Sylhet View 24 PRINT

শাবিপ্রবির জিইবি বিভাগ, অনাকাঙ্খিত ঘটনা ও কিছু প্রশ্ন

:: মাহমুদুল হাসান ::

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-১৯ ১১:৪৭:৫৭

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ শুধুই একটি বিভাগ নয়; এখানে প্রতিদিন শতসহস্র প্রাণের স্পন্দনে স্বপ্নপূরনের চর্চা হয়। উদ্ভাবন কিংবা জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই যুগে যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের কাছে আশঙ্কাজনক হারে নিচের দিকে সেখানে শাবিপ্রবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগ পুরোটাই ব্যতিক্রম। ২০০৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু করা বিভাগটি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাঙ্খিত জায়গা। সম্প্রতি এ বিভাগেরই একজন শিক্ষার্থী প্রতীকের আত্মহত্যা ও বিভাগকে নিয়ে ঐ শিক্ষার্থীর পরিবারের কিছু সদস্যের বিভ্রান্তিকর সিরিজ বক্তব্য বিভাগের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য যথেষ্ট দীর্ঘশ্বাসের সৃষ্টি করেছে।

আমরা যারা জীবনের একটা দীর্ঘসময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হেটে এসেছি তারা উপলব্ধি করতে পারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বা নিজের বিভাগ কতটুকু আবেগের জায়গা। একটা ডিপার্টমেন্ট বা বিভাগ একজন শিক্ষার্থীর কাছে নিজের পরিবারের মত; যেখানে প্রতিনিয়ত লালিত হয় হাজারো শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা।

প্রতীকের লাশটি যখন মর্গে রাখা ছিল আমি হাসপাতালের বারান্দায় জিইবি বিভাগের শতশত শিক্ষার্থীদের চোখে পানি দেখেছি, দেখেছি স্যারদের অসহায় চোখে প্রতীককে ফিরে পাবার দীপ্তবাসনা। কিন্তু সেটা আর সম্ভব ছিলনা। প্রতীকের অভিমানের পাহাড় হয়ত সেদিন হিমালয়কেও ছাড়িয়েছিল। এ পৃথিবীর কোন ভালোবাসাই ওকে ধরে রাখতে পারেনি।

স্বাভাবিকভাবেই প্রতীকের পরিবারের এ শোক কাটিয়ে উঠা অনেক কষ্টকর। এরকম একটা সম্ভাবনাময় তরুণের রক্তপ্রবাহ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়াটা নিঃসন্দেহে পরিবার, দেশ ও জাতির জন্য অপরিমেয় ক্ষতি।  কিন্তু শোকে বিহব্বল প্রতীকের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, প্রতীক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে আরেকটি পরিবার রেখে গিয়েছে; সেটি জিইবি পরিবার। প্রতীকের এমন অনাকাঙ্খিত চলে যাওয়ার পেছনের আসল রহস্যউদঘাটন আমাদের সবারই কাম্য। কিন্তু খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে প্রতীকের পরিবারের কিছু সদস্য ও কতিপয় অতিউৎসাহী মানুষ যেভাবে প্রতীকের মৃত্যুর জন্য ঢালাওভাবে জিইবি বিভাগ ও  বিভাগের শিক্ষকদের দায়ী করেছেন তাতে উনারা প্রকৃত অর্থে কতটুকু আসল রহস্য জানতে চান সে ব্যাপারে আমি সন্ধিহান (?)। তাই বাধ্য হয়েই কিছু লিখতে হলো।
 
প্রথমেই আসি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ প্রসঙ্গে; এই বিভাগটি যদি শিক্ষার্থীদের সাথে এতটাই বিমাতাসুলভ আচরণ করতো তাহলে জিইবি বিভাগ দেশজুড়ে ব্র্যান্ ডহতোনা। মনে হতে পারে একটু বেশীই বলছি। কেউ যদি শাবিপ্রবিতে বেড়াতে আসেন একটু কষ্ট করে-বিল্ডিং এর দু'তালায় ঘুরে যাবেন। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যারাত- বিরামহীনভাবে একঝাঁক গবেষণাপাগল কর্মদ্যোম মানুষ দেখবেন ৮টি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগারে উদ্ভাবনের নেশায় কাজ করে যাচ্ছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ফেইসবুক পেইজ বা বায়োটেকনোলজির বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে একটু ঢুঁ মেরে দেখবেন, সেখানে হাই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নালে পেপার পাবলিকেশনের প্রতিযোগিতা হয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্নরি সার্চ অর্গানাইজেশন, বিভিন্ন বায়োটেকফার্ম ও ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে সুনামের সাথে কাজ করছে জিইবি গ্র্যাজুয়েটরা। আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পি.এইচ.ডি/পোস্টডক গবেষণা করেছে শাবিপ্রবিরজিইবিগ্র্যাজুয়েট। শাবিপ্রবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগকে নিয়ে এরকম অসংখ্য সাফল্যগাঁথা লিখা যায়। এবং হ্যাঁ– এই বিভাগকে নিয়ে কেউ যখন না জেনে বা আবেগের তাড়নায় বিভ্রান্তিকর কথা বলে তখন আমাদের প্রতিবাদ করতে হয়। জিইবি বিভাগ থেকে এই পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছে (শাবিপ্রবিতেই নয় জন)। প্রতীকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি সামনে এসেছে। শিক্ষক নিয়োগ কখনই একটা ডিপার্টমেন্টের একক সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। এটি সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি সিদ্ধান্ত। সেখানে অবাক করার বিষয়, একজন শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ভাইভা কার্ড না পায় সেজন্যে ঐ বিভাগের শিক্ষকদের কিভাবে দায়ী করা হয়?
উপরে এত যে সাফল্যের গল্প শুনালামএসবের পেছনের কারিগর কারা? এটা হঠাৎ করে আলাদীনের কোন চেরাগ থেকে পাওয়া উপহার নয়।কিছু প্রচারবিমুখ গবেষণাপাগল শিক্ষকদের নিরলস পরিশ্রম ও সহস্র শিক্ষার্থীর স্বপ্নেরস্ফুরণ আজকের এই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ। অবাক করার বিষয়, প্রতীকের কিছু অতিউৎসাহী আত্মীয় এই বিভাগের কিছু দায়ী (?) শিক্ষকদের তালিকা করেছেন এবং বিভিন্ন সোশালমিডিয়াতে একের পর এক মনগড়া বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন। আমি উনাদের সাথে জিইবি বিভাগের শিক্ষকদের অর্থাৎ স্বপ্নের কারিগরদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।

আপনাদের লিস্টে এমন শিক্ষক আছেন যারকিনা ৬১টিরও বেশি পেপার উচ্চImpact factorযুক্ত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত এবং বর্তমানে তার H-index ১২। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ স্যার দুইবার ইইউ,জি,সি গোল্ডমেডেল লাভ করেন এবং জেনে রাখা ভাল একজন বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সর্বোচ্চ দুইবার ইইউ,জি,সি গোল্ডমেডেল পেতে পারেন। থিসিস এবং সুপারভাইজার নিয়ে একটা কথা এসেছে। একজন সুপারভাইজার যে সবসময় সিজিপিএ দেখে থিসিস স্টুডেন্ট নিবে বিষয়টা এমননা। গবেষণায় ছাত্রেরআগ্রহ, সুপারভাইজারের নিজস্ব দর্শনের সাথে মিল ও এমনকি বিভাগ থেকে থিসিস স্টুডেন্টের পূর্বনির্ধারিত সংখ্যাটাও থিসিস স্টুডেন্ট সিলেকশনে গুরুত্ব পায়। এবং এই প্রসেস সারাবিশ্বেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটামুটি একই রকম।  এছাড়া যে স্যারকে নিয়ে আপনারা কথা বলছেন উনি অনেক ব্যাচেই প্রথম হওয়া স্টুডেন্টকে সুপারভাইজ করেননি।  আমি এখানে দু’টা উদাহারণ টানতে চাই।জিইবি বিভাগের ৩য় ও ৫ম ব্যাচে উনি এমন দু’জন শিক্ষার্থীদের সুপারভাইজ করেছিলেন যারা ছিল কিনা ক্লাসের মধ্যমসারির স্টুডেন্ট। স্বাভাবিকভাবেই প্রথমসারির স্টুডেন্টরা হয়ত একটু হতাশ হয়েছিল। কিন্তু দক্ষ জহুরি কখনো খাঁটিমুক্তো চিনতে ভুল করেননা। এই দুই শিক্ষার্থীর একজন জাপানেরHokkaido University থেকে পি.এইচ.ডি সম্পন্ন করে বর্তমানে জাপানের একটা স্বনামধন্য ফার্মাসিউটিক্যালস ফার্মে গবেষক হিসেবে কর্মরত আছে এবং অন্যজন বেলজিয়ামের Leuven University-তে পি.এইচ.ডি করছে।
আরো যেসকল শিক্ষকদের নাম দিয়ে তালিকা করেছেন তাদের মধ্যে একজন গতবছর ডেভেলপিং দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে Young Scientist Award 2018 পেয়েছেন। কেউ একটু কষ্ট করে তালিকায় থাকা নাম দিয়ে গুগল স্কলার এ সার্চ দিলেই সবার সম্পর্কে জেনে যাবেন। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহন ছাড়া নিজের প্রোফাইল এভাবে গড়তে পারেন না। এটা একটি সম্মিলিত প্রয়াস। জিইবি বিভাগের শিক্ষকদের এমন প্রোফাইল বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনা ও গবেষণার মনোভাবকেই নির্দেশ করে। আজ জিইবি বিভাগে এত যে কর্মযজ্ঞ, এত যে গবেষণার কথা বলছি, একটি বিভাগ যে প্রতিনিয়ত এদেশের তরুণদের মানবসম্পদে পরিণত করছে এসবের কারিগর কিন্তু ঐ তালিকাভুক্ত মানুষগুলোই। এত সহজে কোন তদন্ত ছাড়াই আবেগের তাড়নায় ঐ মানুষগুলোর প্রতি আপনারা আঙ্গুল তুলে হাজারো শিক্ষার্থীদের রোলমডেলদের কি ছোট করছেন না?

এবার আসি প্রতীক প্রসঙ্গে। হ্যাঁ; আমি আমার ছোট ভাই প্রতীক কে নিয়ে লিখছি। যখন আমি প্রতীকের খবরটা পাই, আমার প্রথমেই মনে হয়েছে এর জন্য হয়ত দায়ী। আমি কি পারতাম না ওর একটু খোঁজ রাখতে? আমি পারি নি; যান্ত্রিকতার চার দেয়ালে আবদ্ধ জীবন আমাকে প্রতীকের নিয়মিত খোঁজ নিতে দেয় নি। প্রতীক যখন চতুর্থ বর্ষে প্রজেক্ট করতে ল্যাব এ আসে আমি তখন এমএস এর ছাত্র। আমি আর প্রতীক একই প্রজেক্টে ছিলাম। আমি হাতে কলমে ওকে অনেক জিনিস শিখিয়েছি। এত প্রাণবন্ত আর কর্মঠ একটা ছেলের জীবনে হঠাৎ করেই কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা সামনে চলে আসে। কয়েক বছরের একটা রিলেশনের ব্রেক-আপ এবং প্রজেক্টের চাপ ওকে অনেকটাই বিমর্ষ করে তুলে। তারপর অনেকটা সামলেও নেয়। তারপর ওর জীবনে নতুন মানুষ আসে। আমরা তখন ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছি। পরবর্তীতে আরো অনেক ইস্যুতে ওর মধ্যে ডিপ্রেশন আসে। বন্ধুবান্ধব সবার সাথে ওর দূরত্ব বাড়তে থাকে। আমরা ওকে দূর থেকেও বিভিন্ন সাপোর্ট দেবার চেষ্টা করেছি বিভিন্ন সময়। সর্বশেষ গত মাসের মাঝামাঝিতে ওর সাথে দেখা হয়। GRE তে তে ভাল স্কোর করেছে। অামেরিকার বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করতেছে। আমি ওর চোখে ওইদিন কোন ডিপ্রেশন দেখেনি, দেখেছি সম্ভাবনার দ্যুতি। হয়ত কোন প্রফেসরের রিপ্লাই কিংবা কোন ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যাডমিশনের অফার লেটার এসে  ওর জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু প্রতীকের আর জানা হবে না। প্রতীক আর ফিরবে না। ধীরে ধীরে সবকিছু সামলে নেয়া ছেলেটা কেনই বা আবার এমন অভিমান করলে যে তাকে আমাদের ছেড়ে চলে যেতে হলো?
নিম্ন মধ্যমআয়ের একটি দেশে আমাদের বসবাস। যেখানে স্বপ্ন দেখাটাও চ্যালেঞ্জিং; তবুও আমরা স্বপ্ন দেখি। অনেক হতাশার মধ্যেও হাজারো সম্ভাবনা মরচে ধরা দিগন্তকে ভেঙ্গে চুরমার করে এখানে সফল হয়। আমি জানিনা আমার ভাইটি কেন এত অভিমান নিয়ে আমাদের মধ্যে আর থাকতে চায়নি? কিন্তু একটি মেধাবী শিক্ষার্থী যখন বেঁচে থাকার সব আশা জলাঞ্জলি দিয়ে হারিয়ে যায়; সেখানে দায়টা আমাদেরও। এই দায় হয়ত আমি , পরিবার, ডিপার্টমেন্ট বা পুরো দেশ নিতে পারে। কিন্তু সত্যটা হচ্ছে প্রতীক আর ফিরবে না। তদন্ত হচ্ছে, সত্যটা উঠে আসুক। আমরা আবেগের বশবর্তী হয়ে আর যেন কোন বিভ্রান্তিকর ও আক্রমণাত্মক কথা না ছড়াই। আর কেউ যেন প্রতীক না হয়।


মাহমুদুল হাসান
সহকারী অধ্যাপক
ফার্মাসিটিক্যালস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি বিভাগ
বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী (ষষ্ঠ ব্যাচ)
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ
শাহজালাল বিজ্ঞান ওপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ।E-mail: mhasan.pib@sau.ac.bd

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.