সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-২৪ ০১:১৬:২১
ছবি: লেখক
মিন্টু চৌধুরী :: দিনটি ছিল ২০-০৫-২০১৯ খ্রিঃ, সকাল অনুমান ১১:৩০ ঘটিকা। আমি বসে আছি থানার সামনে ফাবিহা ফটোস্ট্যাট এর মালিক পানিধার নিবাসী আতাউর রহমান ভাই এর দোকানে, তাহার টেবিলের সাম্মুখভাগে। একটি গাড়ির কেস স্লিপ দিচ্ছিলাম।
এই সময় আমার সাথে কর্তব্যরত এএসআই আনোয়ার হোসেন একটি মোটরবাইক এর কাগজ নিয়ে এলেন। সবকিছু চেক করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখানোর অনুরোধ করলে উনি উত্তর দিলেন, লাইসেন্স নাই প্রসেসিং চলছে। আমি কেস স্লিপ লেখা শুরু করলে উনি বললেন আমি ছাত্রলীগ করি। পুরো সিলেট শহর ঘুরে বেড়াই কেউ তো সিগন্যাল দেয় না। আপনি সিগন্যাল দিলেন আবার মামলাও দিবেন। আমাকে বললেন আপনি হয়তো বা বড়লেখায় নতুন। প্রতি উত্তরে হ্যাঁ নতুন বলে, মোটর যান আইনের ১৩৭ ধারায় কেস স্লিপ দিলাম। এর পরেই যত বিড়ম্ভনা।
ঘন্টা দুয়েক পরে পরপর দুজন সাংবাদিক ভাই ফোন করে বললেন, মিন্টু ভাই গাড়ি চেকিং নিয়ে কারো সাথে কি কোনো সমস্যা হয়েছে? একটা ছেলে এসে বলল, আপনি নাকি তার গাড়িতে মামলা দিয়েছেন। তাকে বললাম, জ্বি ভাই এটাতো আমার ডিউটি। উনারা বললেন, আমরাও তাকে জিজ্ঞাস করলাম শুধু কি মামলা দিল নাকি টাকা পয়সা নিল। এছাড়া অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে কিনা? সে বলল না, তাহলে কিসের নিউজ করব।
এই ঘটনার পরের দিনেই দেখলাম আমার ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। অবশ্য ধন্যবাদ উনি উনার অভিযোগে একটাও মিথ্যা লিখেন নাই। কেবল নেতা হওয়ার পরও কেন গাড়ি ছাড়লাম না এটাই তাহার অভিযোগ। শুধু তাই নয়, তিনি আরো অভিযোগ তুলেছেন, রমজান মাসে চেকপোস্টের কারণে জনগণের হয়রানি চরম পর্যায়ে। বাংলাদেশ পুলিশও চায় পবিত্র রমজান মাসে কোনো দুস্কৃতিকারী যেন পুলিশের নীরব ভূমিকার সুযোগে আপনারই মতো নেতার বেশে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কোনো মসজিদ তথা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উপর শ্রীলঙ্কাকান্ড ঘটিয়ে না বসে। গাড়ি থামিয়ে কাগজ দেখানো বিরক্তিকর সেটা একশ ভাগ সত্য, কিন্তু হয়রানীমূলক নয়। আপনার কাগজ দেখতে বড়জোর খরছ হয়েছে পাঁচ মিনিট, তাতেই এতো ধৈর্য্যচুতি ? আমাদেরকে তো রোজা মাসে রোদে দাঁড়িয়ে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করতে হয় কমপক্ষে চার ঘন্টা।
করবই না কেন, এটাতো আমার চাকরী। কিন্তু এটাও জানা উচিৎ চাকরী কেবল চার ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকাই না। টার্গেট মোতাবেক কাগজপত্রবিহীন গাড়ি চেক করে কেস স্লিপ দেওয়া, সন্দেহজনক কিছু পেলে বা দেখলে চেক করা। আর যে চেকপোস্ট নিয়ে আপনার এতো মাথাব্যথা সেই চেকপোস্ট বন্ধ করা আমার মতো ক্ষুদ্র অফিসারের এখতিয়ার বহির্ভূত। কারণ, চেকপোস্ট করা হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায়। ফেসবুকে এই পোস্ট দেওয়াতে আমার কোনো দুঃখ নাই, অনুতাপ কেবল বড়লেখায় আড়াই বছর চাকরী জীবনে উপজেলা ছাত্রলীগ এর সভাপতি তানিম ভাই সেক্রেটারী ফরহাদ ভাইসহ প্রায় অর্ধশত ছাত্রলীগ এর নেতা-কর্মী ভাইদের সাথে আমি ব্যাক্তিগতভাবে পরিচিত। ছাত্রলীগ ছাড়াও আওয়ামীলীগ, কৃষকলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগ, সাধারণ জনগণসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের প্রায় কয়েক শত নেতা-কর্মী ভাই আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। তারা কেউ আমার সম্পর্কে একটা কমেন্টসও করল না। তাহলে কী ধরে নেব, বড়লেখার সকল সাংবাদিকবৃন্দের মতো তাহারাও আমার দ্বারা বশীভূত নতুবা আমার ভয়ে ভীত? নাকি তাহারা আপনাদের মতো ফেসবুকে কমেন্টস করার জন্য বাংলা ব্যাকরণ পড়েন নাই? নেতা হওয়ার জন্য শুধু জয় বাংলার শ্লোগান মুখস্থ করিয়াছেন? তারপরও স্বীকার করলাম যে আমি দোয়া তুলশীপাতা না। মানুষ মাত্রই ভুল হতেই পারে। চাঁদেরও কলঙ্ক আছে। মহান ছাত্রলীগ নেতার কাছে আমি যদি অন্যায় কিছু করে থাকি, তাহলে আমার বিচার করার জন্য অবশ্যই আমার হাইয়ার অথরিটি আছে। সুবোধ বালক আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে এতকিছু লিখতে পারল, কিন্তু লিখিত কমপ্লেইন করার সিস্টেম জানল না ? করবে না তো, কারণ অভিযোগ করার মতো কিছু হয় নাই। আরও একটা কারণ হল, পুলিশের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কিছু লিখলে একদম মাম পানির দামে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে তাহা খায়ও ভালো। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে হাজারো সুমনের ভীড়ে ব্যারিস্টার সুমন একজনই হয়।
আপনাদের যে ধান্দা, সেই বলদ বাহিরে বান্দা। ব্যারিস্টারী আর মহরীগিরি এক জিনিস না। বেরিস্টার সুমন যেমন স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল তেমনি সেফুদা, আসাদ পংপংরাও ভাইরাল। যাহারা সেফুদা বা আসাদ পংপং চেনেন না আজই ইউটিউবে সার্চ দেন। আমি ফেইসবুক স্ট্যাটাসের প্রায় বিশ/ত্রিশটি কমেন্টস পড়েছি। যার অধিকাংশের মধ্যে আমি সেফুদা বা আসাদ পংপংদের ব্যবহৃত ভাষার সুস্পস্ট আলামত খুঁজে পেয়েছি। জানিনা আপনাদের অভিমত কী, ভিন্ন হতে পারে। এর কারণও আংশিক খুঁজে পেয়েছি। তাহাদের অধিকাংশ ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পূর্বে দেশে এসেছিল, সৌজন্য সাক্ষতের জন্য অনেকবার বাড়িতে যাওয়া হয়েছে, ভাগ্যিস দেখা হয় নাই। অনেকে আবার দেশে আসার জন্য লাগেজ গুছিয়ে কোর্ট-টাই এর ময়লা পরিস্কার করেছিল। পরিস্কার তো করতে হবে কারণ মাঝে-মাঝে কাজ থেকে এসে তড়িৎ গামছা না পেয়ে যে, ঘাম মুছার কাজটি করতে হয়েছে, সেই হেঙ্গারে ঝুলানো কোট এর একাংশ দিয়ে। কিন্তু বিধি বাম আসা হলনা। তাহারা বর্তমানে সেফুদা এবং আসাদ পংপং এর মতোই সাত সমুদ্র তের-নদীর ওই পারে আছে। আরও একটা ৩০ ডিসেম্বরের প্রতিক্ষায় থাকেন, আশায় বুক বাধেন, আর বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে ভাইরাল করেন।
আমাদের সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় একটা প্রবাদ আছে, ওলার (বিড়াল) রাগ মরিচ ক্ষেতে। রাগ ভাল করে ঝাড়েন, মরিচ ক্ষেত না পাইলে কপিলের দুম্বার (বেড়া বা ছাগল সদৃশ) পালের উপর ঝাড়েন। আরে আমিতো ক্ষুদ্র পুলিশ অফিসার। বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ এর সফল সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের, এমপি মহোদয় যখন অন্তিম শয্যায় তখনও সেই শুকুনী মামাদের শরীরে চুলকানী উঠেছিল। একজন মানুষকে মৃত্যু শয্যায় রেখে যাহারা ফেইসবুকে কুরুচিপূর্ণ কমেন্টস করতে পারে তাহারা বিজ্ঞানের ভাষায় প্রাণী কূলের প্রাণী হলেও সভ্য সমাজের মানুষ হতে পারে না। যে জাতি যত সভ্য সে জাতি তত মার্জিত। সভ্যতার অগ্রযাত্রার এই পর্যায়ে এসে, আমরা যে সভ্য এবং আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের পার্থক্য নির্ধারণে অক্ষম, তাহা আমাদের ভাষা ব্যবহারেই প্রতীয়মাণ।
আমি সকল ভিউয়ারস ভাইদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই আমরা যে, জায়গাটায় চেকপোস্ট করি সেটি বর্তমান ওসি স্যারের যোগদানের পর হতে সম্পূর্ণ সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যদি সেই ব্যবস্থাটা করা না থাকত আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ হত যে, আমি ছাত্রলীগ এর নেতা ভাই এর গায়ে হাত তুলেছি। তাহলে অবাক হওয়ার মতো কিছু হত না। আর জনতার আদালতে হয়তো বা এটাও থেকে যেত অপ্রমাণিত। আধুনিক যুগের পারিবারিক শিক্ষায় শিক্ষিত তুক্ষু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিায় শিক্ষিত ছেলেতো। আর কিছু না বুঝলেও এটা বুঝে ডাহা মিথ্যা কিছু লিখা সঠিক হবে না। নেতা সাহেব বাংলাদেশ পুলিশ আপনাদের মতো কতিপয় নেতা সাহেবদের প্রিয় না হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশে^ আজ রোল মডেল। আজকাল ধর্ষণ মামলার বিচার হয় ডিএনএ প্রোফাইল দিয়ে। আপনাদের মুখে ব্যবহৃত লেংগুয়েজ বা লেখনির উপর ভিত্তি করে নয়। যে সাইবার ক্রাইম এর সংজ্ঞা শেখার জন্য বিশে^র বিভিন্ন দেশের পুলিশ কোটি কোটি ডলার খরছ করে আমেরিকার এফবিআই এর দরজায় ধরনা দিত। সেই সাইবার ফরেনসিক ইউনিট, ডিএনএ ল্যাব এখন বাংলাদেশে। সীমাবদ্ধতার কারণে নেই কেবল আমেরিকানদের মতো অত্যাধুনিক লজিস্টিক সাপোর্ট। যার ফলশ্রুতিতেই বিশ^বাসী আজ জঙ্গি দমনে বাংলাদেশকে পরামর্শক হিসাবে চায়। আপনারা গালি দিলেও আমি সেই বাহিনীর সদস্য হিসাবে গর্বিত।
কি লিখতে বসে কি লিখা শুরু করলাম। এবার একটু পিছনে ফিরে যাই। ২০১২ সালের দিকে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর সিলেটি পোয়া (ছেলে) হিসাবে বিদেশ তথা লন্ডনের ভাইরাস ঢুকেছিল মাথায়। বাবাকে কিছু না বলে মা-এর ইচ্ছার বিরুদ্ধে লন্ডনের প্রসেসিং শুরু করেছিলাম। প্রসেসিং প্রায় শেষ পর্যায়ে যে কোনো সময় হয়তো বা চলে যেতে হতো। এমন সময় কোনো ধরনের প্রিপারেশন ছাড়াই দেওয়া এসআই নিয়োগ পরীক্ষার রেজাল্ট বের হল। চাকরীর খবর গেল বাড়িতে। বাবা-মা দুজনের মধ্যে একমাত্র মা এর ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে শুধুই দেশ মাতৃকার টানে দেশে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। বাবার কয়েক লক্ষ টাকা জলাঞ্জলি।
চাকরী শুরু করেই বিয়েটাও করে ফেললাম। একটা তিন বছরের মেয়ে সন্তানের জনক। সকলের দোয়া আশির্বাদ থাকলে বর্তমানে হয়তোবা আবার বাবা হবো। যারা আমাকে নিয়ে লিখেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আড়াই বছরের বড়লেখা থানায় চাকরীকালে যদি একটা লোক তথ্য প্রমাণসহ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারে যে, আমি চেকপোস্ট করাকালীন কোনো লোকের কাছ থেকে একটা টাকা নিয়েছি। তাহলে কসম খেয়ে বলছি আমি আমার অনাগত সন্তানের মুখ দেখার পূর্বে এই পোশাকের চাকরী আর করবো না। একদম প্রশান্ত-আটলান্টিক এর ওইপারে চলে যাব। আরও একটা দুঃখের কথা বলি, আমি সব কিছু ভুলে গেলেও কখনো আমার সন্তানের পছন্দের খাবার বাসায় নিতে ভুল করিনা। এই ফেইসবুক স্ট্যাটাসের একদিন পর আমি থানায়, বাসা থেকে ফোন আসে। রিসিভ করতেই আমার তিন বছরের মেয়ে বলে বাবু আমার লিচু শেষ। তাকে বললাম ঠিক আছে বাবু নিয়ে আসব। একথা বলেই ফোন রেখে দিই। কিভাবে যে দুইদিন গেল লিচু আর কিনা হলো না। চেহারা মনের আয়না। এই দুইটা দিন পরিবারের সাথে এক টেবিলে ভাত খাইনি শুধু মাত্র নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য। তাহলে কি এটাই ছিল টার্গেট, পিপলদের উদ্দেশ্য? তাহলে অপারেশন সাকসেস!
যাকগে, সেসব কথা যা রটে তার একটু হলেও ঘটে। কিছু একটা করেছি হয়তো বা সেজন্য কিছু একটা হয়েছে। নক্ষত্রেরও পতন হয়। কাজ করলে ভুল হয়, না করলে হয় না। আর এইসবে কি হবে সেটাও আমি জানি। মার কাছে যেমন মামার বাড়ির গল্প করে লাভ নাই, তেমনি আজিমগঞ্জবাসীর কাছে আগর আতরের গল্প করেও লাভ নাই।
আমার এ লেখাটি কেবল আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে, অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়। তারপরও যদি কেউ কোনো কারণে ব্যতিত হন, তাহলে নিজগুণে মার্জনীয়।
লেখক : এস আই, বড়লেখা থানা, মৌলভীবাজার।