আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সদ্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও কিছু কথা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-১২ ১২:২২:১৫

এডভোকেট শাকী শাহ ফরিদী :: ব্যক্তিগত পরিচয় নাই বললেই চলে, কিছু কিছু অনুষ্ঠানে উনার সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করা, পরে পাশে দাঁড়িয়ে ছবি উঠানো আর হাত মেলানো, এইটুকই। কোনো কাজেও কখনো যাওয়া হয়নি উনার কাছে।

মন্ত্রী হতে পারেননি, ব্যাপার না। তোফায়েল, আমু, শেখ সেলিম, সাজেদা, মতিয়া গং হেভিওয়েট সাহেব/সাহেবানদের মন্ত্রী না হওয়ার ভিড়ে উনার মন্ত্রী না হওয়াটা আমার কাছে একেবারেই স্বাভাবিক মনে হয়েছে, উনি নিজেও বলেছেন নতুনদেরকে কাজ করার সুযোগ করে দিতে চান। তরুণ প্রজন্মের একজন হিসেবে নবীনদের আগমন ভালোই লাগে আমার। আর নাহিদ সাহেবরা মুরব্বি হিসেবে আছেন, থাকবেন অভিভাবক হয়ে। রাজনীতিতে সব পাওয়াতো হয়েই গেছে উনার- ছাত্ররাজনীতি, এম.পি, মন্ত্রী, দলের প্রেসিডিয়াম সবই হয়েছেন। সে হিসেবে সফল একজন রাজনীতিবিদ, অবশ্যই।

উনার যে ছবিটি দিলাম, ছবিটা মন্ত্রী হিসেবে উনার শেষ কর্মদিবসে তোলা ছবি খুব সম্ভব- ভেসে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, ছবিটি দেখে কেন যেন খুব খারাপ লাগছে। আমার ধারনা, একটু সহজ সরল টাইপের মানুষ উনি- সাদামাঠা জীবনে অভ্যস্ত, নেই চাকচিক্য, নেই পোশাকি কৃত্রিম জৌলুশ, ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও নেই টাকা আর সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ কিংবা তথ্য।

আমি বলব মন্ত্রী নাহিদের কথা, এম.পি হিসেবে এলাকায় উনি কি করেছেন না করেছেন আমার সঠিক জানা নাই বিধায় মন্তব্য করতে নারাজ। সেটা উনার এলাকার জনগণ জানবে ভালো।

হ্যাঁ অভিযোগ আছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের, সেটার জন্যে আমরা একবাক্যে উনাকেই দায়ী করে বসি- কখনো ভাবিনি এই গোটা সিস্টেমটাকে নিয়ে, ভাবিনি তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে একই সাথে বেড়ে যাওয়া নতুন ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে আমাদের সক্ষমতা নিয়ে, ভাবিনি মন্ত্রণালয় বা তার আশেপাশে ঘাপটি মেরে বসে থাকা নিরব ঘাতকদের নিয়ে যারা মন্ত্রী বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ধান্ধায় সদা ব্যতিব্যস্ত ছিল। সময় এসেছে, ভাবুন- না হয় মন্ত্রীর পর মন্ত্রী সরকারের পর সরকার আসবেন যাবেন কোনো লাভ হবে না।

অনেক বাবা-মা'কেই দেখেছি, ছেলে/মেয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে তাই খুশিতে নেচেগেয়ে দুনিয়াকে খবরটা জানানোর জন্যে অস্থির- আমার ছেলে/মেয়ে এ+ পেয়েছে, কোন পত্রিকায় দিবেন তা নিয়ে ব্যস্ত। অবাক হই নিজের ছেলেমেয়েকে মেধাবী প্রমাণ করতে ব্যস্ত ঐ বাবা-মা'কেই আবার যখন দেখি 'I am GPA 5' বলা গুটিকয়েক শিক্ষার্থীদের নিয়ে বানানো মেকি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে তার সব দোষ নাহিদ সাহেবের ঘাড়ে চাপিয়ে উনার গুষ্ঠি উদ্ধার করতে ব্যস্ত হওয়া দেখে। এই প্রজন্মের বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোতো মেধাবী, অবশ্যই মেধাবী, অতীতের যে কোনো সময়ের বাচ্চাদের চেয়ে এরা তুলনামূলক বেশি শার্প- ট্যালেন্টেড আর তথ্যসমৃদ্ধ- নির্বুদ্ধিতা ভর করেছে তাদেরই বাবা-মা'র ঘাড়ে। এই নিয়েছে ঐ নিল যা কান নিয়েছে চিলে টাইপ অবস্থা আর কি।

ব্যর্থতাতো অবশ্যই থাকবে নাহিদ সাহেবের, সেগুলো ধরিয়ে দিন- মন্ত্রী না থাকলেও এম.পি তো আছেন, শেষজীবনে এলাকার জন্যে কিছু স্মরণীয় কাজ করে যেতে পারেন কি না দেখেন। সিলেটিদের মধ্য থেকে জাতীয় রাজনীতিতে এমন লেভেলে আর কবে কে যাবেন আল্লাহ জানেন, সিলেটের রাজনীতির একজন অভিভাবক হিসেবে উনি থাকবেন এমনটাই প্রত্যাশা।

বি এন পি আমলে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন নকল বন্ধে সাহসী ভূমিকা রেখে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন, যার যা ভালো তা বলা উচিত। কিন্তু সেই সময়ের শিক্ষামন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী মিলে শিক্ষাব্যবস্থার কি এমন গুনগত পরিবর্তন করেছিলেন? পড়ালেখার মান কি এমন ভালো ছিল তখন? আদতে কিছুই না। এটা আওয়ামীলীগ-বি এন পি ইস্যু না, এটা সিস্টেমের গলদ- এটা ভেঙেই নতুন পথে এগিয়ে যেতে হবে, সংস্কার - সংযোজন- বিয়োজনেই কোয়ালিটি এডুকেশন এন্ড কোয়ালিটি সিস্টেম দাঁড় করাতে হবে।

শুধু সরকার কিংবা মন্ত্রী পাল্টালেই অথবা উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপালেই রাতারাতি সমাধান আসবেনা।

ভালো থাকুন মাননীয় সদ্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শুভ কামনা এম.পি নাহিদ সাহেবের জন্যে, কে জানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার জন্যে আর কোনো সুখবর রেখেছেন কি না, নিরন্তর শুভকামনা।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন