Sylhet View 24 PRINT

'বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে'

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-১৯ ১৫:০৮:৪৯

শফিকুজ্জামান চৌধুরী :: একটি দেশে কচি কচি শিক্ষার্থী শরীরে নিরেট সফেদ কাপড় জড়িয়ে প্রতিবাদমুখী হয়। প্লে-কার্ডে স্লোগান লিখে ‘বিচার চাওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ঢেড় ভালো’। কতটুকু অসহায় হলে পড়ে এই রকম হতে পারে তা মানুষ মাত্রেই সকলের কাছে অনুমেয়। আর হবেই বা না কেন? আমরা কি পেয়েছি কোন হত্যাকান্ডের, কোন ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচার?

এমন উদাহরণ কি আমরা দেখাতে পারবো যা দেখে অপরাধীরা দ্বিতীয়বার সহস্রাবার চিন্তা করে কোন বর্বরোচিত অন্যায় করতে। আমাদের  চারিপাশে পা বাড়ালেই মড়ার খুলি, গলিত মাংস, আর রক্তাক্ত খন্ড খন্ড মাংসের দলা। সবাই দেখছে। সবাই পড়ছে। প্রতিদিন অনলাইনে, প্রিন্ট মিডিয়ায়, টেলিভিশনে এতো এতো লোমহর্ষক ঘটনা দেখে কারোর পক্ষে মাথা ঠিক থাকার কথা নয়। আর তারা তো ক্ষুদে শিক্ষার্থী। আক্রান্ততো হচ্ছে তারাই। তাদের যৌক্তক মানবীয় স্লোগান তাদের বোধে আসাটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ রাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তাইতো তারা রাস্তায় নেমেছে। টি-শার্টে লিখছে ‘গা ঘেষে দাঁড়াবেন না’।  

রাস্তাঘাটে, স্টেশন-প্লাটফর্মে সর্বত্র অভুক্ত শিশুদের আহাজারি। আবার পুরুষের কামনার বলিও হয় এইসব অভুক্ত শিশু। রুগ্ন মায়ের শুকিয়ে যাওয়া স্তন আর বাবাদের কঙ্কালসার শরীর থেকে এখন আর ঘামও বেরোয় না। কৃষকরা মাটি কর্ষণ করে ফসল তুলেছে। তারপর ফসলে আগুন দিয়েছে। কারখানায় শ্রমিকের কালিমাখা মুখে হাজার কষ্টের মধ্যে এক চিলতে হাসি। কারণ তার মেয়েটা স্কুলে যায়। বাড়িতে বউটার মুখে উৎকন্ঠা আর হাহাকারের শব্দ। কারণ তার মেয়েটার শরীরে কামার্ত কুকুররে হিংস্র থাবা। তাকে রক্তাত্ব করেছে। ভিসা নিয়ে মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে বেড়াতে এসে একজন পাকিস্তানি কিশোরীর ধর্ষণের শিকার হওয়া- এটা এদেশের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা।

এখানে এখন মানুষরূপী ধর্ষকের আসন পাতা সবখানে। বেহুশ ক্ষমতাদর্পী ধর্ষক-মানুষেরা নোংরা আবর্জনা সরিয়ে নিজেদের খাবার টেবিল সাজায়। কারণ উল্লেখিত সব ঘটনা তাদের কাছে নোংরা-আবর্জনা। দুধের উপরের সরটা তারা তুলে নেয় আর আরামসে ঢেঁকুর তুলে গিলে। সেই সব মানুষ যারা মাটি খুঁড়ে তুলে আনা ফসলে নিজের ভাগ নিশ্চিত করতে পারে না তাদের জন্য তারা ফেলে রাখে উচ্ছিষ্ট। তাদের উদ্দেশে তিনটি প্রশ্ন উত্থাপন করা যায় না- কী, কেন এবং কীভাবে?  রাষ্ট্রের নির্বাহী, আইন, বিচার বিভাগ এই তিনটি স্তম্ভ তাদেরকে পাহারা দেয়। আমাদের এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্য দেশে আজ হত্যা-গুম-খুন-ধর্ষণের পোয়াবারো অবস্থা।    

আমাদের দরকার এখন একটি সাংস্কৃতিক যুদ্ধের। যে যুদ্ধে শুদ্ধ হবে আমাদের মনন-মগজ। ব্যাঙের শীত ঘুমতো অনেক হলো। এবার উঠে প্রতিহত করার সময় এসেছে। জাগুন, জেগে উঠুন অনাগত সুন্দর ভোরের জন্য।


লেখক: সুইডেন প্রবাসী।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.