আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বাংলাদেশে নুতন ধারার রাজনীতিতে গবেষক ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৮-২৬ ০০:৪৬:৫৩

গোলাম মাহমুদ :: সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত ড. মোহম্মদ এনামুল হক চৌধুরী নতুন প্রজন্মের রাজনীতিক। বিদেশে বড় হওয়া এবং উচ্চতর পড়াশোনার কারণে গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে মানব কল্যাণের ব্রত নিয়ে অর্থনীতি নির্ভর কর্মকান্ডে বেশি আগ্রহী। নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় সমৃদ্ধ জাতি গঠনে গনতন্ত্র ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার পক্ষে তিনি। এই আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে চান নুতন ধারার এই রাজনীতি গবেষক।

ড. মোহম্মদ এনামুল হক চৌধুরী ঢাকা ও মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতিত্বের সাথে অধ্যয়ন শেষে সউদী আরবের ফরেন সার্ভিসে পলিটিকাল এনালাইসিস হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সাথে একটি আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থায় কাজ করতেন। ’৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’- শহীদ জিয়ার এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে। বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে যোগদান করে অল্পদিনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। পুরস্কৃত করেন বেগম খালেদা জিয়া নতুন কমিটিতে তাকে উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করে।

এক একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. মোহম্মদ এনামুল হক চৌধুরী জানালেন, তার রাজনৈতিক ভাবনা ও পরিকল্পনা। বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের মিশন ও ভিশন বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়া, নতুন প্রজন্মের কাছে জিয়াউর রহমানের কল্যাণমুখী রাজনীতি এবং ধর্মীয় ও জাতীয় মূল্যবোধ তুলে ধরা, শহীদ জিয়ার হাতে-কলমে রাজনীতি চর্চার ধারা প্রবর্তন ইত্যাদি নিয়ে সাধনা ও গবেষনা করছেন তিনি।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৌল চেতনায় বিশ্বাসী ও বেগম জিয়ার খুবই আস্থাবাজন ড. মোহম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুনগত পরিবর্তন এনেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। তিনি নিয়মিত দলের নেতাদের জন্যে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করতেন ।

জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পেক্ষাপট নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে ড. মোহম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, জাতীয় সংকট সন্ধিক্ষণে জিয়াউর রহমানের ওপর বাংলাদেশের শাসনভার অর্পিত হয়। ৭ নভেম্বরের সৈনিক জনতার বিপ্লব তাকে ক্ষমতার পাদ-প্রদীপে নিয়ে আসে। এসময় তার দেশপ্রেম ও শৃংখলাবোধ এবং জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি তাকে নেতৃত্বের আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। তিনি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও প্রশাসন সহ দেশের সর্বত্র শৃংখলা ফিরিয়ে আনেন।

জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে দাবি করে ড. মোহম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, গণমানুষের হৃদয় নিংড়ানো অপরিসীম ভালোবাসা, অবিচল আস্থা আর বিশ্বাসই জিয়াউর রহমানের সবচেয় বড় অর্জন। তিনি এই জাতিকে সম্ভাবনার উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন। বহুদলীয় রাজনীতির ধারা প্রবর্তনের জন্য ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইসলামী মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক বহুদলীয় ধারাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন তিনি। তারপর ১৯৭৯ সালে দেশের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাসদ, মুসলিম লীগ, আইডিএল, সিপিবিসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। এতে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে এবং প্রধান বিরোধী দল হয় আওয়ামী লীগ।

জিয়ার উন্নয়ন কর্মকান্ডকে ইতিহাসে বিরল উল্লেখ করে ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান স্বল্প সময়ে দেশ পরিচালনায় যে বিশাল উন্নয়ন স্বাধন করেছে তা সমকালীন ইতিহাস সত্যিই বিরল। দেশের এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে তার হাতের স্পর্শ পড়েনি। সব ধরনের লোভ-লালসা উপেক্ষা করে তিনি গ্রামে-গঞ্জে ছুটে গেছেন দলমত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের পাশে। তার শাসন আমলে এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল অহংকার করার মতো।

মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত ও রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনে জিয়াউর রহমানের অনন্য অবদান তুলে ধরে ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তবাজার অর্থনীতির পথ অনুসরণ করেন। তখন বেসরকারি বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। নতুন শিল্পনীতি ও আমদানি-রফতানি নীতি ঘোষিত হয়। তিনি নারীদের সমাজের সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত করেন। শিশুদের জন্য শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠা ও নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় স্থাপন করেন। যুব উন্নয়নের জন্য ‘ইয়ুথ কমপ্লেক্স’ যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যুব উন্নয়ন অধিদফতর ও যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় গঠন করেন।

মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে পরিবর্তনের বাহন উল্লেখ করে ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমানের সময়ে রাজনীতি সচেতন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশ ঘটেছে। যারা দেশের সকল পরিবর্তনের বাহন। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীই বাংলাদেশের পরবর্তী রাজনীতিতে নিয়ামক শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। বিবিসির এক পর্যবেক্ষক এ মধ্যবিত্তকে জাতির প্রতি জিয়াউর রহমানের শ্রেষ্ঠ উপহার বলে উল্লেখ করেছেন।

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের কীর্তিগাথা সাফল্য প্রসঙ্গে ড. মোহম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেন। মুসলিম বিশ্ব ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। বাংলাদেশ জাপানকে হারিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জিয়াউর রহমানের সরব উপস্থিতি ছিল অভাবনীয়। তিনি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুন ভাবে উপস্থাপন করেন। আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতাকে আরও অর্থবহ করার উদ্যোগ নেন । ফলে দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা সংস্থা ‘সার্ক’ গঠিত হয়। এজন্য জিয়াকে সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা বলা হয়। ভারতের সাথে পদ্মার পানিবণ্টন চুক্তি এ সময়ে স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৭ সালে বাদশাহ ফাহদের আমন্ত্রণে সৌদি আরব যান বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং উপহার হিসেবে সাথে নিয়ে যান বেশ কিছু নিম গাছের চারা। বাদশাহ জড়িয়ে ধরেন রাষ্ট্রপতি জিয়াকে। তিনি বলেন, আজ থেকে সৌদি আরব ও বাংলাদেশ পরস্পর অকৃতিম বন্ধু। এ সময় জিয়াউর রহমান বলেন, আমাদের দেশের মানুষ গরিব, কিন্তু তারা পরিশ্রম করতে জানে। আপনার দেশের উন্নয়ন কাজের জন্য হাজার হাজার শ্রমিক দরকার। একটি নব্য স্বাধীন মুসলিম দেশের জন্য যদি আন্তরিকভাবে সাহায্য করতে চান, তবে আমার দেশের বেকার মানুষদের কাজ দিন। বাদশাহ ফাহদ রাজি হলেন। উন্মোচিত হলো এক নতুন দিগন্ত। বাংলাদেশ থেকে তখন লাখ লাখ মানুষ সৌদি আরব গিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল সহ স্বাবলম্বী হয়ে ফিরেছেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দেয়া সেই নিমের চারাগুলোও আজ মহীরূহ ছড়িয়ে পড়েছে সারা সৌদি জুড়ে! মরুভূমিতে টিকে আছে বাংলাদেশের স্মৃতি উঁচু করে। আরাফাতের ময়দানে সবুজ শীতল ছায়া দিয়ে চলেছে অসংখ্য নিম গাছ। সৌদি আরবে এটা ‘জিয়া সাজারাহ’ বা ‘জিয়া গাছ’ নামে পরিচিত।

ফিলিস্তিনী মুক্তিসংগ্রামে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা উল্লেখ করে ড. মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে বিশেষ আবেগ। পবিত্র নগরী জেরুসালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন প্রতিটি ফিলিস্তিনি নাগরিক দেখে থাকেন, সে স্বপ্নের অংশীদার এ দেশের মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি এ দেশের মানুষের সমর্থন নিরবচ্ছিন্ন। এই সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রাণপুরুষ ইয়াসির আরাফাতের প্রতি এ দেশের মানুষের রয়েছে বিশেষ শ্রদ্ধা। ফিলিস্তিনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়। ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৩ বার রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। এর মধ্যে ৯ বার এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে। জিয়াউর রহমান ছিলেন আলকুদস কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এই কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় আল হাসান এবং সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল। জিয়াউর রহমান ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহমেদ মোহাম্মদ আলী ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আমাকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরামর্শে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক ফিলিস্তিনের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। জিয়াউর রহমানের সময় ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশের মিলিটারি স্কুল ও কলেজ এবং মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য অবারিত সুযোগ করে দেয়া হয়। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত বহু ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে লেখাপড়া করছেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ফিলিস্তিন দূতাবাসের জন্য ভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়। ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রেসিডেন্ট জিয়া বিভিন্ন সময় জাতিসঙ্ঘে উত্থাপন করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার সরকারও আন্তর্জাতিক ফোরামে সব সময় ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছে। গাজায় ইসরাইলের বর্বরতার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল ফিলিস্তিন দূতাবাসে গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। গত নভেম্বরে ফাতাহর সপ্তম ন্যাশনাল কাউন্সিলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

