আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং
মুনজের অাহমদ চৌধুরী :: দেশের ক্রিকেটকেও শেষবধি রাজনীতির প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হল। মাশরাফি বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। সামনের বছর বিশ্বকাপ। ক্রিকেট বোর্ডের সাথে চুক্তি চলমান তাঁর।
নিকট অাগামীর সংসদ সদস্য মাশরাফির সাথে বোর্ডের সম্পর্ক প্রটোকলজনিত জটিলতায় পড়বার শংকা থেকেই যায়। দল-দলীয় রাজনীতি করবার অধিকার সবারই অাছে। সুযোগ অাছে ক্রিকেটের মাধ্যমে অর্জিত জনপ্রিয়তাকে রাজনীতিতে ক্যাশ করবার। অন্তত জাতীয় ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে তিনি যদি রাজনীতিতে অভিষিক্ত হতেন, সেটা কি অারো দায়িত্বশীল হতো না? কেননা, ক্রিকেটই তো তাকে তারকা বানিয়েছে। অার এমপি নির্বাচিত হবার অাগে-পরে এখন যদি তিনি ক্রিকেট থেকে অবসর নেন, তা হবে রাজনীতির জন্য ক্রিকেটকে বিদায় জানানো। এবং এতে করে যে ক্রিকেট তাকে কোটি মানুষের তারকা বানিয়েছিল, সে ক্রিকেটকেই প্রকারান্তরে অবজ্ঞা করা হল না? তাতে করে কি অাশাহত ও বঞ্চিত করা হল না ক্রিকেটমোদী পুরো দেশবাসীকে।
অন্তত ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হিসেবে, মাঠে নেতৃত্বের গুনে মাশরাফির বিকল্প কি দেশে এ মুহুর্তে অাছেন ? দেশের ক্রিকেটকে মাঠে থেকে দেবার মতো কি কিছুই অবশিষ্ট ছিল না তার?
দেশের রাজনীতিবিদদের উপর মানুষ অনেকাংশে অাস্থা হারালেও মাশরাফিদের প্রতি অাস্থা পুরো দেশবাসীর। এখন রাজনীতি দ্বারা বিভাজিত এই দেশে মাশরাফি নিজের জনপ্রিয়তা কতটা ধরে রাখতে পারেন, তা সময়ই বলে দেবে। দেশে ব্যাবসায়ী, পেশাজীবি, কালোবাজারী, সন্ত্রাসী সবাই যদি রাজনীতিতে নামতে পারেন তবে মাশরাফির অাসাটা অবশ্যই দোষের নয়। বরং একজন ভালো মনের মানুষ হিসেবে তাকে স্বাগত জানাই।
কিন্তু, মনে রাখতে হবে, ক্রিকেট অনুরাগী বাংলাদেশের কোটি জনতা মাশরাফিকে, মাশরাফিদের নিজেদের হৃদয়ের ভালবাসার মাপকাঠিতে অনন্য এক উচ্চতায় পৌছেঁ দিয়েছিলেন। ক্রিকেট ছাড়া অার কোন কিছুই এখন বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করবার ক্ষমতা হারিয়েছে। ক্রিকেটের শুধু দেশকে ঐক্যবদ্ধ করবার ক্ষমতা এখনো অাছে।
সেই সময়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার রাজনীতিতে একটি দলের মনোনয়নপত্র কিনলেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষদের তালিকায় তাঁর নাম শীর্ষস্থানে। ক্রিকেটের মাধ্যমে তিনি এ জায়গাটা করে নিয়েছেন। ক্রিকেট তাকে সব দল অার মতের কোটি মানুষের শ্রদ্ধা অার ভালবাসা অর্জন করবার পথটুকু দিয়েছে। সে ক্রিকেটের ক্যারিয়ার অসমাপ্ত রেখেই ক্রনিক ইনজুরিতে ভোগা মাশরাফি অভিষিক্ত হলেন রাজনীতিতে।
এ অভিষেক, দেশের তারুন্যকে, মাশরাফির ভক্তদের একটি তাৎক্ষনিক বার্তা দিয়েছে। সেটি হলো, দেশের সব মানুষের ভালবাসার শ্রদ্ধার জায়গাটুকুর চেয়েও একটি দলের মনোনয়নে একজন এমপি হওয়া বেশি দরকারী! দেশের অাপামর জনগনের ভালবাসার চেয়ে রাজনীতির ক্ষমতার মোহ কি এখানে অাপাত জয়ী হল না?
তবে মাশরাফির অাওয়ামীলীগে অানুষ্টানিক যোগদানে অাওয়ামী লীগ ১-০ গোলে এগিয়ে গেল। কারন দেশের ক্রিকেট পাগল মানুষ মাশরাফিকে ই সবচেয়ে বড় ক্রীড়া তারকা বানিয়েছে গত এক দশকে। নিঃসন্দেহে তিনি দেশের এ সময়ের সবচেয়ে বড় তারকা। শুভকামনা তার জন্য।
লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক।