আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

তা‌রেক রহমা‌নের বিএন‌পি ও গণতন্ত্রহীনতার দায়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-১৫ ১৩:০৭:১৫

মুনজের আহমদ চৌধুরীঃ আজ একযুগ বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে একদিন হয়ত সমঝোতায় দেশত্যাগের অপশনে বিকল্পহীন হতে পারে। কারন তার শারীরিক অবস্থা আর একটা পাচঁ বছরের মেয়াদের অপেক্ষা করবার অবস্থায় নেই। দলটির লাখো ত্যাগী আত্মনিবেদিত কর্মী আজ একযুগ ধরে মামলা হামলায় জর্জরিত। কুমিল্লার দাউদকান্দির একসময়ের দাপুটে যুবদল নেতা এখন মামলা হামলার ফেরে এলাকাছাড়া হয়ে ঢাকায় সিএনজি চালান।

ক্ষমতার রেসের রাজনীতিতে বিএনপি যতখানি একটি দল, তারচেয়েও বেশি বহু মতের মানুষের একটি প্লাটফর্ম, শাব্দিক অর্থে জংশন।

দলের নীতি, জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতার নৈতিক রাজনীতির প্রতিষ্টার আদর্শিক স্তম্ভ এমন বিষয়গুলো বিএনপিতে যেমন অনুপস্থিত, আওয়ামীলীগেও।

আওয়ামীলীগ নির্বাচনের নামে ভোট লুট করেছে এমন অভিযোগ বিএনপি সহ ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলোর।
২০১৪ সালের নির্বাচন দেশের রাজনীতিকে করেছে একতরফা। বাংলাদেশ গণতন্ত্র বিকাশের উত্তর কোরিয়ার সমকক্ষতা অর্জন করেছে! বিরোধীদের আসনসংখ্যার হিসেব অনেকে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনকে ৭৩ সালের  নির্বাচনের সাথে তুলনা করছেন।

দেশে সুষ্ঠ নির্বাচনের সিষ্টেমটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি ভালো জিনিস, সিষ্টেম ধ্বংস করা খুব সোজা, কিন্তু ধ্বংস হয়ে যাওয়া নির্বাচনী সংস্কৃতিকে সুষ্ঠ ধারায় ফেরানো খুব কঠিন কাজ। নির্বাচনী সংস্কৃতির বিপর্যয় এমন একটি জায়গায় পৌছেঁছে যে, সামাজিক-সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনেও কারচুপি,ভুয়া ভোটের অভিযোগ উঠে। ন্যায়হীনতার, ফাসিঁর দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে সরকারী ক্ষমা দিয়ে রাজনীতিতে ফিরিয়ে মদদ দেবার সংস্কৃতিকে রাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। আমি বলছি না, অতীতে বিএনপির সরকার দেয়নি। সব সরকারগুলি দিয়েছে। সর্বশেষ জোট সরকারের একটা অংশ বাংলাভাইদের রাষ্ট্রীয় উত্থানে দেশটাকে আরেক আফগানিস্তান বানাতে সরাসরি মদদ দিয়েছিল।

বিশ্বে দুটি বাঙালী রাজ্য একটি বাঙালী দেশ আছে। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা আর বাংলাদেশ। বাঙ্গালীকে আন্দোলন ভুলিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে মমতা দিদিও। কোনখানেই নির্বাচনী সংস্কৃতি নেই। ক্ষমতা শুধু পেটায় সবখানে।

গত একযুগ ধরে বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতার অভিযোগ সবচেয়ে বেশিবার করেছে বিএনপি ও দলটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তারেক রহমান গণতন্ত্রের সুতিকাগার খ্যাত এই লন্ডন শহরে থাকেন আজ ১১ বছর। কিন্তু, সেই লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপির রাজনীতিতে দলের নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের কাছে গণতন্ত্র পাননি। অসচ্ছ দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে নেতারা সন্মিলিতভাবে লিখিত অভিযোগ, আপত্তি জানিয়েও প্রতিকার পান নি।
মানলাম তিনি দেশের বাইরে দল সরকারে না থাকায় হয়ত দল গোঁছাতে বাধাঁর সম্মূখীন হচ্ছেন। কিন্তু, লন্ডনে তো সরকার বাধাঁ দেয় না। আর কোন কারনে না হোক, স্রেফ দেশে-প্রবাসে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করবার জন্য হলেও তো তার বর্তমান শহরে দলের ইউনিটটিকে একটি গনতান্ত্রিক ও গঠনতান্ত্রিক নেতৃত্ব প্রতিষ্টা করতে পারতেন।
কিন্তু, তিনি একযুগ লন্ডনে থাকার পরও যুক্তরাজ্য বিএনপিতে কি ব্যালটের মাধ্যমে একটি সন্মেলন বা কমিটি হয়েছে? যুক্তরাজ্য কমিটির সাংগঠনিক মর্যাদা দেশের একটি জেলা কমিটির সমপর্যায়ের।
দলের শীর্ষ নেতা সে জেলা কমিটির সম সাংঘটনিক মর্যাদার শহরে বসবাস করেন আজ প্রায় একযুগ। তারপরও সেই শহরে তার দলের সে শহরের বিএনপির নেতৃত্বে গণতন্ত্র না থাকবার অভিযোগে নেতাকর্মীরা বহুবার সংবাদ সন্মেলন করেছেন।

এখানকার প্রায় সকল সক্রিয় নেতাকর্মীদের তিনি নাম পরিচয় জানেন। তিনি জানেন এখানকার কোন নেতা ব্যাংক খেলাপী হয়ে কতবার নিজের নাম পাল্টেছেন, দলের কোন দায়িত্বশীল নেতা কার্ড, ব্যাংক জালিয়াতিতে কতবার জেল খেটেছেন, দন্ডিত হয়েছেন। কোন নেতা দোকান থেকে মদের বোতল চুরি করতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছেন সে ভিডিও এখনও নেতাকর্মীদের অনেকের সেলফোনে আছে।

তখন প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন দাড়ায়, যে নেতা লন্ডনে একযুগ থেকেও এখানে দলের একটা জেলা কমিটি বিতর্কহীন গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারেন না, তিনি বা তার দল তার নেতৃত্বে কি করে দেশে গণতন্ত্র আনবেন?

উত্তরাধীকারের রাজনীতির মানসিকতায় বিএনপির বহু নেতাকর্মী মনে করে তারেক রহমানই বেগম জিয়ার অবর্তমানে দলটির কান্ডারী। কান্ডারীর নিজের শহরে দলে গণতন্ত্র নেই। নেতাকর্মীরা তার কাছে ফরিয়াদী হয়ে সুবিচার পান না। মামলার সাজা মাথায় নিয়ে তিনি নিরাপদে দল পরিচালনা করছেন!  মা-কে মুক্ত করতে তিনি ভিডিওবার্তা দিচ্ছেন বিদেশ থেকে। তাতেই নাকি দেশে গনতন্ত্র আসবে! হাজারো নেতাকর্মী জেলের ঘানি টানছেন।

দেশে আজ একটা আক্ষরিক অর্থের বিরোধীদল নেই। এ না থাকবার দায় কি বিএনপি এড়াতে পারে?

সরকারের বহু কর্মকান্ডে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের লাখো সাধারন নাগরিক বিরক্ত। কিন্তু জনগন কেন বিএনপিকে এ সরকারের বিকল্প ভাবছে না? বিএনপির ভাষায় ‘জুলুমবাজ, দেশবিরোধী’ এ সরকার তিন মেয়াদে একটানা ক্ষমতায়। দীর্ঘতম ক্ষমতার থাকার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। এতদিনে কেন ‘দেশবিরোধী’ একটা সরকারের বিরুদ্ধে একটা জনআন্দোলন গড়ে তুলতে পারল না বিএনপি ?

ঋত্তিক ঘটকের \\\'সুবর্ণরেখা\\\'র একটি সংলাপে তিনি বলেছিলেন  \\\"আত্মহত্যার সামর্থ্য পর্যন্ত নাই\\\"।

যে কোন বাস্তবতায় সব বড় পরাজয়ে মুল নেতার দায় থাকে। যদিও দায় স্বীকার করবার সততা বা নীতির উদারতার কোনটিই আমাদের রাজনীতিতে নেই। রাজনৈতিক সংস্কার, দল পুর্নগঠন বলতে জনগনকে বোকা বানাতে কেবল যে কয়জন পদধারী রাজনীতিকে জীবিকা করে খাওয়া কেরানীকে অদল-বদল করার তামাশা নয়, জনগন এখন তা বোঝে।

পলিটিক্স করতে পলিসি জানতে হয়, মেধার চর্চা লাগে। শুধু বাই ডিফল্ট যোগ্যতায় দেশে এখনও দলীয় রাজনীতি করা যায়,মানি । কিন্তু, জাতীয় নেতৃত্ব কি দেয়া যায়?  অপেক্ষাকৃত চোর অসৎকে, রেখে অপেক্ষাকৃত ভালো মানুষকে মুল্যায়ন করতে হয়। পরামর্শ নেবার ক্ষেত্রেও।
এরশাদ জামানায় ফুলবাড়িয়ার ফুটপাতের জুতা বিক্রেতা, লন্ডনে পৌর কাউন্সিলার পদে হেরে যাওয়া যদি টাউটেরা যদি কোন নেতার অফিশিয়াল উপদেষ্টা হলে কি আর করার থাকবে?  দলের মাষ্টার্স পাশ করা কর্মীকে তো তখন অন্য শহরে মামলায় ফেরারী হয়ে রিক্সা চালিয়ে ভাত জোগাবার রাস্তাই খুজঁতে হবে।

বাংলাদেশে সব সময়ে সব সফল রাজনীতিকের সাফল্যের  নেপথ্যের কারন ছিল অন্তত নিজ দলের প্রতি সততা, সঠিক সিদ্বান্ত ও যোগ্য রাজনৈতিক কৌশলী টীম।

ফেসবুকে বিপ্লব করে ক্ষমতায় যাওয়া যায় না। বিএনপি নিকট অতীতে শুধু ফেসবুকে সক্রিয় ছিল। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর সেখানেও কর্মীদের ...কতদুর আর কতদুর দীর্ঘশ্বাস।
বিপ্লব ফেসবুকে কপি-পেষ্ট ষ্টাটাসে, কমেন্টে ঝাড়বার মতো সস্তা জিনিস না।  আন্দোলনের নামে স্যোশাল মিডিয়ায় বক্তৃতাবাজির ভিডিও ছাড়বার সংস্কৃতি বাংলাদেশে প্রথম শুরু করেছিল হিজবুত তাহরীর। আর বিশ্বে শুরু করেছিল চরমপন্থী জঙ্গিবাদী আইএস।

দুই 

দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গনতন্ত্র নেই। সর্বক্ষেত্রে দলবাজিকে প্রাধান্য দেয়া সুবিধাতন্ত্র চলছে। গণতন্ত্রের কথা বললেই ক্ষমতা শোনায় জিডিপির সুচকের রেকর্ড। দেশের দুটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের একটি বিএনপি। সবকিছু একপেশে হয়ে যাবার রাজনৈতিক দায় কি বিএনপি এড়াতে পারে?

আমাদের রাজনীতিতে তারেক রহমানরা বাই ডিফল্টের ফল কি-না একদিন ইতিহাসই তার বিচার করবে।

কিন্তু, তারেক রহমানকে যারা ঘৃনা করে, বিএনপিকে অপছন্দ করে তারাও বিএনপিকে অন্তত পছন্দের বিরোধী দলের জায়গায় দেখতে বাধ্য। কারন বিএনপি বাংলাদেশী রাজনীতিতে নিশ্চিহ্ন হবার প্রথম ফলাফলটি অত্যান্ত ভয়াবহ। আর সেটি হল দেশের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিটির সরাসরি জামায়াতের পতাকাতলে তখন প্রকাশ্য নিশ্চিত উত্থান হবে। কেননা বিএনপির পর দেশে আওয়ামীবিরোধী প্রো-ইসলামীক সবচেয়ে সংঘবদ্ধ ধারাটির নিয়ন্ত্রন এখন জামায়াতে ইসলামীর হাতে। বিএনপি বিলীন হলে বাই ডিফল্টে আওয়ামীবিরোধী শিবিরটি এককভাবে চলে যাবে তাদের কব্জায়। 

তিন

জোট সরকার আমলে ২১ এ আগষ্টে যখন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ঘৃন্য চেষ্টা হয়েছিল, তার প্রতিবাদে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগ আহবায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে মাঠে ছিলাম। স্বাধীনতা পরবর্তী ২০০৯ সাল পর্যন্ত আমি ছিলাম  মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের কমিটির সর্বকনিষ্ঠতার বিচারে তৃতীয় সদস্য। ওয়ান ইলেভেনের আগ মুহুর্তে একটি জাতীয় দৈনিকে যোগ দেবার সাথে সাথে দলীয় রাজনীতির সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করি। কিন্তু, বাংলাদেশের একজন  নাগরিক হিসেবে আজ খালেদা জিয়ার জামিন না পাওয়াকে চরম  ন্যায়হীনতা বলে বিশ্বাস করি। এই বিশ্বাস করাকেও ক্ষমতা সম্ভবত তার ক্ষমতার চোখে অপরাধ হিসেবে দ্যাখে।

ন্যায়বিচার, ইনসাফ সুশাষনের মুল কথা নিয়ে এ দেশটা স্বাধীন হয়েছিল।
সেসব নিয়ে খুব সঙ্গত ন্যায় কথাগুলি বলাও দেশে এখন অন্যায়।
সাংবাদিকতায় থেকেও দলবাজি না করা দেশে এখন অপরাধ!  দলবাজ চাটুকারদের চোখে বেকুব, ক্ষমতার চোখে অতিবিপ্লবী শত্রু। আইসিইউতে মুমুর্ষ আসল বিরোধীদলও ক্ষমতায় থাকতে তাই করত। আবার কোনদিন গেলেও তাই করবে। আর সব আমলে সংগ্রাম করে এই যে লেখালেখি, সেইটা জীবন।

চার

দেশটার নাম গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। তাই হয়তোবা ক্ষমতাশীনরা সব আমলে মনে করে এটা তাদের ক্ষমতার প্রজাতন্ত্র।

পাচঁ

আর আমার নিজের...
দেশের কাছে, কোন সরকারের কাছে ব্যাক্তিগত কিচ্ছু চাইবার নেই। শুধু দেশটা ভাল থাকুক, ভালো থাকুক মানুষগুলো সেইটাই চাওয়া।

কী করব, সুবিধার দাসত্ব আর নৈতিকতাকে যে একসাথে ভালবাসা যায় না। অগত্যা আমাকে আমার বোধের অক্ষরে বিবেকের কালিতে শেখা লেখালেখিকেই ভাল বাসতে হয়।
বুকের স্বপ্নের সবকটি অক্ষরে দেশটাকে ভালবাসি।

পেশাগত জীবনের পুরোটা সময় ধরে সাংবাদিকতাই করছি। এখনও সাংবাদিকতার রোজগারে দেশে আমার মায়ের সংসার চলে।

সেই সাংবাদিকতা সুযোগের পালে, সুবিধার বাতাসে নিজেকে সপে সাংবাদিকতার নামে ক্ষমতার মাছি হয়ে লাম্পট্যের পরকীয়া করতে শেখায় নি।
বাংলাদেশের কোন সরকারের কাছেই লেখালেখির নামে দালালীর দামে কোন পুরস্কার,আশীর্বাদ পাবার প্রত্যাশা নেই। পরম করুণাময়ের নামে, বিশ্বাসের নামে বিনিময় মুল্যহীন, বাজার মূল্যহীন জেনেও চোখে দেখা সত্যগুলি আপনাদের জানিয়ে চলি ।

তবু স্বপ্ন দেখি, রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের এক সময় অবসান হবে দেশে। দেশের মানুষ দেশের গনতন্ত্রের পথে স্বাধীনতার মূল চেতনার গন্তব্যে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে গর্ব করবে।
অন্ধ ডানের বায়ে, আর ভ্রষ্ট বামের ডানে রাজনীতি হবে শুধু জনমুখী, বাংলাদেশমুখী। রাজনীতির মানে তখন শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকা অথবা যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই থাকবে না।
পুনশ্চঃ আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে আমার তারেক রহমান সংক্রান্ত লেখাটির লিংক এখানে সংযুক্ত-
https://www.sylhetview24.net/news/details/Feature/105996

মুনজের আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্যে কর্মরত সাংবাদিক।

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন