সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-১৫ ২১:২৬:৫৬
বিপ্লব কুমার পোদ্দার :: ইতিহাসের অবিস্মরনীয় বাউন্ডারী নির্ভর বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন। ব্রিটেনের বর্তমান ব্রেক্সিট এবং অভ্যন্তরীন রাজনীতির অস্থিরতাও যদি ক্রিকেট বিশ্বকাপের মতো সুষ্ট সমাধান হতো তাহলে গ্রেট ব্রিটেন তার রাজনৈতিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হবে। নতুবা আগামী দিনে রাজনৈতিক বিশ্বে ব্রিটেন তার গুরুত্ব হারালে অবাক হবার কিছু থাকবে না। গ্রেট ব্রিটেন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের নতুন পরিকল্পনা গ্রহন করলেও সব বিষয়ে সফল হয়েছে এটা বলবার কোন অবকাশ নেই।
তবে দেশটি তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সব সময় একটা গতিশীল অবস্থার মধ্যে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কারন যে সমস্যায় পড়তে পারে, সে সমস্যা থেকে উঠতেও পারে। এটা চিরাচরিত নিয়ম। আমরা যদি গ্রেট ব্রিটেনের অভিবাসন নীতির দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে অনেক দুর্বল অভিবাসন নীতি পরবর্তী পর্যায়ে ভুল প্রমানিত হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে আসতেও সক্ষম হয়েছে স্ব-মহিমায়। একটা সময় ছিল শনিবার জীবন ব্যবস্থা কিছুটা অব্যাহত থাকলেও রোববার ছিল একেবারে স্তব্ধ একটি দেশ।
কিন্তু আজ ব্রিটেনের রিটেইল ইকোনমির মুল চালিকাশক্তিই হলো সপ্তাহ শেষে শনি এবং রোববার। এই দুদিনের কর্মজীবিদের উপরে জরিপ করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ কর্মজীবি হলেন, অভিবাসন প্রক্রিয়ায় ব্রিটেনে আসা একটি বিশাল জনগোষ্টী। তাই যদি কোন কারনে ব্রেক্সিট সম্পাদিত হয় তাহলে ব্রিটিশ অর্থনীতি ভঙ্গুর বা রুগ্ন হয়ে যাবে ভাবেন, আমি তাদের দলে নই। যেমন বাংলাদেশে একসময় প্রবাদ ছিল মার্কিনীরা জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নিলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।
কিন্তু, বাস্তবে দেখা গেল বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প প্রতিযোগীতামুলক বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগীতা করেই ভাল করেছে। গ্রেট ব্রিটেন ইইউ সদস্য হিসেবে কৃষি এবং খামার খাতে যে পরিমান ভর্তুকি দেয় তা দিয়ে অনায়াসে ব্রেক্সিট পরবর্তী বাস্তবতায় নিত্যপন্যের বাজারমুল্য নিয়ন্ত্রন সম্ভব। বাংলাদেশ যদি এই অবস্থার সুযোগ নিতে চায় তবে একটি বিচক্ষন এবং যোগ্য প্রতিনিধিদল দক্ষতার সাথে কাজ করলে পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে। এই সুযোগ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য নতুন বার্তা নিয়ে অাসতে সক্ষম হবে। তবে এর জন্য সুশাষন, গনতন্ত্র, ভীতিহীন বিচার ব্যবস্থা, মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা শর্ত হিসেবে কাজ করবে; ব্রিটেনের সাথে কোন চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে।
অামি এবার আমার একটি ভুল বার্তার জন্য সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থী। যেটা ছিল ভারতে নির্বাচন নিয়ে। তবে পাঠকদের এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই, ভারতের এবারের নির্বাচন তাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সমালোচিত, প্রশ্নবিদ্ধ এবং ত্রুটিপুর্ন হয়েছে বলে তারা নিজেরাও মনে করেন। তবুও বিজেপি সরকারের প্রতি একজন মানবতাবাদী কর্মী হিসেবে সোচ্চার আহ্বান থাকবে, কোন মানুষকে যেন পিটিয়ে রক্তাক্ত করে জয় শ্রীরাম না বলানো হয়। অথবা গো-রক্ষার নামে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন করে ভোট হাসিলের ফায়দাবাজী কিন্তু ভালো ফল বয়ে আনে না। ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের পরাজয় ভারতের কাশ্মীরের জনগন আতশবাজী ফুটিয়ে উল্লাস-উদযাপন ভবিষ্যতে আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি, পশ্চিমবঙ্গের ক্রিকেটার সামীকে বিশ্বকাপে না খেলানোর বিষয়টিকে পশ্চিম বাংলার জনগন ভালভাবে নেন নি।
অামার খুব ইর্ষা হয়, আমি যদি এরশাদের ভাগ্যের খুব কিয়ৎ অংশ পেতাম তবে নিশ্চয়ই আমি জীবনযুদ্ধে আরো অনেক বেশি এগিয়ে থাকতাম। যে নাকি মুক্তিযুদ্ধে বিপরীতমুখে অবস্থানে থেকে দেশে ফিরে বরখাস্তকৃত সেনা অফিসার হিসেবে ঘুরে বেড়ানো পথহারা এক পথিক। ভাগ্য দেবতার ছোঁয়ায় সেনাবাহিনীর সকল রেকর্ড ভেঙ্গে চাকুরীর সাথে করে পদোন্নতি পাওয়া এরশাদ পরবর্তীতে দেশ শাষন করেছেন। খেতাব কুড়িয়েছেন স্বৈরাচার এবং বিশ্ব বেহায়ার। কিন্তু, অদ্ভুত এক সময়ের ক্রন্দন, যারা তাকে স্বৈরাচার বলত, তারাই তার সমর্থন এবং সান্নিধ্য পাবার জন্য প্রতিযোগীতার দৌড়ে লিপ্ত ছিল সর্বক্ষন। হয়ত অনেকে ভাববেন মৃত মানুষকে নিয়ে তাৎক্ষনিক এ সমালোচনা সমীচিন নয়। তবে ইতিহাসের তাগিদে এ অালোচনা অনস্বীকার্য।
এরশাদ সাহেবের জীবন সায়াহ্নের শেষ দিনগুলো যদি লক্ষ্য করা যায়,তাহলে পুতুল নাচের মতোই কিছু দৃশ্য অবলোকন করা করবেন পাঠকরা। যেখানে তিনি সকাল দুপুর এবং রাতের খাবারের মতো তার কথা এবং সিদ্বান্ত পরিবর্তন করতেন। সত্যিকার অর্থে ক্ষমতা হারাবার পরে অাপাতদৃষ্টে শৃংখলমুক্ত হলেও কার্যত পরাধীন এক ব্যাক্তি ছিলেন তিনি। যে নাকি ব্যাক্তিজীবনের ভোগ লালসা এবং উচ্চবিত্ত জীবন যাপন ছাড়া কোন অধিকারই ভোগ করতে পারেন নি। তার এ জীবন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারে।
আসুন মুক্ত মানসিকতা নিয়ে রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দিয়ে গনতন্ত্র সংহত করি। সর্বশেষে বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাড়িয়ে বন্যার কারন পাশের দেশটির কাছ থেকে আমরা ন্যায্য হিস্যা বুঝে নেবার জন্য ঐক্যবদ্ধ হই।
লেখক-লন্ডনে বসবাসরত আইনজীবি ও সমাজকর্মী।