শহীদ জিয়াকে মৃত্যুঞ্জয়ী উল্লেখ করে ড. মুহম্মদ চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন নিখাদ দেশপ্রেমিক, জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ, মুসলিম বিশ্বের অকৃত্রিম বন্ধু ও আধুনিক চিন্তার ধারক-বাহক। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে সরকারি সফরে এসে আধিপত্যবাদী শত্রুর চক্রান্তে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি শাহাদত বরণ করেন। তার আকস্মিক মৃত্যুর পর সারা দেশে শোকের মাতম শুরু হয়। সেদিনই প্রমাণিত হয়েছিল, জিয়াউর রহমান এই শাহাদতের মাধ্যমে মৃত্যুঞ্জয়ী হয়েছেন। এক প্রতিক্রিয়ায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার শহীদ জিয়াকে বাংলাদেশের সেরা নেতা আখ্যায়িত করে বলেছিলেন, জনগণকে সাহসী নেতৃত্ব দানের মধ্য দিয়ে তিনি গোটা বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার নেতৃত্বের প্রশংসা করে কার্টার আরো বলেছিলেন, ‘শুধু মুসলিম দেশ ও সমাজের মধ্যেই নয়, প্রকৃতপক্ষে গোটা বিশ্বসমাজে তিনি ব্যক্তিগতভাবে যে নেতৃত্ব দিয়েছেন আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ।’

ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচিকে আজো সময়োপযোগী ও বাস্তব সম্মত কর্মসূচি বলে অভিহিত করেন। এতে রয়েছে ১. সর্বতোভাবে দেশের স্বাধীনতা, অখন্ডতা এবং সার্বোভৌমত্ব রক্ষা করা। ২. শাসন তন্ত্রের চারটি মূলনীতি অর্থ্যাৎ সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি সর্বাত্নক বিশ্বাস ও আস্থা, গনতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার সমাজতন্ত্র জাতীয় জীবনে সর্বাত্নক প্রতীফলন। ৩. সর্ব উপায়ে নিজেদেরকে একটি আত্ননির্ভরশীল জাতি হিসাবে গঠন করা। ৪. প্রশাসনের সর্বস্তরে, উন্নয়ন কার্যক্রমে ও আইন শৃংঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে জনগনের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা। ৫. সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এর ভিত্তিতে কৃষি উন্নয়ন এর মাধ্যমে গ্রামীন তথা জাতীয় অর্থনীতিকে জোরদার করা। ৬. দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন করা এবং কেউ যেন ক্ষুধার্থ না থাকে তা নিশ্চিত করা। ৭. দেশে কাপড় এর উৎপাদন বাড়িয়ে সকলের জন্য অন্তত মোট কাপড় নিশ্চিত করা। ৮. কোন নাগরিক যেন গৃহহীন না থাকে তার যথাসম্ভব ব্যবস্থা করা। ৯. দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা। ১০. .সকল দেশ বাসীর জন্য নূন্যতম চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। ১১. সমাজে নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা এবং যুবসমাজ কে সুসংহত করে জাতি গঠনে উদ্বুদ্ধ করা। ১২. দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারী খাতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ দান। ১৩. শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি সাধন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির সার্থে সুস্থ শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। ১৪. সরকারী চাকুরীজীবিদের মধ্যে জনসেবা ও দেশ গঠনের মনোবৃত্তি উৎসাহিত করা এবং তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করা। ১৫. জনসংখ্যা বিস্ফোরন রোধ করা। ১৬. সকল বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং মুসলিম দেশ গুলোর সাথে সম্পর্ক জোড়দার করা। ১৭. প্রশাসন এবং উন্নয়ন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরন এবং স্থানীয় সরকার কে শক্তিশালী করা। ১৮. দূর্নীতিমুক্ত, ন্যায়নীতি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা। ১৯. ধর্ম, গোত্র ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার পূর্ন সংরক্ষন করা এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করা।

বেগম খালেদা জিয়ার শাসন আমলে দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে ড. মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে জিয়াউর রহমানের মৃত্যু হলে তার প্রবর্তিত উন্নয়ন এগিয়ে নিতে হাল ধরেন তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দেশকে তিনি আবারো গণতন্ত্রায়ন ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেন। রাষ্ট্রব্যবস্থায় তিনি যে সাফল্য দেখিয়েছেন সমসাময়িক রাজনীতির ইতিহাসে এটি একটি অনন্য উদাহরণ। তিনি দেশপ্রেম ও কর্মনিষ্ঠার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করেন। ফলে বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। দেশ গঠনে বেগম জিয়ার উন্নয়ন কর্মসূচি আজকের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। তার উৎপাদনমুখী কৃষিব্যবস্থা এবং উন্নয়নমুখী ও অগ্রগামী শিক্ষাচিন্তা ও নারী অধিকার সহ অসমাপ্ত কাজ যেন সুন্দর সমাপ্তির পথে অগ্রসর হতে পারে সে জন্য সবরকম ব্যবস্থা করতে হবে।

বেগম জিয়া কি এতিমের টাকা চুরি করেছেন? এমন প্রশশ্নের জবাবে ড. মুহম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, বিচারের সাথে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের প্রচেষ্টা থাকলে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। রাজনীতি কলুষিত হয়ে পড়ে। সত্যকে কখনই মিথ্যা বানানো যায় না। মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ঢাকাও যায় না। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত একটি মামলার রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন কারান্তরীণ। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা প্রায়ই বলে থাকেন, ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন, তাই তার জেল হয়েছে।’ ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদে এমন কথাও বলছেন, ‘তার রাজনীতি শেষ করে দেয়া হয়েছে, তিনি আর কখনো নির্বাচন করতে পারবেন না, ক্ষমতায় আসতে পারবেন না’! দু:খ জনক হলেও সত্য, ৭৩ বছর বয়স্ক একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ২০০ বছরের পুরনো এক নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে।

ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, এ মামলার ঘটনা শুরু ১৯৯১ সালের ৯ জুন। একথা সবাই স্বীকার করবেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মুসলিম উম্মাহর সাথে বিশেষ করে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে আরব দেশগুলোর সুসম্পর্কের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল। ১৯৯১ সালের জুন মাসে কুয়েতের তৎকালীন আমির শেখ জাবের আল আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে ১২ লাখ ৫৫ হাজার মার্কিন ডলারের একটি তহবিল পাঠিয়ে ছিলেন। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের মাধ্যমে পাঠানো এই তহবিল প্রেরণের উদ্দেশ্য ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্মরণে এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করা। তারেক রহমান এতিমখানার ওই টাকা উচ্চ মুনাফাধারী বিভিন্ন ব্যাংকে রেখে তা তিনগুণ বর্ধিত করেছেন। বাংলাদেশ আইনের ‘দ্য ট্রাস্ট অ্যাক্ট, ১৮৮২’ এর ২০ নম্বর ধারা অনুযায়ী এই ট্রাস্টের অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে বৃদ্ধিকরণের অধিকার ছিল। এ ছাড়াও ওআইসির ইসলামি শাস্ত্র আইন অ্যাকাডেমির ১৫তম কাউন্সিলের (মাস্কাট, ওমান; ৬-১১ মার্চ, ২০০৪) অধিবেশনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, জিয়া ট্রাস্ট ফাউন্ডেশন ফর অরফানস্ এবং এর ট্রাস্ট ফান্ডের বিনিয়োগ এবং তার লাভের ওপর জারিকৃত ফরমান নং-১৪০ (৬/১৫) এর কাঠামোর আওতায় পড়ে। বাস্তবে ট্রাস্টে এখনো ছয় কোটির বেশি টাকা জমা আছে ব্যাংকে। বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে করা হয়েছে।

বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, তার দেশপ্রেম, স্বজাত্যবোধ ও আধুনিক জাতি গঠনের পরিকল্পনা জেনে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। আমি বেশ কয়েকবার তার সাথে সাক্ষাৎ করেছি। উন্নত বিশ্বের রাজনীতি নিয়ে তিনি প্রচুর পড়াশোনা করেন। তার সাংগঠনিক দৃঢ়তা ও দলীয় শৃঙ্খলাবোধ অভাবনীয়। আধুনিক রাজনীতির আলোকিত মানুষ তিনি। জাতীয়তাবাদের ভিত্তিমূলে শোষণমুক্ত সমাজের যে স্বপ্ন, তা বাস্তবে রূপ দিতে তিনি সচেষ্ট। যেখানে থাকবে ধর্ম-বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য প্রভুতি মৌলিক চাহিদা পূরণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। থাকবে সততা, নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচার।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন