Sylhet View 24 PRINT

'একুশ আসে ফিরে ফিরে'

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০২-১৯ ১৫:১৭:১৩

নওরোজ জাহান মারুফ :: সময় অবিরাম চলে যায় নদীর স্রোতের মত। এ ভাবেই কালের গর্ভে বিলীন হয় দিন-মাস-বছর।এ ভাবেই ‘৫২র ভাষা আন্দোলনের বছর মিশে একাকার হয়ে গেছে অনন্তকালের মাঝে।
একুশ বাঙালীর অহংকার, একুশ বাঙালীর গর্ব । অমর একুশ আমাদের মাঝে ফিরে ফিরে আসে নব চেতনা ও নব উদ্দীপনা নিয়ে।
আমাদের সারা জীবনই একুশের ডাক প্রতিধ্বনিত হবে, আনন্দ উল্লাস বিজয়ের গৌরবে উদ্দিপ্ত হবে আজীবন। বাঙালী জাতিসত্তা আর ‘৫২-র ভাষা আন্দোলন এক সূত্রে গাঁথা। বাঙালীর হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন মেধায় মননে একুশের সাথে মিলেমিশে একাকার।
অমর একুশ বা মহান শহীদ দিবস আমাদের চলার পথের ধ্রুবতারা। আমরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্বে লড়েছি, লড়েছি স্বৈরাচারের বিরুদ্বে; আজও লড়েছি একুশের চেতনা বুকে লালন করে ই।

আমাদের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন থেকে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত হয়। কিন্তু দূ:খজনক ভাবে বলতে হয় আমাদের মধ্যে এখনও একুশের চেতনা প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ একুশের চেতনাকে বুকে লালন করেই ১৯৭১সালে মুক্তিযুদ্ব এগিয়েছিল।
মুক্তিযুদ্বের সূচনালগ্ন কিন্তু সেই ভাষা আন্দোলনে ’৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারীর সময়ই সূচিত হয়।

তখন ১৯৪৮ সাল , সেই থেকে শুরু করে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত গোটা পূর্ব বাংলা উতপ্ত হয়ে উটল। পাকিস্তানের লোক সংখ্যার ৫৬ ভাগ বাংলা ভাষাভাষী হওয়া সত্বেও পাকিস্তানের একরোখা মুসলিমলীগ সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি চরম অবজ্ঞা ও অবহেলা দেখাতে শুরু করল। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার কার্জন হলে কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দৃঢ় কন্ঠে ঘোষণা দিলেন একমাত্র উর্দূই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। জিন্নাহর এমন একরোখা ঘোষণার সাথে সাথে পুর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে সারা বাংলায় ফেটে পড়ল।

১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী (৮ ফালগুন ১৩৫৮ বাংলা) ভাষার অধিকারে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের লক্ষ্যে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষধ পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর বিরোদ্বে প্রতিবাদ মিছিল বের করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের আমতলায় সর্বস্হরের ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে থাকে। ছাত্র-জনতা পাকিস্তান সরকারের জারী করা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার চেষ্টায় লিপ্ত হতে থাকে।
১৯৫২ সালে র একুশ ফেব্রুয়ারী জুলুমবাজ পাকিস্তানী পুলিশ বাহিনী মুসলীমলীগ সরকার আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপর নির্মমভাবে অতর্কিত গুলি বর্ষণ শুরু করতে লাগল । যার ফলে সাথে সাথে শহীদ হলেন আমাদের বাংলা মায়ের দামাল ছেলে সালাম,বরকত, রফিক,জব্বার,সফিকসহ আরও নাম না জানা অনেকে ।
এই দিন ঢাকা রাজপথ শহীদের রক্তে রণ্জিত হয়ে উঠল । শোকাবহ এই ঘটনায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষোভের আগুন জ্বলতে লাগল দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ।বাঙালী বীরের জাতী। বাঙালী মাথা নত করতে জানে না ।বাঙালী বুলেটের জবাব দিতে জানে। পাকিস্তানী শাসক বাহিনী র বর্বর সিদ্বান্তে বীর জনতার সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং শ্লোগান নিষিদ্ব এই ঘোষণা দিলে বীর বাঙালী ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যায় এই বলে “বল বীর , বল উন্নত মমশীর, শীর নেহারী আমারি নত শীর, ঐ শিখর হিমাদ্রীর”।
ক্রমবর্ধমান গণ আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ অবধি পূর্ব বাংলার ছাত্র-জনতার কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এবং ১৯৫৬ সালে সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, মানুষের মুখের ভাষা এবং কৃষ্ঠির অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ২১শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দিবার পর বাঙালীর বুক গর্বে ফুলে উটল। একুশে ফেব্রুয়ারীকে সারা বিশ্বে সার্বজনীন পর্যায়ে গভীর শ্রদ্বা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপন করা হয় ।

পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালী জাতীর আত্নত্যাগের ইতিহাস নতুন করে জানান দিলে সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে। সেই সাথে উচ্চারিত হয় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা।
একুশকে বুকে ধারণ করেই সারা পৃথিবীর মানুষ ভালবাসায় লালন করছে মাতৃভাষার এ দিনটিকে।
বাঙালী জাতী নিজের রক্ত দিয়ে সারা বিশ্ববাসীকে শিখিয়ে দিয়েছে মাতৃভাষাকে ভালবাসার মূলমন্ত। যত অভাব অনটনই থাকুক না কেন, একুশের চেতনা বুকে ধারণ করে দেশকে ভালবাসতে হবে। দেশের জন্য গর্বিত হতে হবে ।এটাই একুশের মহান শিক্ষ, মহান ব্রত। বাঙালী জাতীয়তাবাদের বীজ নিহিত ছিল অমর একুশের মধ্যে।
ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের অজস্র নেতাকর্মী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় তাদের মনোবল আরো বেড়ে গিয়েছিল এবং ভাষা আন্দোলন সফল হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে বাঙালী জাতীয়তাবাদেরও উন্মেষ ঘটে ।
বাঙালী জাতীয়বাদের আদর্শ অন্তরে ধারণ করেই এতোদণ্চলের মানুষ পরবর্তীতে অধিকার আদায়ে বলিয়ান হয়ে উঠে।
ছাত্রলীগের প্রতিষ্টাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার তাজমহল সিনেমা হলে ১৯৫৩ সালে ছাত্রলীগের অবদান স্বীকার করে সংগঠনটির কাউন্সিলে সভাপতির বক্তব্যে বলেন ছাত্রলীগ ভাষা আন্দোলনের যে নেতৃত্ব দিয়েছে তা পূর্ব বাংলার মানুষ কোন দিন ভুলবে না । তিনি বলেন বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে যে আত্নত্যাগ আপনারা দেখিয়েছেন এ দেশের মানুষ কোন দিন তা ভুলতে পারবে না । আপনারাই ( ছাত্রলীগ) এ দেশে বিরুধী দল সৃষ্টি করেছেন । শক্তিশালী বিরুধীদল ছাড়া গনতন্ত টিকততে পারে না ।
২০১৪ সালে র পহেলা ফেব্রুয়ারী বইমেলা বাংলা একাডেমীর ছোট্র পরিসর থেকে স্হানান্তরিত হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিসৃত করা হয়েছে । বৃহৎ আঙ্গিকে বৃহৎ যায়গায় পাঠক সমাজ বইপ্রেমী এই সব মানুষ বইমেলার আয়োজনে মুগ্ধ । মেলা কলেবর বেড়ে যাওয়ায় পাঠকের সুবিধাই হবে একটু বেশী । একুশ এভাবেই প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাস গ্রন্হ মেলার মাধ্যমে ই একুশের চেতনা লালন করে আসছে ।
প্রতিটি একুশ,স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে দেশকে ভালবাসার শপথ নিয়ে সবাই মিলে হাতে হাত ধরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে দেশকে সমৃদ্বির দিকে এগিয়ে নিতে হবে । সাম্প্রদায়িকতা নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভাল লাগার মানসে একুশকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে ।
একুশকে ঘিরেই মাসব্যাপী বইমেলার এ আয়োজন যা বাংলার শিকড়ের সন্ধান করে , এটাই একুশের মূল চেতনা ।
ভাষা আন্দোলনের সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্পর্ক অভিন্ন । এ পথচলা ক্লান্তীহীন ।পথ চলতে চলতে এক সময় চ্যুতি-বিচ্যুতি ঘটতেই পারে - তবে সেটা কাম্য নয় । সাম্প্রতিক সময়ে কারণে-অকারণে কিছু নেতা কর্মীর আচরণকে অনেকে অনেক ভাবে নিয়েছেন । তবে হ্যাঁ, ছাত্রলীগের বিশালত্ব অল্প কারনে ভেঙ্গে যায় না । ছাত্রলীগের ইতিপূর্বের যে অর্জন সূচিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের পূর্বে ও পরে সেটাকে অন্তত ধরে রাখুন । এ অর্জন বিশাল বড় অর্জন । সামান্য কারনে এত বড় অর্জন ও পাওয়াকে কোন ভাবে ম্লান করে দেয়া যায় না ।নেতা কর্মীরা একটু সোচ্চার হলেই অপকর্মগুলিকে ধোলায় মিশিয়ে দেওয়া সম্ভব এবং লীগে পরগাছাদের উপড়ে ফেলতে হবে । নিশ্চয়ই ছাত্রলীগের কেউ একজনের ডাকে ছাত্রলীগ আদর্শলীগ হিসেবে স্বমহিমায় ফিরে আসবে ।
বর্তমান সময়ে একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানটি যেন একই সূত্রে গাঁথা। আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত এবং শহীদ আলতাফ মাহমুদের সুরে কালজয়ী এ গানটি অমর একুশের প্রতিধ্বনি হয়ে উটে, তাছাড়া ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায় শিল্পী আব্দুল লতিফের রচনা ও সুরে এ গানটিও মানুষের মনে অমর একুশের চেতনা উজ্জিবিত করে।




সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.