আজ মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ইং

নিবন্ধনকৃত পূর্ণকালীন শিক্ষকই ভালো ফলাফল অর্জনের সহায়ক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১১-১৭ ০০:৫২:৪২

আল-আমিন :: আমার ভালোলাগার একটি অন্যতম জায়গা শিক্ষা প্রতিষ্টান। শিক্ষা নিয়ে যেখানে আলোচনা হয় আমি আগবাড়িয়ে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্টানের অভ্যন্তরীণ বিষয় যেমন স্কুলের শিক্ষার মান,শিক্ষার্থীদের মেধা,শিক্ষকদের দক্ষতা এবং ঐ স্কুলের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল জানার আগ্রহী হই এবং জানার চেষ্টা করি। ফলে আমি এক ধরনের আনন্দবোধ করি। শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকার দেশে শতাধিক স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ করেছেন। যা সরকারের একটি ইতিবাচক সাফল্যের অন্যতম। সরকারের এই সাফল্য এখন শহর থেকে মফস্বল এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে দেশে শিক্ষার হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশের জনগনের মধ্যে একধরনের সচেতনেতাও জাগ্রত হয়েছে।

সরকার দেশে প্রায় ৬৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের মাধ্যমে সরকারের আওতাভুক্ত হয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নে একাধিক উচ্চবিদ্যালয়ের সাথে সরকারী কলেজ প্রতিষ্টা করেছেন এবং আধুনিক শিক্ষার আলো জ্বালানোর জন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি করে মডেল উচ্চবিদ্যালয় এবং একটি করে সরকারী কলেজ ইতিমধ্যেই চালু করছেন। এখন শিক্ষা প্রতিষ্টানের সংখ্যায় শহর থেকে মফস্বল এলাকাটিও পিছিয়ে নেই। ফলে গ্রামের একজন গরীব কৃষক বাবাও স্বপ্ন দেখে তার সন্তান এম.এ পাস করে একটি ভালো চাকরি করবে।

২.
সরকার স্কুল-কলেজে মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষক প্রভাষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য একটি নতুন আইন প্রনয়ন (সংশোধন) করেছেন। এই আইন অনুসারে শিক্ষকতার জন্য নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাতালিকা করে কেন্দ্রীয়ভাবে বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি চালু করেছেন।গঠন করেছেন বেসরকারী শিক্ষক নির্বাচন কমিশনও (এনটিএসসি)। এই নিবন্ধনের জন্য প্রিলিমিনারি এবং লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীন হয়ে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা যাচাই করে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষক বা প্রভাষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষক প্রভাষক নিয়োগে শিক্ষা প্রতিষ্টান যেমন মেধাবী এবং দক্ষ শিক্ষক -প্রভাষক পাবে তদ্রুপ অন্যদিকে বন্ধ হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্টান পরিচালনা কমিটি বা গভনিংবডির স্বজনপ্রীতি এবং নিয়োগ বানিজ্য। এটাও সরকারের ভালো উদ্যোগ।

তবে শিক্ষা প্রতিষ্টান জাতীয়করন এবং নিবন্ধনের মাধ্যমে শিক্ষক-প্রভাষক নিয়োগ সরকারের এই উদ্যোগ ম্লান হয়ে যায় এমপিওভুক্ত এবং নন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্টানে বিষয়ভিত্তিক শূন্য পদ এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক যথাসময়ে নিয়োগ দিতে না পারায়।

একটি শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রাণ শিক্ষার্থী আর শিক্ষক -প্রভাষকগন ঐ শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রাণ রক্ষাকারী। একটি শিক্ষা প্রতিষ্টান পরিচয় লাভ করে তার শিক্ষার মান এবং পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ওপর। যে শিক্ষা প্রতিষ্টান ভালো ফলাফল অর্জন করে সে শিক্ষা প্রতিষ্টান অভিভাবক বা নাগরিকের নিকট ভালো হিসেবেই সুনাম অর্জন করে। আবার যে শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষার মান এবং পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সন্তুষ্টজনক নয় সেই শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রতি ঐ এলাকার নাগরিকের নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়। ফলে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্টানও সুনাম নিয়ে বেশি দূর এগোতে পারে না।

৩.
শহরের বাইরের এমপিওভুক্ত এবং নন এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষার মান এবং ফলাফল নিয়ে এখনো সন্তুস্টজনক স্থানে পৌছাতে পারেনি। প্রথমত গ্রামের একটি স্কুল হাজার থেকে দুই হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের ভারে নুজ্ব্য থাকে। একদিকে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী অপর দিকে শিক্ষা প্রতিষ্টানে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা,পূর্বে নিয়োগকৃত অযোগ্য শিক্ষকদের সৃজনশীল সর্ম্পকে পুরোপুরি জ্ঞান না থাকা, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক পদ শূন্য থাকায়, ছাত্র-ছাত্রীদের চাপে স্কুল-কলেজ পরিচালনা কমিটি কিংবা গভনিংবডি খন্ডকালীন শিক্ষক অথবা প্রভাষক নিয়োগ দিয়ে দায়সারা কাজ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখা ছাড়া কোনো উন্নতি হয় না। সরকারের কাছে এই খন্ডকালীন শিক্ষকের কোনো বৈধতা নেই, কোনো এমপিওভুক্তিও (সম্মানী) নেই। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কিভাবে পড়াতে হবে সে সর্ম্পকে খন্ডকালীন শিক্ষকদের কোনো ট্রেনিংও নেই।

যেখানে সরকার শিক্ষার মান আধুনিক, মান সম্মত এবং কর্মবহুমূখী করার জন্য এনটিএসসি'র মাধ্যমে মেধাবী যোগ্য শিক্ষক-প্রভাষক বাচাই করে নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে তুলেন,পাঠ্যবই, সিলেবাস,সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠ দান, সৃজনশীল প্রশ্ন কাঠামো, সৃজনশীল প্রশ্ন প্রনয়ন,শিক্ষার্থীরা কিভাবে পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্রে উত্তর লেখবে এর নিয়মাবলী, কিভাবে উত্তর পত্র মূল্যায়ন করা হয় এর নিয়মাবলী সর্ম্পকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলেন। এর বিপরীতে একজন খন্ডকালীন শিক্ষককের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রশ্ন থেকেই যায়। মফস্বল এলাকায় এমন শিক্ষা প্রতিষ্টান রয়েছে যেখানে লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগকৃত কর্মকর্তা ঐ বিদ্যালয়ে নবম দশম শ্রেণির বিজ্ঞান পড়ান আবার শারীরিক শিক্ষায় নিয়োগকৃত শিক্ষক বেইস বানিয়ে প্রাইভেট পড়ান আবার কিছু সংখ্যক স্কুলে খন্ডকালীন শিক্ষকরা দাপটের সহিত স্কুলে শিক্ষকতার করেন এমন খবরও গনমাধ্যমে এসেছে। এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষার মান এবং পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় পাবলিক পরীক্ষা এস.এস.সি পরীক্ষায় ২০০থেকে ২৫০ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে জিপিএ -৫ অথবা এপ্লাস একজনও পায়নি এমন শিক্ষা প্রতিষ্টানের সংখ্যা কম নয়।

সরকারী বিদ্যালয়ের জন্য সরকার অর্থ্যাৎ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক র্বোড যে বইগুলো নির্ধারণ করেছেন এই বইগুলোই মফস্বল এলাকার স্কুলের জন্য নির্ধারণ করেছেন।কিন্তু শহর এবং মফস্বল এলাকার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষকের এবং শিক্ষার মান সমতা না থাকায় মফস্বল এলাকা থেকে কয়েকজন ছাড়া মেডিকেল, বুয়েট,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ ডিগ্রির জন্য সুযোগ পেয়েছে এমন সংখ্যা খুঁজে পাওয়া কঠিন।

৪.
একজন আর্দশ শিক্ষক যেমন উত্তম জাতি গঠন করে তদ্রুপ একটি গুনগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সভ্য সমাজ গঠন করেন। একজন আর্দশ শিক্ষকের নিকট ভালো কিছু শিক্ষনীয় যেমন তদ্রুপ মেধাহীন ও অযোগ্য শিক্ষকদের কাছ থেকে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা ভুল কিছুও শিখতে পারে। তাই সরকারের উচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করনের পাশাপাশি শিক্ষাথীদের সংখ্যা বিবেচনা করে শহর এবং শহরের বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষার মান এবং পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সামঞ্জস্য রাখার জন্য বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক-প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া আব্যশক।কেননা,শিক্ষার্থীদেরকে মানসম্মত শিক্ষা দিয়ে মেধাবী জাতি গঠন করার জন্য পূর্ণকালীন প্রশিক্ষিত শিক্ষক-প্রভাষকগন সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন