আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

এডভ্যানচার অফ মারিয়ানা ট্রেঞ্চ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-০৫ ১৮:১৫:৪৯

নাঈমা শওকত সেতু :: হে বন্ধুরা, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা কৌতুহলী। যারা পৃথিবীর অনেক স্থান সর্ম্পকে জানতে চান বা দেখতে চান। কিন্তু দৈনন্দিন কর্ম ব্যস্ততার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবুও বিভিন্ন স্থান সর্ম্পকে জানার আগ্রহ তো থেকেই থাকে। তাই আজকে আমি আপনাদেরকে এমনই একটি রহস্যময় স্থানের কথা বলব। আমাদের পৃথিবীতে একটি গভীর স্থান আছে। যা অনেক গভীর, অনেক! স্কুলে আমরা সকলে শিখেছি পৃথিবীর সর্বোচ্চ উঁচু স্থান মাউন্ট এভারেস্ট এবং সবচেয়ে গভীর স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। একটি সাধারণ মানুষের শিক্ষা এখানেই শেষ। কিন্ত অপনিকি সেই স্থান সর্ম্পকে আরও জানতে চান? যেখানে রয়েছে অসংখ্য রহস্যময় প্রণী, পৃথিবীর সবচেয়ে অন্ধকার স্থান যেখানে সময়ের কোন প্রভাবই পড়েনা, পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ! তবে মনযোগ দিয়ে পড়ুন।

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে মারিয়ানা আইলেন্ডর পাশেই অবস্থিত। মারিয়ানা আইলেন্ডর নাম থেকেই এর নামকরণ করা হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গর্ত,যা ইংরেজী অক্ষর (ভি) এর মতে যা ১,৫০০ কি.মি. লম্বা এবং ১১,০০০ কি.মি. গভীর। অর্থ্যাৎ এভারেস্টের আকৃতির লম্বা কোনোকিছু খুব সহজে সেখানে রেখে দেয়া যাবে। তারপরও সেখানে ১,০০০ কি.মি. জায়গা থেকে যাবে। বহু বছর যাবৎ বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল ওখানে কোনো প্রাণীই নেই। বা ঐ অন্ধকার গভীর স্থানে কোনো প্রাণী বেঁচেও থাকতে পারে না। কিন্তু ১৯৫৮ সালে সোভিয়েত শিপ্ ‘ভিদিয়াস’ প্রমাণ করে, ওখানে জীবন রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই গর্তের ৭,০০০ হাজার মিটার নিচে জীবন খুঁজে পেয়েছে। এছাড়াও একাধিক প্রমান তারা সংগ্রহ করেছে যার থেকে এটা প্রমানিত, সেখানে একাধিক রহস্যময় প্রাণী বসবাস করে। যাদের মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, অমেরুদন্ডী এবং মলাস্কার মতো প্রাণী এবং রয়েছে অচিহ্নিত প্রচুর প্রাণী। আরো রয়েছে সত্যিকারের রাক্ষস! আমার আপনার জীবনে সময়ের অনেক বেশি দাম থাকলেও সেই স্থান বা সেই স্থানে থাকা প্রাণীদের জীবনে সময়ের কোনো প্রভাই নেই।

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন ফেলা একটি ঘটনা ঘটে। একটি সাবমেরিন মারিয়ানা টেঞ্চের পাশে পৌঁছায়। জেকস্ পিকার্ড নামক বিজ্ঞানী এবং তার সঙ্গী ভয়ংকর একটি চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে। একটি সাবমেরিনের সাহায্যে তারা স্ িলেভেলে থেকে ১,০০০ কি.মি. নিচে যাত্রা করেন। জেকস্ এবং তার সঙ্গী পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর স্থানে ২০ মিনিট থাকেন। কিন্তু সেই ২০ মিনিট তারা যা দেখেছিল তাতে কোনো সন্দেহই থাকে না যে মারিয়ানা ট্রেঞ্চে জীবের অস্তিত্ব আছে। সে গুলি যে শুধু অপরিচিত জীব তাই নয়। তারা ভয়ংকরও! গবেষকরা নরমাল সিলেভেল থেকে ১,০০০ গুণ হাই সিলেভেলে পৌঁছে গিয়েছিল। যেখান কার চাপ পার সেকেন্ড স্কয়ার ৩ টন। যেখানে লোহা অতি সহজে বেঁকে যেতে পারে। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, সেখানকার নরম শরীরের বা অমেরুদন্ডী জীবগুলোর ওপর তার কোনো প্রভাবই পড়েনি। অর্থ্যাৎ সেখানকার জীবদের ওপর সমুদ্রের চাপের কোনো প্রভাবই নেই। স্বভাবিক প্রাণীদের এত চাপে চলাফেরাটাই বিজ্ঞানীদের অবাক করে। বর্তমানেও বিজ্ঞানীরা এটা বুঝতে ব্যর্থ, কী করে ঐ জীবগুলো এত চাপে জীবনযাপন করে চলেছে।

১৯৬০ সালে এই পৃথিবীর সবচেয়ে নিচে লাগানো বিজ্ঞানীদের ডুব পৃথিবীতে সবচেয়ে আলোচিত হওয়ার প্রধান কারণ ছিলনা। তার প্রধান কারণ ছিল তারা কিছু ভংকর দেখেছিল। জেকস্ তার লকবুকে যেটি রেকর্ড করে, সেটি ঠিক এই রকম- “আমরা একটি ভীষণ বড় দানব আকৃতির মূর্তি দেখছি। যেটি সর্ম্পূণ গোলাকৃতির ডিসের মতো। তার শরীরের স্পষ্ট জেল্লা, এই অন্ধকার জগৎ এ ও তার অস্তিত্ব ১০০ শতাংশ প্রকাশ করে। যে আমাদের সাব মেরিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।” এই ঘটনাকে সর্ম্পূণভাবে উপলব্ধি করার আগেই দুর্ভাগ্যবশত সেই অচেনা বস্তুটি কিছু মিনিট পরেই অদৃশ্য হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা এই বস্তুটি কোন প্রাণী তা বুঝতেনা পারলেও, কোনোভাবেই কী বোঝা সম্ভব নয়, সেই দানব বা ভিনকায়ী বস্তুটি কী? সত্যি কথা বলতে বিজ্ঞানীরা আজও এটি প্রমাণ করতে ব্যর্থ, কে ছিল সে? তবে কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে অপ্রমাণিত অবস্থাতেও আপনি হয়তো চিনতে পারবেন সেই অচেনা বস্তুটিকে। কিছু বিজ্ঞানীদের মতে এটি ছিল সামুদ্রিক অচেনা একটি জীব। কিছু ব্যাক্তিরা এমন ধারণা করেন যে এটি ছিল প্রচাীন সামুদ্রিক একটি জীব। প্রাচীন! মানে যার অস্তিত্ব মানুষ টের পেয়েছে আগেও। মানে তাকে হয়ত আমরা চিনতে পারি।

