সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-০৯ ১৭:২৮:০০
লেখক
মুনজের অাহমদ চৌধুরী : বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন চলে গেছে মিয়ানমারের রাষ্ট্র ম্যাপে, অার বাংলাদেশের শাষকরা ব্যস্ত ক্ষমতা ধরে রাখবার কুটকৌশলে। অার বাংলাদেশের কুটনীতি? উনারা সবিনয়ে মিনমিনে গলায় যথাযথ প্রতিবাদ জানিয়েছেন!
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) সোমবার ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগে একইসঙ্গে ৫২ শিক্ষক বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
কুমিল্লায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় সোমবার ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন শাকিলকে হাতুড়িপেটা করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক। প্রথম অালোর মঙ্গলবারের খবর অনুযায়ী, একটি মামলায় সাক্ষী দিতে যাওয়ার সময় বাস থেকে নামিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগেরই আরেক পক্ষকে দায়ী করছে।
সভ্য সমাজ ব্যবস্থায় খুনের বিচার চাইতে হয় না। কিন্তু, অসভ্য সমাজ ব্যবস্থাতেও বিচার চাইবার জায়গা প্রায়ই থাকে।সন্ত্রাস, হত্যা, ক্ষমতার নামে অন্যায়কে অাইনের নামে অনাচারের খুব করে বিচার দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু, কার কাকে বিচার চাইব? ন্যায়হীন বিচারক, ন্যায়হীন সরকারের কাছে?
অাওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা সম্প্রতি এক সভায়, " শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার " শ্লোগান দিচ্ছেন। কিন্তু, সমাবেশে উপস্থিত দলটির সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমন শ্লোগানের জবাবে বলেছেন, " না শেখ হাসিনাকে বার বার চাই না, অার একবার চাই। অার একবার এলে দেখা যাবে। "
অামাদের সাংবাদিক সমাজের নেতারা এখনো বহুল অালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা অাইন গভীর ভাবে খতিয়ে দেখছেন। অার তাদের বাস্তবতার খাতিরে জেগে ঘুমানোর সময়ে অাজ মঙ্গলবার থেকে অাইনটি কার্যকর হয়েছে। অাইনের কোন ধারায় কখন যে কাকে ফেলা হয়, বলা মুশকিল। দেশে এখন অনাচারের প্রতিবাদকারী মাত্রই যুদ্ধাপরাধের সমার্থক, রাজাকার।
তবে, ডিজিটাল অাইনটির কিছু সাংঘর্ষিক ধারার সংশোধন চেয়ে সাংবাদিকদের সর্বপ্রথম প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল লন্ডনে। সে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলাম। ফিরবার সময়, লন্ডনের পরিচিত এক অাওয়ামীলীগ নেতা বলছিলেন, ভাই, অাওয়ামীলীগ যখন বিরোধী দলে যাবে তখন তারাই অাইনটার ফাদেঁ অাটকাবে। এখন, অাইনটি পাশের পর সাংবাদিকতা এখন বোধকরি রোমান্টিক যুগে প্রবেশ করবে! অামরা এখন কবি যা বলবেন, ততটুকু লিখব। কবিতার ভাষায় গরু রচনা লিখব। কবির দায়িত্বশীলরা নিউজগুলো এডিট করবেন, উচ্চতর কবি পত্রিকার মেকাপ, অার নিউজরুমের স্ক্রীপ্ট একটু দেখে দেবেন। দেশের সাংবাদিকতা এতে করে দায়িত্বশীল হবে! সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ফ্ল্যাট পাবেন, কেউ মনোনয়ন। দেশের গনতন্ত্র যেভাবে এগুচ্ছে সে গতিতেই এগুবে গনমাধ্যম!
এর মধ্যেও ব্যাতিক্রমী একটি খবর অাছে। বাংলা ট্রিবিউনের রির্পোটে পড়লাম, রাগ বা গোসসা কমাতে ঢাকার ওসমানী উদ্যানে তৈরি হচ্ছে একটি অত্যাধুনিক পার্ক। সেখানে একঘেয়েমি আর অবসাদ কাটানোর নানা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এই পার্কের নামকরন হয়েছে, ‘গোসসা নিবারণী পার্ক’।
গোসসা নিবারনী পার্ক উদ্বিগ্ন জনগনকে অানন্দিত করবে, এটাও ক্ষমতার উদ্বাবনী প্রতিভার বিরাট এক নজিরবিহীন নজীর।
দেশের রসিক রাষ্ট্রপতি অবশ্য সমাবর্তনে-সমাবর্তনে রসাত্বক বক্তব্যে ছাত্রসমাজকে অানন্দিত করবার প্রয়াস রেখে চলেছেন। তবে বিচক্ষন এ বর্ষীয়ান রাজনীতিক অাসলে অামাদের রাজনীতির দৈন্যতার কথাই তার বক্তব্যে তুলে ধরেছেন।
ক্ষমতার কামড়ে ক্ষত-বিক্ষত হওয়া প্রতিবাদী তারুন্য, প্রজন্মই একদিন অাসলেই দেশটাকে বদলাবে। হয়ত, বাংলাদেশে বানরও লজ্জিত হবে একদিন বাংলাদেশের একসময়ের রাজনীতিকদের ক্ষমতার জন্য চাটা-চাটি, গাছবাওয়া-বাওয়ির গল্প শুনে। একদিন হয়তো বাংলাদেশেই বিদেশী কোন অক্টোপাস লজ্জিত হবে বাংলাদেশের অাজকের রাজনীতির ক্ষমতাজীবি প্রানীদের অক্টোপাসের মতো ক্ষমতাকে জড়িয়ে রাখবার প্রবনতার কথা মনে করে। একদিন হয়ত দেশটা অাসলেই বদলাবে। হয়ত সেদিন ক্ষমতার জন্য বিরোধীদল হুমকি হুমকি খেলবে না। বাঘা নামের ছালপড়া শারমেয়, ভাইবার মান্নারা সেদিন অার জোট-জোট খেলতে পারবে না ভোটের মাঠে জনগনকে নিয়ে। সেদিন দেশে অাসলেই ভোটাধিকারের সৌন্দর্য ফিরে অাসবে। তখন অার রাষ্ট্রের প্রধান বিচারালয়ের প্রধান বিচারকের বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেংকারী বা জোর করে তাকে দেশত্যাগ করার অভিযোগ উঠবে না। একদিন হয়ত, মন্ত্রীরা অার জনগনের সাথে রুটিন করে মিথ্যে বলবেন না। তখন হয়ত ক্ষমতা অার কোটার মতো তারুন্যের জরুরী ইস্যুতে দুটি পক্ষের প্রতি দু-রকম অাচরন করবে না। সেদিন বেকাররা ডিগ্রি শেষে ঘুষ ছাড়াই চাকুরী পাবে। একদিন হয়ত বাংলাদেশের কোন প্রধানমন্ত্রীর চাটুকার সুবিধাভোগীদের নোবেল প্রাইজের নামে লবিং করে অার অাগের মতো অাশাহত হতে হবে না। বাংলাদেশের তখনকার গনতান্ত্রিক কোন একটি রাজনৈতিক দলের মানবিক প্রধানমন্ত্রীর কর্মের কারনে 'রাষ্ট্র পরিচালনা, সু-শাষন ও পরমত সহিষ্ণুতা রাষ্ট্র' হিসেবে যৌথভাবে অামাদের অাগামীর কোন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেশ হিসেবে বাংলাদেশও পুরস্কার পাবে।
দৃশ্যমান বাস্তবতা অবশ্য এমন কোন প্রত্যাশা করবার অবকাশ দেয় না। তবু মধ্যবিত্তের অাশা হারালে অার কী-ই বা থাকে অার থাকবার। দেশটা একদিন বদলাবে, অর্থবহ ইতিবাচক একটি পরিবর্তন স্থায়ীত্ব এবং ধারাবাহিকতা পাবে। সময়ের সময় হবার অপেক্ষায় থাকি।
লেখক: সাংবাদিক, সদস্য- রাইটার্স গ্রীল্ড অব গ্রেট ব্রিটেন।