আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

একজন তৌফিক রহমান ও তার কর্ম

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১১-১৩ ২২:৩৩:০৪

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী, ১৯৫৪ সালের ১৩ই ডিসেম্বর সিলেটের তৎকালীন বালাগঞ্জ (বর্তমানে ওসমানীনগর) থানার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তবে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী  তাঁর জন্ম তারিখ ২৫শে মার্চ ১৯৫৫। তাঁর বাবা জনাব মুজিবুর রহমান চৌধুরী এবং মাতা মিসেস রুকিয়া খানম চৌধুরী। তাঁর সহধর্মিনী নজিফা খানম চৌধুরী (মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এর প্রাক্তন পরিচালক)।

তাঁদের একমাত্র সন্তান তানভীর এম ও রহমান চৌধুরী লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির একজন গ্র্যাজুয়েট এবং বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। তানভীর মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট এর ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড-এর একজন উদ্যোক্তা এবং ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিংস লিমিটেড (এনসিআর)-এর একজন উদ্যোক্তা পরিচালক। তিনি যুক্তরাজ্যের মূলধারার রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

ড. তৌফিক রহমান চৌধুরীরএকমাত্র পৌত্র তাসিন রহমান চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাজ্যের একটি স্কুলে পড়ালেখা করছে। তাঁর পুত্রবধু জান্নাতুল ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বেডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু ও পরিবার স্বাস্থ্য নিয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত।

ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী দি এইডেড হাই স্কুল, সিলেট থেকে ১৯৭০ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এবং এমসি কলেজ, সিলেট থেকে ১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে অর্থনীতিতে অনার্স ও ১৯৭৬ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন এবং ২০০৪ সালে উন্নয়ন অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর বেশ কিছু প্রবন্ধ বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত ও বিভিন্ন সেমিনার/ কনফারেন্সে উপস্থাপিত হয়েছে। তাঁর গ্রন্থ ’Bangladesh in Perspectives- The Political Economy of Corruption’ অর্থনীতিবিদ ও বোদ্ধামহলে বহুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। পেশাদারিত্বে উৎকর্ষ সাধনের জন্য তিনি PGDM (Post Graduate Diploma in Management) এবং ব্যাংকিং ডিপ্লোমা DAIBB (Diplomaed Associate of the Institute of Bankers, Bangladesh) ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি প্রায় বিশ বছর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে উচ্চপদে সুনামের সাথে চাকরি করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই সোনালী ব্যাংক এ সিনিয়র অফিসার হিসেবে ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ন্যাশনাল ব্যাংক লি. ও প্রাইম ব্যাংক লি. এ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করে (সর্বশেষ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে) চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। তিনি জীবনের কোনও পর্যায়েই কোনও ধরনের অনিয়ম বা মামলায় জড়িত হননি।

তিনি স্কুলের ছাত্রাবস্থায় প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৬৯-র গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর সিআর দত্ত (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল), কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা শাহ মুদাব্বির আলী এবং ছাত্রনেতা আখতার আহমেদ প্রমুখদের সাথে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বর্তমান গ্রামের বাড়িতে মেজর সিআর দত্ত ও তাঁর সহযোদ্ধারা ক্যাম্প স্থাপনের পাশাপাশি যুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করেন। তাঁর চাচা শফিকুর রহমান চৌধুরী বালাগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ছিলেন। তাঁর পিতা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য দেশে এবং বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন।

তাঁর পুরো পরিবার ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী এমসি কলেজ, সিলেট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে গ্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হন। ১৯৭৫ সালের প্রথম দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাকশাল গঠিত হলে জনাব তৌফিক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তৎকালীন বাকশাল এর ছাত্র শাখায় কর্মী হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৯-৮০ সালে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৯৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জনাব আব্দুল জলিল এর সাথে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আরো ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হন। জনাব আব্দুল জলিল এর সাথে ১৯৯৯ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। জনাব আব্দুল জলিল ২০০০-২০০১ পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রী থাকাকালে ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে কোষাধ্যক্ষ মনোনীত হন। ২০০৫ সালে তিনি পুনরায় জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মনোনীত হন এবং অদ্যাবধি তাঁর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচিতে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন।

তিনি ২০০৩ সালে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় মু৩িযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীল ভাবনা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার এক আদর্শ কেন্দ্র হিসেবে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে যা জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের আর্থ-সামাজিক জীবনবস্থায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ড. তৌফিক রহমান চৌধুরীর সামাজিক দায়বদ্ধতা ও রাজনৈতিক দর্শন এই প্রাগ্রসর ভাবনার চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ^বিদ্যালয়টি এখন পর্যন্ত গরীব, মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার ব্যয় নির্বাহে ২৫ কোটি টাকার অধিক ছাত্রবৃত্তি হিসেবে প্রদান করেছে যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত  থাকবে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীগণের সন্তানাদি ও আওয়ামী পরিবারের সদস্যরা প্রাধান্য পেয়ে থাকে।

ড. চৌধুরী বর্তমানে এনআরবি কমার্শিয়াল ব ̈াংক লিমিটেড-এর একজন উদ্যোক্তা  পরিচালক। তিনি সিলেট
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএমসিসিআই)-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট, ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিংস লিমিটেড (এনসিআর)-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে পরিচালক, সিলেট ক্লাব লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠাতা  প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ইকোনোমিক এসোসিয়েশন (বিইএ) এর ২০০২-২০০৪ নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ইকোনোমিক এসোসিয়েশন (বিইএ)-এর একজন আজীবন সদস্য। তিনি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউটের বোর্ড অব গভর্নরস এর একজন মনোনীত সদস্য। তিনি ২০১৭ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সেরা করদাতার সম্মাননা লাভ করেন।

সিলেটভিউ/১৩ নভেম্বর ২০১৮/ডেস্ক/পিডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন