Sylhet View 24 PRINT

আবুসিনা ছাত্রাবাস: ব্রিটিশ মেডিকেল স্কুলে সেবা ছিল সেই আমলেও

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-০৯ ২০:৩১:৫৫

কাইয়ুম উল্লাস :: কদিন ধরে লিখব লিখব করে লেখা হচ্ছে না। প্রসঙ্গ সিলেটের আবু সিনা ছাত্রাবাস। সবাই এটিকে আবু সিনা ছাত্রবাস নামে ডাকছেন, অথচ এটিকে আমি আবু সিনা ছাত্রবাস বলতেই রাজি নই। কেননা, এটি এক সময় ব্রিটিশ চার্চ ছিল। পরে এখানে ব্রিটিশ মেডিকেল স্কুল করা হয়েছিল। ১৯৩৪ সালের দিকে ইংরেজ সৈনিকরা আহত হলে চিকিৎসা দেওয়া হতো।

আসুন এ নিয়ে কেন লিখতে বসলাম-সেই কথায় আসা যাক। সম্প্রতি এই আবু সিনা ছাত্রবাস নিয়ে দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে আছেন। কেন তারা মুখোমুখি ? সরকার সারাদেশের মত সিলেটেও একটি জেলা হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। আবু সিনা ছাত্রবাসার এতদিনের পরিত্যক্ত এই জায়গায় হাসপাতালটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কাজটা অনেক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এখানে শুরু হয়। ইতিপূর্বে ভিত্তিপ্রস্তুরের নাম ফলকও লাগানো হয়েছে। তখনও ঐতিহ্য সচেতন কিছু মানুষ ঘুমে ছিলেন। তারা শুধু এই হাসপাতালের কাজ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত যে নিদ্রায় ছিলেন, তা নয়। আরও গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন ছিলেন এই ঐতিহ্যওয়ালারা। হঠাৎ একদিন তাদের ঘুম ভাঙলো। তারা বললেন, ‘ আবু সিনা ছাত্রাবাস ব্রিটিশ আমলের একটি স্থাপত্য নির্দশন। একে ধ্বংস করা যাবে না। সংরক্ষণ করতে হবে। আর হাসপাতালকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে শহরের বাইরে নিয়ে ফেলতে হবে।’

ঐতিহ্যওয়ালাদের এই দাবি শুনে স্বাভাবিকভাবেই যারা সিলেটের উন্নয়ন চান, তাদের মনে কষ্ট লাগে। শুধু তাই-ই নয়, তাদের সন্দেহের তীর ঐতিহ্যওয়ালাদের ওপর পড়ে। তাদের ধারণা, যারা হাসপাতাল চান না, তারা কারো পক্ষে দালালী করছেন। সেটা হতে পারে ক্লিনিকের, অথবা কোনো রাজনৈতিক পক্ষের গোপন কোনো মিশনের হয়ে তারা আন্দোলন করছেন। এই সন্দেহের যৌক্তিক কারণ হলো- এই ঐতিহ্যওয়ালারা এর আগে সিলেটের কোনো ঐতিহ্য সংরক্ষণে জোরালো ভূমিকা রাখেননি। এখনো যে রাখছেন, তা কিন্তু নয়। কেননা, তাদের চোখের সামনেই সিলেটের জৈন্তা রাজ বাড়িটি মাটির নিচে চলে গেছে। সিলেটে ব্রিটিশ আমলের একটি বাইবেল পাঠাগার ছিল, সেটি এখন মঙ্গলগ্রহে আছে- সেখানে একটি টাওয়ার হয়েছে ! সিলেটে ‘ছিলট একাডেমি’ ছিল, সেটি চান্দে দেখা যায় ! গ্রাস হচ্ছে শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ।

একবার আমি মুক্তিযুদ্ধের একটি রিপোর্ট করতে গিয়ে ক্বিনব্রীজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে গিয়েছিলাম গৌড়গোবিন্দের টিলায় । একজন বলেছিল, সেখানে বহু পুরোনো কিছু ব্রীজের ধ্বংবশেষ পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখা আছে। কিন্তু যাচাই-বাছাই করে দেখলাম, এগুলো ক্বিনব্রীজের নয়। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের সময় বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত ক্বিনব্রীজের ধ্বংসাবশেষ কী ঐতিহ্যওয়ালারা খুঁজে দিবেন ? সম্ভবত কেজি দরে এগুলো বিক্রি হয়েছে সেই সময়েই। এভাবে এই ঐতিহ্যগুলো হারিয়েছে-হারাচ্ছে। হঠাৎ ব্রিটিশ আমলের মেডিকেল স্কুলে যখন হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে , তখন তারা ঐতিহ্যের কথা বলছেন। তাই এটা উন্নয়নের বিরোধী কোনো নীলনকশা ভেবে একটি পক্ষ রাজপথে নামে হাসপাতালের পক্ষে। তারা এখানে হাসপাতাল চায়। তাদের দাবি- মানুষের মৌলিক অধিকার চিকিৎসাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে শহরের বাইরে নিতে দেওয়া হবে না।

এতক্ষণ পরিস্থিতি বুঝাতে আমি বকবক করলাম। এবার আসি কাজের কথায়। দিনদিন এ নিয়ে রশি টানাটানি বাড়ছে। যুক্তি দেখানো হচ্ছে, ঐতিহ্যের পক্ষে- হাসপাতালের পক্ষে। এখন চলছে লজিক-এন্টি লজিকের লড়াই। কেউ কেউ সিলেটে ব্যর্থ হয়ে এখন ঢাকায় পাড়ি জমাচ্ছেন সংবাদ সম্মেলন করতে। এটা যেন- সিলেটের এই মুর্খরা আমাদের কথা বুঝবে না-শুনবে না; অনেকটা এরকম। যদি ঢাকায় গিয়ে হাসপাতালের কাজ বন্ধ করা যায়।

আমার কথা হচ্ছে- আবু সিনা ছাত্রবাসে যে পরিমাণ জায়গা আছে, তাতে ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যও সংরক্ষণ করা যাবে- হাসপাতালও হবে। বরং ব্রিটিশ আমলে যেখানে সেবা দেওয়া হত, সেখানে একটি হাসপাতাল হলে স্থাপত্য আরও সুন্দরভাবেই সংরক্ষণ করা যাবে। এতদিন তো এই জায়গাটা পরিত্যক্ত ছিল, দেয়ালে ফাটল বাড়ছে; জরাজীর্ণ ছাত্রাবাসের কক্ষ ছিল দেশি রামদার গুদামঘর ! অনেকবার পুলিশ এখান থেকে এই মালগুলো উদ্ধার করেছে। তখন আমাদের ঐতিহ্যওয়ালারা কোথায় ছিলেন ? আমার জানা নেই। হঠাৎ তাদের আবির্ভাব হওয়ায় আজ তারা সন্দেহের তীরে বিদ্ধ। এখন তারা আবুসিনা ছাত্রাবাসের স্থাপত্যের গুরুত্ব বুঝাতে অনেক উদাহরণ দিচ্ছেন। শাবি গবেষকদের দিয়ে এটিকে তাজমহলের সাথে তুলনা করছেন। বাস্তবতা হচ্ছে,  আবুসিনা ছাত্রাবাসে ব্রিটিশ ও ভারত স্থাপত্যরীতির নিদর্শন, সেটি দেখতে তাজমহল দেখার মত কেউ টিকিট কাটবে না ! এটা তারাও বুঝেন, জানেন- আমরাও জানি। শিল্পীরা একটু কাল্পনিক হন! তারা যেকোনো বিষয় কল্পনার চোখে দেখতে পছন্দ করেন। কিন্তু আমাদের উচিত বাস্তবতার আলোকে পথ হাঁটা।

আমার মনে হয়, এ নিয়ে মুখোমুখি না দাঁড়িয়ে-সমাধানের পথ খোঁজা। কীভাবে ঐতিহ্যরক্ষা করে হাসপাতাল এখানেই করা যায়-সেটি নিয়ে এই গবেষণা করলে- এতদিনে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।

 লেখক- সাংবাদিক

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ৯ এপ্রিল ২০১৯/কেইউ/এক

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.