আজ বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

নৌকা ভাসাও লাঙ্গল জেতাও, আমি শেখের বেটি হাসিনা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১২-১২ ০১:২৪:১১

পীর হাবিবুর রহমান :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের লড়াই এখন তুঙ্গে। গোটা দেশ এখন দুই শিবিরে বিভক্ত। সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে বামপন্থি আদর্শিক ছোট সংগঠনগুলো দলীয় সামর্থ্যরে বাইরে গিয়ে অনেক প্রার্থী দিলেও সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির ১৪ দল এবং যুক্তফ্রন্টের মহাজোট। অন্যদিকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত ঐক্য প্রক্রিয়ার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোটের মূল শক্তিই হচ্ছে আদর্শগত দিক থেকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এ দেশের স্বাধীনতা-সংগ্রাম ও গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে অর্জন ঘটেছে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে। সেখানে ১৪ দল যুক্ত ছিল। অন্যদিকে সেনাশাসক এরশাদের শাসনামলে জাতীয় পার্টির জম্ম  হলেও এ দলটিতে যেমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, তেমনি তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করেন। অন্যদিকে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে, সেখানে গণফোরামসহ ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। যদিও ড. কামাল হোসেন সে সময় পাকিস্তানে বন্দী ছিলেন।

অন্যদিকে সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত বিএনপিতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা যেমন রয়েছেন, তেমনি দলটি নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে। যদিও এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সেনাশাসক জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে একজন বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন এবং ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম সত্য হচ্ছে, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে মানবসভ্যতার ইতিহাসে সংঘটিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে পরিবার-পরিজনসহ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে খুনি চক্রের উল্লাস, একাত্তরের পরাজিত শক্তির আদর্শিক ভাবধারা প্রতিষ্ঠা ও ক্যু-পাল্টা ক্যুর মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলেই স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোকে যেমন রাজনীতি করার অধিকার দেওয়া হয়, তেমনি তাদের প্রধানমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী-এমপি বানানো হয়। এমনকি স্বাধীনতাবিরোধীদের জন্য গোটা দেশকে উম্মু ক্ত করা হলেও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগসহ সেই যুদ্ধে ভূমিকা রাখা সব অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর কঠোর দমননীতি পরিচালিত হয়। স্বাধীনতাবিরোধীদের বুকভরে যেমন শ্বাস নিতে দেওয়া হয়, নির্ভয়ে পদচারণ ও রাজনীতি করার অধিকার দেওয়া হয়, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের বীর সংগঠকদের কারা নির্যাতনের দহন ভোগ করানো হয়।

সেনাশাসনকবলিত বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে মুক্ত করে ’৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদীয় রাজনীতির যাত্রাপথকে নির্বিঘ্ন করা হয়। গণতান্ত্রিকভাবে মানুষের অবাধ ভোট প্রয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ক্ষমতার পালাবদলের যুগে সমঝোতার রাজনীতির সংস্কৃতির যে দুয়ার খুলেছিল ২০০১ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তার কবর রচিত হয়। এ সময় যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকাই তুলে দেওয়া হয়নি, বিরোধী দলকে দমন-নির্যাতনই করা হয়নি, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো অপরাধই সংঘটিত হয়নি, জঙ্গিবাদের উত্থান, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, বিনা বিচারে মানুষ হত্যা, অবাধ লুণ্ঠনের চারণভূমিতে পরিণত করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টাই হয়নি, একুশের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আজকের প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাসহ তার দলের শীর্ষ নেতাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার লোমহর্ষক ঘটনা ঘটানো হয়। আইভি রহমানসহ নিহত ২৪ জন ও আহত পঙ্গু শত মানুষের রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। তার পরের ইতিহাস সবার জানা।

রাজনৈতিক ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিএনপি দলীয় কূটকৌশল, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন নির্বাচন-ব্যবস্থার সংস্কার প্রশ্নে রাজপথ হরতাল-অবরোধে সহিংস হয়ে ওঠে। সেই পথে ক্ষমতায় আসা সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের দুই বছর শুরুতে যে জনপ্রিয়তা নিয়ে এসেছিল, পরবর্তীতে তাদের ভ্রান্তনীতির কারণে গণঅসন্তোষে পরিণত হয়। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সবার জন্য সেই শাসনামল ছিল ভয়ঙ্কর এবং ভীতিকর পরিস্থিতির। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সেদিন শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকা ছিল আপসহীন ও অনন্যসাধারণ। শেষ পর্যন্ত সেই সরকার দুই নেত্রীর মুক্তি ও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সম্পন্ন করে বিদায় নেয়। সেই নির্বাচনে বিশাল বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ একদিকে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়। অন্যদিকে জাতির কাছে দেওয়া রাজনৈতিক অঙ্গীকার হিসেবে যুদ্ধাপরাীদের বিচার সম্পন্ন করে। এতে জামায়াতের শীর্ষ চার নেতার ফাঁসি হয়। দুই নেতার আমৃত্যু কারাদণ্ড হয় এবং বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও ফাঁসিতে ঝুলতে হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে সেদিন গোটা দেশ সরকারের সঙ্গে তরুণ প্রজম্ম কে নিয়ে এক মোহনায় মিলিত হলেও প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী দল বিএনপি নিজেদের অবস্থান যেমন পরিষ্কার করতে পারেনি, তেমনি জামায়াতের সঙ্গও ত্যাগ করতে পারেনি। উল্টো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও প্রতিরোধের ডাক দিয়ে সহিংস হরতাল-অবরোধের রাজনীতিতে দেশকে অচল করে দিলেও নির্বাচন বন্ধ করতে পারেনি। ওয়াক ওভার পেয়ে শেখ হাসিনার মহাজোট সরকার ক্ষমতায়ই আসেনি, নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বই প্রতিষ্ঠা করেনি, সরকারের এক বছর পূর্তিতে বেগম খালেদা জিয়ার ডাকা আগুনসন্ত্রাসের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিকে কঠোর হাতেই দমন করেনি, বিরোধী দলের রাজনীতিকে স্ত-ব্ধ করে দিয়ে দেশ থেকে হরতাল-অবরোধের মতো অর্থনীতি-বিরোধী কর্মসূচি নির্বাসনে পাঠায়। যে বিএনপি ভরা যৌবনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি, সেই দলটি শক্তি ক্ষয় করে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে দাবি দূরে থাক, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিও ভুলে গিয়ে এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে।

এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের যেমন এক দশক সুসময় বইছে, তেমনি বিএনপির জন্য কঠিন দুঃসময়কে অতিক্রম করতে হচ্ছে। কারাবন্দী দলের চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। একুশের গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত লন্ডন নির্বাসিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি, তেমনি দেশে ফিরে এসে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সাহস দেখানোর ঝুঁকিও নেননি। নেতৃত্বহীন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি বিএনপি দেশের সংবিধানপ্রণেতা বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য এককালের প্রথম সারির আওয়ামী লীগ নেতা ও আন্তর্জাতিক খ্যতিসম্পন্ন আইনজীবী গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। আসন বণ্টনে ঐক্যফ্রন্টের চেয়ে ৩টি আসন বেশি দিয়েছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত, উচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীকে।

ঐক্যফ্রন্টের মঞ্চে ড. কামাল হোসেনের পাশাপাশি রয়েছেন স্বাধীন বাংলা ছাত্রপরিষদের নেতা আ স  ম আবদুর রব। আছেন একাত্তরের বীর যোদ্ধা ও পঁচাত্তরের প্রতিরোধ যোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। এককালের অসীম সাহসী রাজপথ কাঁপানো মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিবিদ মোস্তফা মহসীন মন্টু, সাবেক ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। তারা এ মঞ্চকে আলোকিত করলেও উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারেননি। কারণ তাদের পেছনে সাংগঠনিক ও গণসমর্থনের যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি নির্ভর করতে হচ্ছে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ দেশের অভিশপ্ত শাসনামল দেওয়া বিএনপি ও পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তির ওপর। সবাই মিলে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করলে মানুষ যখন বলছে, ‘নতুন বোতলে পুরনো বিষ, জামায়াত এখন ধানের শীষ’ তখন ঐক্যফ্রন্ট ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, আ স ম রব এবং সুলতান মনসুর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ নির্মাণের স্লোগান তুলে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে নেকাব পরিয়েছিল, সেটি এখন খুলতে বসেছে।

সোশ্যাল মিডিয়া ও টেলিভিশন চ্যানেল খুললেই দেখা যাচ্ছে দেশের জনপ্রিয় লেখক ইমদাদুল মিলন থেকে শুরু করে এককালের হার্টথ্রব অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তফাসহ অনেকেই দেশকে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যাওয়ায় তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চান। এমন বক্তব্য প্রচার হচ্ছে। ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব পর্দার তারকারাও একযোগে অভিন্ন সুরে কথা বলছেন। একাত্তরের শহীদ ডাক্তার আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী তরুণ প্রজম্ম কে অশ্রুজলে স্পর্শ করে বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে নৌকায় ভোট দিতে চান ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেই আবার ক্ষমতায় চান। দুই বছর পর আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জম্ম  শতবার্ষিকী হাতছানি দিচ্ছে। সব হিসাব মিলিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যত আদর্শের কথা ও সরকার -বিরোধী গরম ভাষণই দিক না কেন মানুষের মধ্যে যেন আশার সঞ্চার করতে পারছে না। মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনে তাদের বক্তৃতা-বিবৃতি, অঙ্গীকার কার্যকর হচ্ছে না।

আড়াই কোটি তরুণ ভোটারকে সামনে রেখে জোরেশোরে ক্যাম্পেইন চলছে। তরুণ প্রজম্মে র প্রথম ভোট স্বাধীনতার সপক্ষে নৌকা নিয়ে বেঁধেছি জোট এমন স্লোগান উঠেছে। ব্যক্তি ইমেজ যতটা ক্লিন থাকুক না কেন জীবনের পড়ন্ত বেলায় বয়সের ভারে ন্যুব্জ ড. কামাল হোসেনের জন্য বিএনপির অতীত পাপের শাসন ও জামায়াতের যুদ্ধাপরাধ এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ভোটযুদ্ধের ময়দানে ভারী বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্লোগান মানুষকে যেন জাগাতে পারছে না। এই শক্তি নিয়ে সুমহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ নির্মাণ করবেন এ প্রশ্নে আস্থা অর্জন দূরে থাক, উল্টো নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন।

অন্যদিকে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের উত্তরাধিকারিত্বই বহন করছেন না, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীকই হয়ে ওঠেননি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক শক্তির বাতিঘর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সাহসে, নেতৃত্বে, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতায় দেশেই তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেননি, একজন প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে উপমহাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্ববরেণ্য নেতাদের পাশে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্ন যখন বড় আকারে সামনে এসেছে, তখন তার পাল্লাই গণসমর্থনের দিক থেকে ভারী হয়ে উঠেছে। তার মহাজোটে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে ২৯টি আসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি বিকল্পধারার অধ্যাপক বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরী যেখানে ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রশ্নে দলীয় অবস্থান না থাকলেও ১৫০ আসনের দাবি তুলেছিলেন, সেখানে শেখ হাসিনার সামনে বসে মাত্র তিনটি আসন নিয়ে সবুর করতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির ১৪ দলের নেতাদেরও যা দিয়েছেন, তাই নিয়ে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের প্রার্থীরা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা নিয়ে ভোট করছেন। মহাজোটের অংশীদার হয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টির মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। মহাজোট শিবিরে স্লোগান উঠেছে, যেখানে লাঙ্গল নেই, সেখানে নৌকায় দেব ভোট। যেখানে নৌকা নেই, সেখানে লাঙ্গলে দেব ভোট, শেখ হাসিনা ও এরশাদের মহাজোট। সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রতিটি গ্রাম হবে একেকটি শহর। এ স্লোগান সামনে নিয়ে ভোটময়দানে শেখ হাসিনা যেন জনতাকে বলছেন, লাঙ্গল জেতাও, নৌকা ভাসাও। আমি শেখের বেটি হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে হারি না।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন