Sylhet View 24 PRINT

কামাল হোসেনই বিএনপির শেষ ভরসা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-২২ ১০:৩০:৪২

সুজাত মনসুর:: ২০০৬ সালে বিচারপতি হাসানের বয়স বাড়িয়েও যখন বিএনপি জনতার প্রতিরোধের মুখে তাদের ইচ্ছেমত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে ব‍্যর্থ হয়, তখন সম্পুর্নভাবে স়ংবিধান বহির্ভূত একটি তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। যার প্রধান করা হয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে। যাকে অনেকেই ঠাট্টা করে ইয়েসউদ্দিনও বলে থাকেন। তিনি নাকি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশনা ছাড়া কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারতেন না। অথবা অন‍্যভাবেও বলা যায় তার নিজের ইচ্ছেয় কোন সিদ্ধান্ত নেবার সাহসই ছিল না। তাকে যখন নিয়োগ দেয়া হয় তখন নাকি বলেই দেয়া হয়েছিল উল্টাপাল্টা করলে ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পরিণতি ভোগ করতে হবে। রাষ্ট্রপতির পদ অপসারণ এবং পরবর্তীতে রেললাইনের ওপর দিয়ে ম‍্যারাথন। বিএনপি-জামাতের দুঃশাসন ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নানা ষড়যন্ত্র জনগণকে এতোই ক্ষুব্ধ ও বিষিয়ে তুলেছিল যে, ইয়াজউদ্দিন ও তার তাঁবেদারদের দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। প্রথমে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও পরবর্তীতে জনরায়ে প্রত‍্যাখাত হয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার স্বপ্নসাধ ধুলিসাৎ।

জনরায়ে প্রত‍্যাখাত হয়েও বিএনপির বোধোদয় হয়নি। ষড়যন্ত্রের পথকেই ক্ষমতায় ফিরে আসার একমাত্র ও সঠিক পথ বলে আঁকড়ে ধরে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তাদের জন্য ও বেড়ে ওঠাই তো শতভাগ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার মাসখানেকের মধ্যে তাদের মদদ ও পরিকল্পনায় সংঘটিত হয় বিডিআর বিদ্রোহ। উদ্দেশ্য বিডিআরদের ন‍্যায‍্য দাবি আদায়ের আড়ালে সরকার উৎখাতের অভিলাষ চরিতার্থ করা। এই বিদ্রোহের পুর্বাপর জনমালের ক্ষয়ক্ষতি কমবেশি সবারই জানা। এরপরের কাহিনী হেফাজত আন্দোলন, পেট্রোল বোমা নির্ভর নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টা, চান্দে সাঈদী, সিনহাকে দিয়ে জুডিশিয়াল ক‍্যুর চেষ্টা, কোটা আন্দোলন ও সর্বশেষ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের 'নিরাপদ সড়ক' আন্দোলনের ওপর ভর করে সরকার পতনের অলআউট চেষ্টা।

১/১১-এর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ, মাইনাস টু ফর্মুলার অন্তরালে মূলত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্রসহ এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাতের সকল ষড়যন্ত্র ও প্রচেষ্টার সাথে যেসব ব‍্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া যুক্ত বলে সন্দেহ করা হয় ড.কামাল হোসেন হলেন অন‍্যতম। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার রহস্যজনক ভূমিকা ও বক্তব্য এ সন্দেহকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। ইদানিং তিনি বেশ জোরেশোরে ও প্রকাশ‍্যেই বিএনপি ও তারেক রহমানের সুরে কথা বলছেন এবং জাতীয় ঐক‍্যের চুয়ান্নের যুক্তফ্রন্ট স্টাইলে বিএনপি ও অন‍্যান‍্য দল বা জোটকে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেয়া। যদিও তারা বলছেন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি আদায় করেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা বিএনপি ও কামাল হোসেনরা শেখ হাসিনার অধীনে বর্তমান সিস্টেমেই নির্বাচনে অংশ নেবে। ৫ই জানুয়ারির (২০১৪) নির্বাচন বর্জনের মতো বোকামি আর করবেন না। তারা ভালো করেই জানেন নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা বিএনপির যেমন নেই উনাদেরও নেই। তাছাড়া এবার নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের সবার নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে অটোমেটিক। তারপরও হম্বিতম্বি করে, বিদেশী সুহৃদদের কাজে লাগিয়ে কিছু সুযোগ সুবিধা আদায় করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে ক্ষতি তো নেই কি বলেন?

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি হঠাৎ করে ড. কামাল হোসেনদের মত জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের ওপর ভরসা করতে শুরু করলো কেন? প্রশ্নের উত্তর অত‍্যন্ত সহজ সরল। প্রথমত-তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। টার্গেটও অভিন্ন। যেভাবেই হউক শেখ হাসিনার সরকারের পতন। দ্বিতীয়ত-খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিহীন নির্বাচনে অংশ নিতে হলে তাদের এমন একজন ব‍্যক্তিকে সামনে নিয়ে অগ্রসর হতে হলে সেই ব‍্যক্তির জনসম্পৃক্ততা থাক বা না থাক অন্তত বিদেশি প্রভুদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। কেননা, তারা এখনো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে বিদেশী, বিশেষ করে আমেরিকা চাইলে তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিতে পারবে। তাই তো তারা প্রায়ই বিদেশি কূটনীতিকদের দাওয়াত দিয়ে এনে শুধুই নালিশ করে। এমনকি সম্প্রতি ফখর মির্জার জাতিসংঘে ছুটে যাওয়া ও এ নিয়ে মিথ্যাচার দলটির চরম রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। দূর্জনেরা বলে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় ডিনারের নামে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক সেই প্রক্রিয়ারই অংশ। উল্লেখ্য, তারেকও কিন্তু বিএনপির বিদেশি মিত্রদের নিকট গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব নয়।

বিএনপি গত এক দশকে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে এমন কিছু মারাত্মক ফাউল গেম খেলেছে যে, তারা এখন সত্যিকার অর্থেই একটি রাজনৈতিক দেউলিয়া দল। এছাড়া এতিমের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার কারাগার থেকে মুক্তি ও নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ার কারণে এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিতভাবে অসম্ভব হবার কারণে তাদের দেউলিয়া দশা চরম আকার ধারণ করেছে। এখন তাদের অবস্থা জলে ডোবা মানুষের মত। বাঁচার জন্য যা পাচ্ছে তাই আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে। এমনকি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ওপর ভর করতেও দ্বিধা করেনি।

এদিকে কামাল হোসেন গংরাও বিএনপির এই দেউলিয়া দশার সুযোগ নিতে চান। শত্রুর শত্রু মিত্র তরিকা খারাপ না এই তরিকার সফলতা শতভাগ প্রশ্নবিদ্ধ এবং পরিণতি অত‍্যন্ত ভয়াবহ তাদের জন্য যারা এই খেলায় অংশ নিচ্ছে। তারা হয়তো ভুলে যাচ্ছেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এখন আর সেই পর্যায়ে নেই। এটা আশির দশক নয়। খেলারামরা ১/১১-এর সময় ফাউল গেম খেলে যে শিক্ষা পেয়েছে খুব সহজে এ পথে আর পা বাড়াবে বলে মনে করা বোকামি বৈঠক কিছু নয়।

সর্বশেষ খবর হচ্ছে বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নিকট নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছে। এমনকি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি কামাল হোসেন দাবিগুলোর সাথে যুক্ত করবেন কিনা তা সহ সকল ধরনের কর্মসূচি প্রনয়নের একক দায়িত্ব বিএনপি তার ওপর অর্পণ করেছে। এককথায় বলা যায় কামাল হোসেনই বিএনপির সর্বশেষ ইমাম। এখন যদি কামাল হোসেন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি না করেন অথবা ১০ই অক্টোবর ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেকসহ অন্যান্যদের যদি সাজা হয় এবং কামাল হোসেন যদি সেক্ষেত্রেও নিরব থাকেন তাহলেও বিএনপি তার নেতৃত্ব মেনে নেয়া চাওয়া গত‍্যন্তর নেই। জামায়াতের বিষয়টি তো রয়েই গেল। অন‍্যদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি, গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষে যদি কামাল হোসেন অবস্থান নেন এবং জামায়াতের বিষয়টি সুরাহা না করেই বিএনপির সাথে ঐক‍্য করেন তাহলে কামাল হোসেনদের সামান্যতম নীতিবোধও যদি অবশিষ্ট থেকে থাকে, তাহলে তাও নিঃশেষ হয়ে যাবে। সুতরাং এ সিদ্ধান্তে আসাই যায় বিএনপি ও কামাল হোসেনরা এখন মাইনক‍্যার চিপায়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২সেপ্টম্বর২০১৮/ডেস্ক/আআ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.