১৯৮৫ সালে আমেরিকার একটি সাবমেরিন যার নাম ‘গ্লোমার চ্যালেঞ্জার’, মারিয়ানা ট্রেঞ্চের ওপর পৌঁছায়। সেই স্থানে হওয়া শব্দের পরিক্ষা করার জন্য। এই ধরনের পরিক্ষার ফলে বিজ্ঞানীরা স্পষ্টত কী ধরনের আওয়াজ সেখানে হয়। তারা এটি বলের আকারে শক্তিশালী ডিভাইসকে যাচাই করা কেবিলের সাহায্যে সমুদ্র পৃষ্ঠের ৯ মিটার গভীরে পৌছায়। কিছুক্ষন পর কেবিলের সাহায্যে বৈজ্ঞানীদের কম্পিউটারে কিছু অদ্ভুদ শব্দ রেকর্ড হতে থাকে বা ধরা পড়তে থাকে। মানে কেউ কেবিলটিকে টানছে। টেনেই যাচ্ছে নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এটি বোঝার সাথে সাথে কেবিলটিকে সাবমেরিনে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ডিভাইসটি কোনোভাবেই উপরে আসছিল না। তাদের কাছে স্পষ্ট হয় যেন শক্তিশালী কেউ ডিভাইসটিকে ধরে রেখেছে। গবেষক দল ৩ ঘন্টা পর এটি বুঝতে পারে ডিভাইসটিকে অচেনা কোনো বস্তু ছেড়ে দিয়েছে। তারপর তারা ডিভাইসটিকে উপরে আনতে সক্ষম হয়। সেই ডিভাইসটিকে সাবমেরিনে আনবার পর যেটি দেখা যায় তা ছিল আরও ভয়ংকর। স্পষ্টত কেবিল এবং ডিভাইসটির ওপর বড় দাঁতের কামড় বা দাগছিল এবং অনেক স্টিল কেবিলও ছিড়ে গিয়েছিল। আপনি হয়ত ভাবতে পাড়েন মারিয়ানা ট্রেঞ্চ চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা একটি স্থান। হয়ত ডিভাইসটি কোনো পাহাড়ে আটকে যায় এবং দাগ পড়ে। কিন্তু বলে রাখি ডিভাইসটি সর্ম্পূণ পরিষ্কার পানিতে ডুবানো হয়েছিল। শুধু তাই নয় যদি ডিভাইসটি কোনো পাহাড়েই ধাক্কা খেত তবে ডিভাইসটির অটোমেটিক এলার্ম বেজে উঠতো। যেমনটা একবারও ঘটে নি। আর যে অদ্ভুদ শব্দ কম্পিউটারে ধরা পড়েছিল তার এক্সপ্লেনেশন এখনও কেউ দিতে পারে নি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা মারিয়ানা ট্রেঞ্চের একটি ভয়ংকর দিক বুঝতে সক্ষম হয়। কেবিলগুলো ছিড়ে যাওয়া এবং ভয়ংকর দাঁতের দাগ অনেক কিছু প্রমাণ করে দিয়ে যায়। আমেরিকা এই অভিযান নিয়ে একটি অফিসিয়াল মন্তব্য করে।
যে মন্তব্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয় বায়োলজিস্টরা। বায়োলজিস্ট এই ঘটনার আরেকটি অবাক করা দিক সামনে আনে। সবকটা গবেষণার তথ্য একসাথে অ্যানালাইজ করে তারা সেই অচেনা বস্তুটিকে অনুমান করতে সক্ষম হয়। সে আর কেউ নয়। মেঘালোডন! এ সার্ক পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শার্ক। যার আয়তন লম্বায় ২২ মিটারের চেয়েও বেশি এবং ওজনে ৫০ টনেরও বেশি। অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের মতে ‘মেঘালোডন’ হাজার হাজার বছর আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু যদি এই রিপোর্টটি কারেক্ট হয় তবে ‘মেঘালোডন’ এই পৃথিবী ছেড়ে কোথাও যায়নি। এবং তার প্রমাণ কিছু বছর পরেই আবার পাওয়া যায়। জাপানিজ ড্রাই কার্গোশিপ্ মারিয়ানা ট্রেঞ্চের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ এই শিপ্টির সামনে একটি বড় ঢেউ চলে আসে। এতটাই বড় ঢেউ ছিল যে জাহাজটি জাম্প করে। কিন্তু জাহাজের সকলেই লক্ষ করে শান্ত সমুদ্রে আর কোথাও ঢেউই নেই। আর কিছু নাবিক লক্ষ্য করে কালো দানব তাদের নিচ থেকে চলে যায়। ভেবে দেখুন সেই ভয়ংকর দৃশ্যের কথা। আর এটি তো খুব রিসেন্ট ঘটনা যখন বিজ্ঞানিরা জেলি ফিস্ নিয়ে গবেষণা করছিল। তারা জেলি ফিস্ কে খুঁজতে খুঁজতে এলিয়েনের মতো দেখতে একটি জেলি ফিস্ দেখে। এর লম্বা লম্বা পাখনা ঝলমল করছিল।

বিজ্ঞানীরা এটি ভিডিও আকারে ক্যাপচার করে। এর নাম ক্রোমোটা। আর এই জেলি ফিসটিকেও বিজ্ঞনীরা খুঁজে পেয়েছে সেই রহস্যময় গর্তের ৩,৭০০ মিটার নিচে। আমরা কল্পনা করি এলিয়েন মানেই সৌরজগৎ, অন্যান্য গ্রহ, ইউনিভাসর্ আরও অনেক কত কী। কিন্তু যদি বলি এলিয়েন আমাদের নিচেই রয়েছে! মাত্র ৫%ই তো আমরা চিনি আমরা সমুদ্রের। বাকি ৯৫% তো আভি বাকি হে মেরে দোস্ত।

তথ্য সূত্র: ইন্টারনেট

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন