে, সিলেট মদনমোহন কলেজ, বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, গোয়ালাবাজার আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজ (ওসমানীনগর), দক্ষিণ সুরমা ডিগ্রি কলেজ, ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজ, গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজ, ঢাকা দক্ষিণ ডিগ্রি কলেজ (গোলাপগঞ্জ), কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজ, ইমরান আহমদ মহিলা কলেজ (জৈন্তাপুর)।

এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার সরকারিকরণকৃত কলেজ হচ্ছে দিগেন্দ্র বর্মণ ডিগ্রি কলেজ (বিশ্বম্ভরপুর), ছাতক ডিগ্রি কলেজ, দিরাই ডিগ্রি কলেজ, ধর্মপাশা ডিগ্রি কলেজ, দোয়ারাবাজার ডিগ্রি কলেজ, জগন্নাথপুর ডিগ্রি কলেজ, শাল্লা ডিগ্রি কলেজ এবং জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ।

মৌলভীবাজার জেলার সরকারিকরণকৃত ৫টি কলেজ হচ্ছে, বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ, কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজ, রাজনগর ডিগ্রি কলেজ, কমলগঞ্জ গণ মহাবিদ্যালয়, জুড়ি কলেজ। এবং হবিগঞ্জ জেলার সরকারিকরণকৃত ৫টি কলেজ হচ্ছে, আজমিরীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, শাহজালাল কলেজ (মাধবপুর), জনাব আলী ডিগ্রি কলেজ (বানিয়াচং), নবীগঞ্জ কলেজ, আলিম সোবহান চৌধুরী কলেজ (বাহুবল)।

দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে কমপক্ষে একটি কলেজকে সরকারিকরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণাকে সামনে রেখে এসব কলেজকে সরকারিকরণ করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের এই পদক্ষেপ সমৃদ্ধ জাতি গঠনে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।
এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। দেশব্যাপী কলেজ সরকারিকরণের আনন্দের রেশ ধরে মাত্র একদিনের ব্যবধানে আলোচনায় কওমী মাদরাসার ‘স্নাতক’ স্বীকৃতি। ১২আগস্ট কলেজ সরকারিকরণের পরদিন ১৩আগস্ট দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) সনদকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমান মর্যাদা দিয়ে মন্ত্রী পরিষদে আইনের খসড়া অনুমোদন হয়েছে।

ওইদিন মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘কওমী মাদরাসাসমুহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান আইন, ২০১৮’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বাংলাদেশ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

এসময় তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের ১৩এপ্রিল সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সেটাকে এখন আইনের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হচ্ছে’। তিনি বলেন, কওমী মাদরাসাগুলোকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল স্রোতে নিয়ে আসতে দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) সনদকে (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমান প্রদান করে প্রণীত এ আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম আরও বলেন, ২০১৭ সালের ১৩এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সম্পর্কিত এক গেজেট নোটিফিকেশনের ভিত্তিতে এই খসড়া আইন প্রণীত হয়েছে। ওই গেজেটে দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) ডিগ্রিকে স্নাতকোত্তর সমমান দেয়া হয়েছে।

দেশের কওমী মাদরাসা পড়ুয়া লাখ লাখ শিক্ষার্থীর পড়ালেখার সর্বোচ্চ সনদকে সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের দীর্ঘকালের এ দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শীতার প্রতিফলন। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশের কওমী মাদরাসার শিক্ষার উন্নয়নে গৃহীত ঐতিহাসিক এ আইনী খসড়ার অনুমোদন প্রদানকে দেশের সচেতন মহল সাধুবাদ জানিয়েছেন। নিঃসন্দেহে দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে এ আইনী অনুমোদন একটি মাইলফলক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাতেই হয়। আর এ স্বীকৃতি শিক্ষাক্ষেত্রে যেমন সুফল বয়ে আনবে, তেমনি জাতীয় রাজনীতিতেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তথা প্রধামন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাফল্য হিসেবে গণ্য হবে।

অবশ্য এটা সত্য, কওমী মাদরাসাসমুহকে সরকারি এ স্বীকৃতি অর্জনের জন্য কম দৌঁড়ঝাঁপ করতে হয়নি। কওমী ধারার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে কম ‘প্রতিশ্রুতি’, ‘অগ্রগতি’ পাননি। তবে এসবের বাস্তবায়ন হয়েছে অনেকটা ‘শূণ্য যোগ শূণ্য সমান শূণ্য’ এমন। আর বর্তমান সরকারের আমলে সর্বশেষ মন্ত্রীসভার বৈঠকে খসড়া অনুমোদনের এ প্রক্রিয়া পর্যন্ত কওমী সনদের স্বীকৃতির যতটুকু অগ্রগতি অর্জন হয়েছে তা এককথায় ‘অভূতপূর্ব’। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা এবং দূরদৃষ্টি প্রশংসাযোগ্য। কারণ একই দেশে বসবাস করে প্রতি বছর কওমী মাদরাসাসমুহের লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়ালেখা শেষ করে মসজিদ, মাদরাসা ব্যতিরেকে তাদের চাহিদামত অন্য কোনো কর্মক্ষেত্রে যোগদানের ‘অযোগ্যতা’র অপবাদ নিয়ে চলতে হয়েছে। কওমী সনদের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে যথার্থই বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে কওমী মাদরাসার লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের মূল স্রোতে আনতে হবে। নিঃসন্দেহে মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকের অনুমোদনের পর পূর্ণাঙ্গ আইন পাশের মাধ্যমে দেশের সকল নাগরিকের জন্য শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ সৃষ্টির একটি পটভূমি সৃষ্টি হবে।

এ ক্ষেত্রে দেশের বিশিষ্ট আলেম-উলামা, কওমী ধারার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে ২০১৭ সালের ১১এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বৈঠক একটি স্মরণীয় ঘটনা।

কারণ সেদিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী এ দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম শাহ আহমদ শফী, মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসঊদসহ প্রখ্যাত আলেম-উলামাদের প্রতি যে সৌজন্যতা এবং বিশেষ করে কওমী মাদরাসার শিক্ষার প্রতি যে দরদ এবং ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন তা নজিরবিহীন।

প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ বা তার আগেও ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে আলেম-উলামাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তিনি এমনও বলেছেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষা শুরুই হয়েছে এই কওমী মাদরাসার মাধ্যমে’। দেশের ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারের প্রসঙ্গক্রমে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের অবদান উল্লেখ করেন। তিনি বলেছেন ‘আমি সবসময় মনে করেছি, আমাদের কওমী মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া একান্তভাবে দরকার’। দেশের আলিম-উলামাদের উপস্থিতিতে গণভবন ‘ধন্য’ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেদিনের বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক আতিথেয়তা প্রসঙ্গে দেশের আলেম সমাজের অনেক শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ প্রাণখোলা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কওমী স্বীকৃতি প্রদান ঘোষণার মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে ১৩এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করে। তারপরও কোনো কোনো মহল এ প্রক্রিয়া বানচালের অপচেষ্টা করেছেন, বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কওমী স্বীকৃতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করে ধুভ্রজাল সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছেন। অবশেষে মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকেও কওমী সনদের স্বীকৃতির খসড়া অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে।

এরপরও হয়তো ষড়যন্ত্র থেমে থাকবে না। কিন্তু আমাদের দাবি কওমী শিক্ষার সরকারি স্বীকৃতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ যেনো পূর্ণতা অর্জন করে। আমাদের বিশ্বাস, এদেশের কওমী মাদরাসা পড়ুয়া লাখো শিক্ষার্থীরা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশের আগামীদিনের কর্ণধার হয়ে উঠতে পারে। আমাদের আশাবাদ, সকল সংশয়, ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

লেখক: সাংবাদিক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন