Sylhet View 24 PRINT

বাঙালী নিয়ে রামমাধবের ঔদ্ধত্যের থ্রি ডি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-১৭ ১৭:৪২:৪৫

বিপ্লব কুমার পোদ্দার :: রামমাধবের থ্রি ডি এবং অমিত শাহের বাংলাদেশী বহিস্কারের সুস্পষ্ট ঘোষনায় আমার বিগত দিনের শংকাকে সত্য প্রমানিত করলো। রামমাধব বিজেপি’র একজন প্রভাবশালী সাধারন সম্পাদক এবং কূটনৈতিক বিষয়ে অসম্ভব ক্ষমতার অধিকারী একজন ব্যাক্তি। অমিতজি এখন ভারতের দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী ব্যাক্তি বললেও বোধহয় ভূল হবে না। এবার একটু থ্রি ডি সম্পর্কে খুলে বলা যাক। যা হলো, ডিটেকট, ডিলিট এবং ডির্পোট। যা, রামমাধবের তরফে বলা হয়েছে, আসামের বাঙালী বিতাড়নের বিষয়ে। অন্যদিকে অমিতজি সুস্পষ্টভাবেই বাঙালী বিতাড়নের বিষয়টা শুধুমাত্র আসামে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা ভারতব্যাপী এই প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। এখানে আমার একটু প্রশ্ন থেকেই যায় বিজেপি’র কাছে। আপনারা নির্দিষ্ট করে বলেছেন, অবৈধ বাঙালীর বিষয়। তার মানে কি আমি ধরে নিতে পারি বাঙালী বাদে অন্য কোন জাতি যদি ভারতে প্রবেশ করে তাহলে তাদেরকে সু-স্বাগতম। কারন তারা অবাঙালী।

এবার একটু ফিরে যাই মোদিজীর আশ্বাসের দিকে। যেখানে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে যে এনআরসি’র বিষয়টি ভারতের একান্তই অভ্যন্তরীন। এটা নিয়ে আপনাকে অথবা বাংলাদেশকে কোনরকম আশংকিত হবার কারন নেই। এখানে আমার বিনীতভাবে জানবার থাকে, তাহলে কে এবিষয়ে অসত্য বলছেন ? একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, মাধবজি এবং শাহজি অসত্য বলেছেন অথবা মোদিজি অসত্য বলেছেন। আর যে পক্ষই অসত্য বলবেন, তাদের কিন্তু, ক্ষমতায় বা পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছেন।

প্রসংগত, কিছুদিন আগে বুলগেরিয়ার ১৭ জন যাত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হবার কারনে তিনজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। এখানে কিন্তু শুধু ১৭ জন নয়, ১৭০০ ও নয়, ১৭ হাজার নয়। সতের লক্ষও নয়। বিষয়টি হলো, কয়েক মিলিয়ন বাঙালীকে নিয়ে। আজ না হয় এ বিচারের ভার তুলে দিলাম ভারতের বিচার বিভাগের অন্তত একজন পক্ষপাতহীন বিচারকের কাছে। যারা অন্তত কোন শিশু, যুবক যুবতী অথবা বৃদ্ধর জীবনহানির শংকা থেকে একটি স্ব-প্রনোদিত রায় দিয়ে বিষয়টির ন্যায্য সুরাহা করতে পারেন। বিচার বিভাগ যদি আগ্রহ না দেখান তাহলে ভারতের জনতার আদালতেই আমার দরখাস্ত উপস্থাপন করছি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অভিবাসী হওয়া ভারতীয়র সংখ্যা কিন্তু কম নয়। সে সংখ্যাটা কিন্তু, আসামে রাষ্ট্রীয় বিড়াতনের পরিকল্পনায় থাকা বাঙালীদের চেয়ে অনেক গুন বেশি। বিচারের পূর্বে বাঙালীদের অবদানের কথাও মাথায় রাখলে বিচার কাজ তার ন্যায্যতা পাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

এনআরসির বাদ পড়া বাঙালীর অনেকেই  কিন্তু, সেনা, বিমানবাহিনী অথবা সরকারের উচ্চপর্যায়ে তাদের জীবন যৌবন কাটিয়েছেন। এমনকি কর্মক্ষেত্রে শহীদের মর্যাদা লাভ করেছেন। তাই আপনাদের বিচারের রায় শোনার অধীর আগ্রহে রইলাম।

এবার ফিরে আসি, বাংলাদেশের সাস্প্রতিক গরম রাজনীতিতে খালেদা হাসিনার প্রতিযোগীতা এবং তৎসঙ্গে নতুন ধারা এবং নতুন তত্ব নিয়ে হাইব্রিড অংশের উদ্দেশ্যমূলক নানা উপস্থিতি। অতীব দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, সরকার অথবা দেশের আসল বিরোধীদল বা হাইব্রিড তৃতীয় ধারা থেকে ভারতে বাঙালী বিতাড়নের বিষয়ে কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখালেন না।

আপনারা সবাই  রাষ্ট্র চালাতে চাইছেন, বা চালাচ্ছেন। কিন্তু, সে রাষ্ট্রের ভবিষ্যত অথবা তার জাতির নিরাপত্তা নিয়ে কী অবলীলায় নিরুদ্বেগ আপনারা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে, আমার অনুরোধ বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে শাহ, মাধবদের বক্তব্য সম্পর্কে কৈফিয়ত চাওয়া। কারন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব সংহত থাকলে, আপনাদের রাজনীতিও থাকবে। সে সরকারী দল বা বিরোধী দল হিসেবেই হোক।

দুই

হঠাৎ করেই দেশের রাজনীতির আকাশ ঘন ঘন রং বদলাচ্ছে। যখন, বিএনপি মহাসচিব জাতিসংঘে যান, তখন সরকারী দল তটস্থ হয়ে অকারনে কিছু অরাজনৈতিক ভাষা প্রয়োগ করে রাজনীতির শিষ্টাচারকে নিম্নমুখী করেন। আবার অন্যদিকে, দেশের আসল বিরোধীদল মনে করেন, দেশ থেকে নয়, বিদেশী সাহায্যে দেশের মধ্যে সুষ্ঠ নির্বাচন নিশ্চিত করবেন। উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করি, সবাই সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন চান, কিন্তু, কেউ গনতান্ত্রিক হতে চান না। কারন, বাংলাদেশের কোন দল বাস্তবিক অর্থেই দলের ভেতরে গনতন্ত্র চর্চা করেন কিনা তা দৃশ্যমান নয়। তাই শুধু সমস্যা তুলে ধরে লেখাটিকে পঠিতব্য করবার কোন ইচ্ছা আমার নেই। এই অস্থির অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। যেটা হতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের মাধ্যমে সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব। যা হয়ে থাকে সংরক্ষিত আসনের ক্ষেত্রে। অথবা ব্যালটে না ভোটের সংযোজন। যদি না ভোটের সংখ্যা বেশি হয় তাহলে সেখানে প্রার্থী পরিবর্তন বাধ্যতামূলক করে নতুন প্রার্থীর মাধ্যমে নতুন নির্বাচন করা।

সবেশেষে, প্রত্যাশা অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দিয়ে দুই নেত্রীর সরাসরি আলোচনা শুরু করা। তাহলে দেখবেন কোন মেঘই বাংলাদেশের গনতন্ত্রের আকাশকে ম্লান করে দিতে পারবে না।

লেখকঃ লন্ডনবাসী আইনজীবী সমাজকর্মী
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮/বিকুপো/ইআ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.