আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং
শাকিল জামান :: বিগত দশ বছর থেকে ক্ষমতায় রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত মহাজোট। যেকোনো দল দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকলে সেই দলে যোগদান করতে আসে এক দল সুযোগসন্ধানী। এরা আসে ক্ষমতার সুবাস নিতে। ক্ষমতার পাশে থেকে নিজেদের জীবনমান কিছুটা উন্নত করতে। এটাকে আমি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই ধরে নেয়ার পক্ষপাতী।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একেবারে দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। প্রত্যেকটা দলই তার নির্বাচনী কৌশল প্রণয়ন ও বিরোধীপক্ষকে কীভাবে কুপোকাত করা যায় সেই ফন্দি আঁটছে। এমন মুহুর্তে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে বিরোধী শিবির থেকে দলে দলে এসে যোগদান করছে নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ এটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে এবং ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে।
পত্রিকা খুললেই শিরোনাম দেখি- দুই শতাধিক নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগে যোগদান করলেন বিএনপি নেতা। গণতান্ত্রিক দেশে একদল থেকে অন্যদলে যোগদান স্বাভাবিক চর্চা হলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক তাদের জন্য বুমেরাং হতে পারে। যারা যোগদান করছে তাদের মধ্যে তরুণ নেতাকর্মীর সংখ্যাই বেশি। প্রশ্ন থাকছে- নির্বাচনে এদের ভূমিকা কি হবে? এবং এই নতুন নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ তার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ডদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারবে কি না?
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ বরাবরই উদারপন্থী এক রাজনৈতিক দল। যখন কেউ অন্যদল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছে আওয়ামী লীগ এর নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে নেতাকর্মী পর্যন্ত সকলেই তাদের বুকে টেনে নিয়ে নিয়েছে। তবে নিজের দলের হয়ে নিঃস্বার্থভাবে খেটে যাওয়া নেতাকর্মী যাদেরকে আমরা ত্যাগী বলি, তাদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের একটা উদাসীনতা দেখতে পাওয়া যায়।
বর্তমানে আওয়ামী লীগে যোগদানের যে হিড়িক পড়েছে সেটা অশনিসংকেত কেনো বলছি সেই ব্যাপারটা কিছুটা পরিষ্কার করি। নির্বাচনকে সামনে রেখে একটা দলের নানান গোপনীয় পরিকল্পনা থাকে। উদারপন্থী মনোভাবের কারনে নতুন যোগ দেয়া নেতাকর্মীরাও এই পরিকল্পনার অংশ হবে। এতে করে বাদ পড়ে যাবে কিছু ত্যাগি নেতাকর্মী। আবার, নতুন যোগ দেয়া এসকল নেতাকর্মী নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগের ব্যানারে ঘুরে বেড়িয়ে অন্যকোনো উদ্দেশ্য পূরণ করবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
বিগত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অভিযোগ উঠেছিলো, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক শার্টে লাগিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ধানের শীষে জালভোট দিয়েছে এক শ্রেণির নেতাকর্মী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও অনেকের পোস্ট চোখে পড়েছিলো, যারা বলেছে- জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ধানের শীষে ভোট দিয়ে এলাম। এরা কারা? আওয়ামী লীগ সনাক্ত করতে পারে নি।
এখন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো যোগদানের হিড়িক। এসব নতুন আসা নেতাকর্মীদের সন্তুষ্ট রাখতে অনেককেই হয়তো পোলিং এজেন্টসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। যদি তাই হয় তবে এদের জয়জয়কারে ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে যাবে। আর এই সুযোগে আবারো সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে অভিযোগ উঠেছে সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
লেখক: সমাজকর্মী