আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

সাতচল্লিশটি বিজয়ে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১২-১৬ ০২:০৮:৪৯

আল-আমিন :: আমরা এখন আগের মতো সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ বলি না। এখন অর্জিত বাংলাদেশ দেখি। বিজয়ের সাতচল্লিশ বছরে আমাদের সম্মুখে একটি অভূতপূর্ব বাংলাদেশের অবস্থান। এখন এদেশে মাশরাফিরা ক্রিকেটে নিজের বাহু দিয়ে শুধু বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলেন না রাজনীতিতে এসে প্রমান করেছেন আমরা বাজ্ঞালী। আমরা সব করতে পারি। আজকের বাংলাদেশে উন্নয়ন মেলা হয়। কর মেলা হয়, মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে করমেলায় গিয়ে কর প্রদান করে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র গঠনে অংশীদার হয়ে গৌরব অর্জন করে।

২.
আমরা স্বপ্ন দেখি, তরুনদের বিচক্ষণতায় বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নয়নশীল দেশকে উদীয়মান অর্থনীতির দেশে উন্নত হবে। রাজনীতিবীদদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, জলবায়ুর পরিবর্তন, স্বাস্থ্য সেবা, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকবেলাসহ রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রেই শতভাগ সফলতা আসবে। দেশকে উন্নতির শিখরে তুলে নেওয়ার জন্য নতুন নতুন উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান রেখে দেশের জনগণের অবস্থা শতভাগ উন্নত এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থাশীলতা বৃদ্ধি করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে উন্নত বিশ্বের কাতারে এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বিশ্বের কাছে রোল মডেল হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বজ্ঞবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে আগামীর বাংলাদেশকে দেখার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে বজ্ঞবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ, গনতন্ত্রের বাংলাদেশ, স্বাধীনতার বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, তারুন্যের চোখে আগামীর উন্নয়নের বাংলাদেশকে আমরা দেখতে চাই। এবারের বিজয় দিবসটি আমাদের জন্য গ্রুরুত্বপূর্ণ। বিজয়ের সাতচল্লিশ বছরের মাথায় দেশের সবচেয়ে বড় নির্বাচন আমাদের সামনে।

দেশে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরও বেশি। তরুণরা আগামী দিনের পথচলার শক্তি। দেশের অনেক কিছু নির্ভর করে এই প্রজন্মের তরুণদের ওপর।।এদেশের সরকার গঠন নির্ভর করে তরুন ভোটারের ওপর।

আমরা তরুণ ভোটার। আমরা তরুণ ভোটাররা চাই, নিকট ভবিষ্যতে দেশের গৃহহীন মানুষগুলো অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থানসহ অন্যান্য মৌলিক নাগরিক সুবিধা প্রাপ্ত হোক। একেকটি গ্রাম হোক উন্নত শহরে রুপান্তর। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের সরকার। যে সরকার দেশের উন্নয়ন করে বাংলাদেশকে বহুবিশ্বের কাছে মাথা উচু করে সম্মান অজর্ন করে দিবে। নগর থেকে গ্রামে রাস্তাঘাট ব্রীজ কালবাট করে দিবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিবে। বছরের পহেলা দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে।

৩.
অর্থনৈতিক অগ্রগতি, অবকাঠামো নির্মাণ, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার কারণে গেল এক দশকের সরকারের নেতৃত্বের প্রতি মানুষের সমর্থন দিন দিন বাড়ছে। কোনো হামলা-হুমকি, আন্দোলনও বজ্ঞবন্ধুর কন্যাকে তার লক্ষ্য থেকে দূরে রাখতে পারেনি। বজ্ঞবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে নতুন মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে।

জনগণের আকাক্ষা ও প্রত্যাশানুযায়ী এ দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করেছেন। তাঁর নেতৃত্বের সাফল্যে বাংলাদেশ আজ গৌরব জনক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি প্রতিষ্ঠায় এদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় উন্নীত হয়েছে।

আমরা বিশ্বাস করি, এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের জনগণের জীবনমান শতভাগ সমৃদ্ধ হবে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল তারুণ্য। তারুণ্যের মনে, শক্তিতে এবং ভাবনায় থাকে দেশপ্রেম। এই তারুণ্যের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তরুণীরা সম্ভ্রম বিলিয়ে দিয়ে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন এবং দেশের জন্য স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেন। আজকের তরুণ আর একাত্তরের তরুণদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। একাত্তরের তরুনদের মধ্যে যেমন ছিল একতা, সাহস, ঐক্য। তেমনি এখানকার তরুণদের মধ্যে আছে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়া, শিক্ষা ও জ্ঞানভাণ্ডার এবং শক্তি। তরুনদের এই চেতনার মনোবল, উৎসাহ ও উদ্দীপনায় অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতার সংগ্রামের বিজয়।

আমাদের বিশ্বাস, তারুন্যের নেতৃত্বের গুনাবলী দিয়েই আমাদের স্বাধীনতার সুফল বয়ে আনতে সক্ষম হবে এবং বজ্ঞবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। আজকের তরুণরা শিক্ষাদীক্ষা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেধা ও সাহস দিয়ে নতুন প্রজন্মের জন্য আগামীর বাংলাদেশ নির্মান করবে। উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশের তরুণরা সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল কাজে পারদর্শী ও দক্ষ।

আমরা দ্রুত উন্নত দেশের দিকে ধাবিত হতে চলেছি। বাংলাদেশ আজকে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, তা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে স্বীকৃত। আমরা চাই দেশের সকল নাগরিকের সুবিধা সুনিশ্চিত,অসহায়ের মানুষের সহায়, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, তথ্য প্রযুক্তি প্রসারে হাতের মুঠোয় বিশ্ব, সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ, কৃষকের মুখে হাসি, উড়াল সেতু, মেট্রো রেল, পদ্মা সেতু, সুরমা সেতু, প্রশস্ত চারলেনের রাস্তা, গৃহহীনদের নিশ্চিত আবাসন, দরিদ্রের ঘরে বিনামূল্যের চাল, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্ত সম্মান, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার,সবার জন্য সুচিকিৎসার নিশ্চয়তা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, ভয়াবহ মাদক নির্মূল বাংলাদেশ, বয়স্ক ভাতা নিশ্চয়তা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।

৪.
আমাদের বিশ্বাস, দেশ এগিয়ে যাবে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের মাথায় বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। তাই দেশের তরুনদেরকে সচেতন এবং সতর্ক থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে অশুভ শক্তির মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। সামনে বাধা এলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে দৃঢ় মনোবল নিয়ে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলায় সচেষ্ট হতে হবে। তবেই এদেশ স্বার্থক সোনার বাংলায় পরিণত হবে। আমাদেরকে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সদা উজ্জীবিত থাকতে হবে। আমরা তরুণ ভোটার। আমরা চাইনা পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ হোক, চাইনা কর্ণফূলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণ কাজ বন্ধ হোক,চাইনা বন্ধ হোক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ নির্মাণ তাই আমরা উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিব।

৫.
এই সরকারের সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা দেশে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। মফস্বল এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং উপজেলা-জেলা হাসপাতালগুলোতে মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা টেলিমেডিসিন সিস্টেমসহ চালু করা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে। কৃষকদের জন্যে কৃষিকার্ড, ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করেছেন। রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে দেশে দারিদ্রের হার হ্রাস পেয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪১৬ ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর সূচকে বাংলাদেশের সাফল্যে বিশ্বনেতৃবৃন্দ রীতিমতো অবাক হয়েছেন। যার স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাউথ সাউথ পুরস্কার, ইউএনএমডিজি পুরস্কার জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার পেয়েছেন। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে জলসীমা চুক্তির বিরোধের নিষ্পত্তি করতে পেরেছেন। স্থল সীমান্ত চুক্তি করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহু বছরের সীমানা বিরোধের নিষ্পত্তি করতে পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পাওয়া এবং এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এই সরকারের বিরাট সাফল্য। যে সাফল্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র ফুটে ওঠেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নত দেশের মতো বৃহৎ বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সুফল ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছে দেশের জনগণ। সরকারের জন্যে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণ। কিন্তু স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে দৃশ্যমান হতে চলেছে এবং পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তিবান্ধব কৃষিনীতির কারণেই বাংলাদেশ ইতোমধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশকে অর্জিত বাংলাদেশে দেখতে পাই। সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন