আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

বিশ্বকবির পর বিদ্রোহী কবি নজরুলের ম্যুরালও স্থাপন করবেন মেয়র আরিফ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১১-১১ ২৩:৫৭:৩২

ছবি: লেখক

এনামুল কবীর :: রবীন্দ্রনাথের পর নজরুল। শ্রীভূমি সিলেটে যেমন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন, তেমনি এসেছিলেন বাংলা সাহিত্যের আরেক দিকপাল, যৌবনের কবি, বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামও। বিশ্বকবি এসেছিলেন নজরুলের প্রায় ৭ বছর আগে। তবে তিনি একবার এলেও পূণ্যভ‚মিতে বিদ্রোহী কবি এসেছিলেন দুইবার।

বিশ্বকবির সিলেট আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে ইতিমধ্যে নগরীর মাছিমপুরস্থ মনিপুরী রাজবাড়িতে তাঁর একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে। এখন নজরুলের সফরকেও স্মরনীয় করে রাখতে উদ্যোগী হয়েছেন মেয়র। কবি যেসব স্থানে অবস্থান করেছিলেন সেসব স্থান চিহ্নিত করা হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নজরুলেরও একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হবে বলে ঘোষনা দিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

সিলেটকে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলার অংশ হিসাবে নগরীর ঐতিহ্যমন্ডিত স্থানগুলো সংরক্ষণ ও স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন করতে চায় সিলেট সিটি কর্পোরেশন। তাঁরই অংশ হিসাবে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত স্থান মাছিমপুর মনিপুরী রাজবাড়িতে একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ঠিক ছয় মাস পর, চলতি বছরের ৫ জুন তিনিই এই ম্যুরাল উন্মোচন করেন। জানা গেছে, কবি গুরু ১৯১৯ সালে এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করতে সিলেট এসেছিলেন। সফরের এক পর্যায়ে ঐ বছরের ৬ নভেম্বর তিনি মাছিমপুরস্থ মনিপুরী রাজবাড়িতে গিয়েছিলেন। তখন কবি বলতে গেলে প্রায় বৃদ্ধ। বয়স ৫৮ বছরের মতো।

মনিপুরী রাজবাড়িতে তিনি বিখ্যাত রাসনৃত্য উপভোগ করেন। এই নাচ দেখে বিশ্বকবি এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি পরবর্তীতে নৃত্যগুরু নীলেশ্বর মুখার্জীকে এই নাচের প্রশিক্ষক হিসাবে শান্তিনিকেতনে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপরই রাসনৃত্য বিশ্ববিখ্যাত হয়ে উঠে। বিশ্বকবির মতো প্রায় বৃদ্ধ বয়সে নয়, প্রেম ও বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম যৌবনের টগবগে দিনেই এসেছিলেন সিলেটে। তাও একবার নয়, দুইবার। প্রথমবার এসেছিলেন ১৯২৬ সালে। আর শেষবার এসেছিলেন ১৯২৮ সালে।

কবির প্রথম সফর তেমন আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেনি। ১৯৬১ সালে সিলেটে মুসিলম সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে নজরুল সাহিত্য সম্মেলণের আয়োজন করা হয়েছিল। এ উপলক্ষে প্রকাশিত ‘আল-ইসলাহ’ নজরুল সংখ্যায় দেওয়ান একলিমুর রেজার প্রবন্ধে জানা যায়, তখন কবি উঠেছিলেন নগরীর খাজাঞ্চি বাড়ির গোবিন্দ মজুমদারের বাড়িতে। তবে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তার আর সিলেট থাকা হয়নি। অসুস্থ অবস্থায় কলকাতা ফিরে গিয়েছিলেন। এর দুই বছর পর তিনি আবার সিলেট সফরে আসেন।

তাঁর এই সফরের সময় সিলেটজুড়ে ব্যাপক সাঁড়া পড়ে। আসাম প্রাদেশিক স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে যোগদিতে সেবার কবির সফরসঙ্গি হিসাবে ছিলেন, শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, শিক্ষাবিদ ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ। তখন সিলেটের সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’ সম্পাদক ছিলেন মকবুল হোসেন চৌধুরী। কবি নজরুল কে নিয়ে আসা হয় মকবুল হোসেন চৌধুরীর দরগামহল্লাস্থ ভাড়াটে বাসা ‘ভাদেশ্বর লজে’।

 জানা যায়, সেবার কবি সিলেটে একমাস অবস্থান করেছিলেন এবং আবৃত্তি-গান আর হইচই দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন ভক্ত অনুরাগীদের। নজরুল অনুরাগীদের জন্য দারুন সুখবর দিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে চিহ্নিত করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নজরুলের আবক্ষমূর্তিও স্থাপন করা হবে।

রবীন্দ্রনাথের সিলেট আগমনের ৯৯ বছরপুর্তি উপলক্ষে আয়োজিত মাছিমপুরস্থ মনিপুরি রাজবাড়ীতে আয়োজিত উৎসবে সম্প্রতি তিনি এমন ঘোষণা দেন। পরে উপস্থিত সুধিজনের সাথে আলাপকালেও সিলেটের মেয়র বলেন- রবীন্দ্র-নজরুল বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতিক অঙ্গনের দুই দিকপাল। তাঁরা সিলেট এসেছিলেন এটি আমাদের জন্য গৌরবের। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তাদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো চিহ্নিত করা জরুরী। তাছাড়া সিলেট একটি পর্যটন নগরী। এখানে বেড়াতে আসা রবীন্দ্র-নজরুল ভক্তদের জন্য তাদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো ভ্রমনও হয়ে উঠবে আকর্ষনীয়। মেয়র বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যা যা করার দরকার, আমরা তাই করতে প্রস্তুত।

তিনি সবার সাথে আলোচনা করে নজরুলের ম্যুরাল স্থাপনের কথা ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে তিনি তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য সিলেট সর্বস্থরের কবি সাহিত্যিক সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন। মেয়রের এমন বক্তব্য উপস্থিত সুধিবৃন্দ তুমুল করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানান এবং দ্রুত কাজটি শুরু করার প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন।

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন