Sylhet View 24 PRINT

তরল দুধ নিয়ে অপরাজনীতি: ডেইরি শিল্পের মুখে কুঠারাঘাত

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-১০ ২২:৩৫:২৬

:: ডা. মো. নূরুল আমীন ::

আমার দেখা মতে যদিও এখনো দেশের অনেক ডেইরি খামারিগণ ভীষণ অস্বাস্থ্যকর এবং স্যাঁতসেঁতে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে ও ট্রেডিশনাল পদ্ধতিতে লালন পালন করে থাকেন। তারপরও সেটাই এখন আর একমাত্র চিত্র নয়। আর এখনো যারা এই চর্চা করে যাচ্ছেন এটা একান্তই তাদের অজ্ঞতা। এটা একটি চিরায়িত পদ্ধতি এবং সেকেলে। ভুল, ভালো, মন্দ যাই হোক তারা এটাতেই অভ্যস্ত। আবার এর মধ্য দিয়েও অনেক আধুনিক খাবারও গড়ে উঠেছে এবং তারা বেশ সচেতন। পারলে তাদের কাছ থেকে সরাসরি দুধ এর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখুন। এ কথা সকলেই জানেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাভীর দুধ দোহন করলে দুধে জীবাণু সংক্রমণ হওয়া এবং গাভীর ওলান ফোলা রোগ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে, এই দুধের জীবাণুগুলো সব‌ই দুধের ভিতর থেকে আসে!!

দুধ যে পাত্রে দহন করা হয় সেটা সংক্রমিত থাকা, বা যখন গাভীর থেকে দুধ দোহানো হয় তখন বাইরের পরিবেশ থেকে বিভিন্ন নোংরা জিনিস দ্বারা সংক্রমণ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। সর্বোপরি খামার থেকে বের হওয়ার পর বিভিন্ন পর্যায় বিভিন্ন হাত বদলের সময়, যেমন- পাত্র থেকে বদল হ‌ওয়া, ঐখানেও দুধের কন্টামিনেশন হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
অতঃপর সিসা ও পেস্টিসাইড!! দুধ পরিবহনের সময় অধিকাংশ ভেন্ডর বা দুধ বিক্রেতারা দুধের পাত্রের মুখে কচুরিপানা দিয়ে দুধ কেটে -ফেটে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করে থাকেন, যা চলমান পথে কোন নদী, নালা, খাল,বিল থেকে তারা এগুলি সংগ্রহ করে থাকেন!

এই সমস্ত অযাচিত উচ্ছিস্ট ও নোংরা জাতীয় জিনিস দিয়ে দুধ সংরক্ষণ করে যেনতেনভাবে গোয়ালারগণ বা দুধ বিক্রেতারা দুধ বাজারজাত করে। বা বিভিন্ন হোটেলে বিক্রয় করে থাকেন। সে দুধে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া, সিসা থাকা বা পাওয়া বা পেস্টিসাইড পাওয়া বিচিত্র কিছু নয়! একটি দেশের শিল্পকে বিবেচনা করতে হবে তার সার্বিক পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে। এমনিতেই সর্বসাধারণ ও ভোক্তা পর্যায়ে আমাদের বাংলাদেশীদের মধ্যে গড়পড়তা (পুষ্টি নিবারণের স্বার্থে একান্ত বাধ্য না হলে বা দায় না ঠেকলে) তরল দুধ খাওয়ার তেমন কোন সভ্য সংস্কৃতি এখনো পর্যন্ত গড়ে ওঠে নাই (যেটা ভারতে আপামর জনসাধারণের মধ্যে অত্যন্ত সচেতন ও তার সাথে গড়ে উঠেছে এবং তারা এটা তাদের জীবনের অপরিহার্য একটা বিষয় বলে মনে করেন)। যদিও চল্লিশোর্ধ প্রতিটা সুস্থ মানুষ ও অসুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫০ মিলি ননী বিহীন তরল খাঁটি গো-দুগ্ধ পান করা প্রতিটি মানুষের জন্য অপরিহার্য।

বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ করে ৯৩ টি দুধের স্যাম্পলে সীসা পাওয়া গেল বলে বিরাট প্রতিবেদন ছেপে দিলাম (!) আর দেশের মানুষ সেটাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল এবং রাতারাতি দুধের বিপক্ষে অবস্থান নিল! এতে লাভ হল কার? কতটুকুই বা সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া গেল দায়িত্বহীন এই প্রতিবেদনটি ছাপিয়ে?সকলেই কি মনে করছেন এই জনগুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অসম্পূর্ণ মন গড়া একটা ছোট্ট প্রতিবেদন পড়ে মানুষ বিরাট স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে গেলেন বা তাঁরা নিশ্চিত হয়ে গেলেন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে? এটা ভাবার কোন কারন নেই। বরং আমরা বলব, যারা কিছুটা হলেও এই বিষয়গুলি নিয়ে নড়াচাড়া করি এবং ভুক্তভোগী মানুষগুলোকে কিছুটা হল সঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা করি, তাদের দৃষ্টিতে এটা বড় একটা অন্যায় ও গর্হিত কাজ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এটা কি সার্বিকভাবে বাংলাদেশের দুধের চিত্র? না, নিশ্চয়ই তা নয়। এটা একটা বিক্ষিপ্ত চিত্র এবং চরম অজ্ঞতার ফসল! এমন একটা অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন ছাপিয়ে দ্রুত অগ্রসরমান এবং বিপুল কর্মসংস্থানের একটি সেক্টর এর উপর চরম কুঠারাঘাত করা হয়েছে। এটা কোন গঠন মূলক প্রতিবেদন নয়, বরং চরম ধ্বংসাত্মক এবং স্ববিরোধী। অসময়ে এমন একটা প্রতিবেদন তৈরি করে দেশের ডেইরি শিল্পের গতিকে কোন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করাটা হচ্ছে সেটা ভুক্তভোগী মহল জানার অধিকার রাখে। আপনারা যারা অতি দেশ প্রেমিক তাদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ দেশটা কি আপনাদের একার মনে করবেন না যে জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে বৃদ্ধাঙ্গুলি উঁচু করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে তাদের সংখ্যা এদেশে ৮৫%।অতএব, সংশ্লিষ্ট বিষয় যারা বিশেষজ্ঞ তাদের সাথে পরামর্শ করে ভুক্তভোগীদেরকে সঠিক পথটি দেখানো বা পরিচালনার জন্য যদি কোন যুক্তিযুক্ত পরামর্শ থাকে তাহলে সেটা প্রদান করেন। তাহলে দেশ ও জাতি সমভাবে উপকৃত হবে। দয়া করে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে ছাপাবেন না। ধন্যবাদ।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় উপ-পরিচালক এবং প্রাণিসম্পদ বিষয়ক পরামর্শক।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.