Sylhet View 24 PRINT

প্রতিবন্ধীদের জীবন: কুসংস্কার ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-২৫ ১৯:০৩:১৫

পল্লব সাহা :: মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। পৃথিবী হলো স্রষ্টার  অপরুপ সৃষ্টি। পৃথিবীকে যদি বাগানের সাথে তুলনা করা হয় তবে সেই বাগানের ফুলগুলো হলো মানুষ। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেল থেকে আমরা জানতে পারি যে মানুষ সৃষ্টির দুইদিন আগে এ পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল।

ঈশ্বর তার প্রতিনিধি হিসেবে মানুষ তৈরি করেন এবং পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। পবিত্র কোরাআনে মহান আল্লাহতালা একথাই বলেছেন যে, তিনি পৃথিবী সৃষ্টির পর তার প্রতিনিধি হিসেবে আদমকে (আঃ)  মাটি দিয়ে তৈরী করেন এবং তাঁর সঙ্গী ছিলেন বিবি হাওয়া।এখান থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে পৃথিবীতে মানুষ কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ!

প্রথমেই বলেছি পৃথিবী যদি একটি বাগান হয় তবে সেই বাগানের ফুল হলো মানুষ!

এবার একটি সাধারণ প্রশ্ন করি, বাগানের সব ফুল যদি দেখতে একই রকম হতো তবে কি বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেত?

উত্তরে বলবেন অবশ্যই না! আরো বলবেন বৈচিত্র্যতাই সৌন্দর্য! তবে এবার বলুন পৃথিবীর সব মানুষ একরকম হলে কি পৃথিবী বৈচিত্র্যময়তা বজায় থাকত?

এখন আসি আমরা (মানুষ) কীভাবে পৃথিবীতে আসলাম সে প্রসঙ্গে।

মায়ের ডিম্বানু সাথে যখন বাবার শুক্রাণু মিলিত হয় তখন এর থেকে জাইগোট তৈরি হয়। ধীরে ধীরে এর থেকে সৃষ্টি পূর্ণাঙ্গ মানবদেহের।

মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ক্রোমোজোম যা আমাদের বংশগতির পরিচায়ক। মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে। দীর্ঘ ন'মাস গর্ভে ধারণের পর মায়ের কোল জুড়ে আসে তার নাড়িছেঁড়া ধন। প্রকৃতির নিয়মেই এসময়টা পার হতে থাকে।

কিন্তু শিশুটির যখন স্বাভাবিক আচরণে ব্যতিক্রম দেখা দেয়, যেমন ৩ মাস বয়সে শ্রবণানুভতি, ৬ মাসে ঘাড়সোজা হওয়া, ইত্যাদি না হয় তখন পরিবার সহজেই বুঝতে পারে যে শিশুটি সমস্যাগ্রস্ত বা প্রতিবন্ধীতার স্বীকার। তখন সেই শিশুটির সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না করে চলে কবিরাজি, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি এবং সবদোষ অপরাধের দায়ভার দেয়া হয় তার মাকে।

আমাদের সমাজে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনাও দেখা যায় যে, প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদানের কারনে ঐ ব্যক্তি স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে আবার বিয়ে করেন।

এবার আসুন কথা বলা যাক সন্তান জন্মদানে মা-বাবার ভুমিকা নিয়ে।
আমরা সবাই জীববিজ্ঞান বিষয়টির নাম শুনেছি, জীববিজ্ঞানের ভাষায়, সন্তান উৎপাদনে মায়ের ভুমিকা প্রধান নয়, কারণ মায়ের জনন কোষের ২ অংশই হলো ঢঢ এবং বাবার জননকোষের অংশ ২ হলো ঢণ। মায়ের জননকোষ থেকে ঢ এবং বাবার জননকোষ থেকে ঢ বা ণ এর মিলন ঘটলেই ছেলে বা মেয়ের জন্ম হয়। মা একক প্রচেষ্টায় সন্তান জন্ম দিতে পারেনা।

এখন প্রশ্ন, প্রতিবন্ধী সন্তান জন্মদানের দায়ভার মায়ের একা কেন বহন করতে হয়?
এবার আসুন জানা যাক প্রতিবন্ধীতা কী?

সাধারণত যারা হাটতে পারেনা, চোখে দেখে না তাদের প্রতিবন্ধী বলে।

আশার কথা হলো ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ নামে একটি আইন পাশ করা হয়। এটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জীবনে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে।

প্রতিবন্ধীতা বলতে যেকোন কারনে ঘটিত দীর্ঘমেয়াদী বা স্থায়ীভাবে কোনব্যক্তি শারিরীক, মানুষিক বুদ্ধিগত বিকাশগত ইন্দ্রিয়গত ক্ষতিগ্রস্থতা বা প্রতিকুলতাকে বোঝায়। যার কারনে সেই ব্যক্তি দৃষ্টিভঙ্গিগত ও পরিবেশগত বাধার কারনে সৃষ্ট অসমতার দরুন সমাজে পূর্ণ ও কার্যকর অংশগ্রহনে বাধাগ্রস্থ হন। 
(তথ্যসূত্র প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩)

এবার আসা যাক প্রতিবন্ধীতার ধরণ সম্পর্কে আলোচনায়। ২০১৩ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী প্রতিবন্ধীতা ১২ ধরনের।

১।অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসোডার
২। শারিরীক প্রতিবন্ধিতা
৩। মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা
৪। দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা
৫। বাক প্রতিবন্ধিত
৬। বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা
৭।শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা
৮। সিরিব্রাল পালসি
৯। ডাউন সিন্ড্রোম।
১০। বাক- শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা
১১। বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা
১২। অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা

এবার আসুন একটু বিস্তারিত জানা যাক

অটিজমঃ অটিজম মুলত স্নায়ু বিকাশজনিত প্রতিবন্ধিতা। গর্ভাবস্থায় যদি মস্তিকের পূর্ণবিকাশ বাধাগ্রস্থ হয় তবে সেই শিশুটি অটিজম আক্রান্ত। নিন্মলিখিত লক্ষণ দেখলে সহজেই বুঝা যাবে যে শিশুটি অটিস্টিক।

১। কোন বিশেষ কাজে দক্ষতা যেমনঃ কম্পিউটার চালানো,গণিত ইংরাজি বিষয়ের ওপর

বিশেষ পাণ্ডিত্য প্রর্দশন।

২।চোখে চোখ না রাখা,
৩। নিজস্ব ভুবন গড়ে তোলা। তারা  শৃঙ্খলিত থাকতে পছন্দ করেনা
৪।বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা বা খিচুনি।
৫। একই রুটিনে চলার প্রবণতা।
৬। অতিরিক্ত চঞ্চলতা।
৭। অস্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গি।

শারীরিক প্রতিবন্ধিতা

শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খুব সহজেই চেনা  যায়। যারা জন্মগত অসুস্থতাজনিত ও দুর্ঘটনাজনিত কারনে অঙ্গহানি হন তারা শারীরিক প্রতিবন্ধি।
শারীরিক প্রতিবন্ধিতার লক্ষণগুলো নিন্মরুপ:

১। সহায়ক উপকরণ ব্যবহার
২। কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন।

মানুষিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতাঃ
অবসাদ, হতাশা, ট্রমা ইত্যাদি মনোসতাত্বিক সমস্যা যা দৈনন্দিন জীবনকে বাধাগ্রস্ত করে।
নিন্মলিখিত লক্ষণগুলো এ প্রতিবন্ধিতায় পরিলক্ষিত হয়

১। একা একা থাকা।
২। কারো সাথে কথা বলা।
৩। একা একা কথা বলা।
৪। খুব হাসি বা কান্না করা।
৫। অদৃশ্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর উপস্থিতি অনুভব করা।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা : সাধারণত যারা চোখে দেখতে পারেনা তাদের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি বলে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা ২ প্রকার যথা সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীনতা ২.ক্ষীণদৃষ্টি। নিম্নলিখিত লক্ষনগুলো দেখলে সহজেই বুঝা যাবে।

১.সাদাছুড়ি  চলাচল করলে।
২.দৃষ্টিক্ষেত্র ২০ডিগ্রী বা তার কম হলে।
৩.চশমা ব্যবহার করার পর স্পষ্টভাবে না দেখলে।
৪.কোনো বস্তু খুব কাছে নিয়ে দেখলে।

বাক প্রতিবন্ধিতাঃ বাক শব্দের অর্থ কথা বলা। সাধারণত কথা না বলতে পারা কে বাক প্রতিবন্ধিতা বলা হয়। শুধু কথা বলতে না পারা যে বাক প্রতিবন্ধিতা নয় তা নিন্মলিখিত লক্ষণ গুলো দেখে সহজেই বুঝতে পারআ যায়।

১.তোতলানো।
২. কথা গুছিয়ে বলতে না পারা।
৩. একেবারে কথা না বলা।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা

এটি মস্তিকের বুদ্ধির সীমাবদ্ধতা। নিন্মলিখিত লক্ষণগুলো এ ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।

১. বয়স অনুযায়ী বুদ্ধি কম।
২.  কিছু মনে রাখতে না পারা।
৩. বৃদ্ধাঙ্কের মাত্রা কম।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২৫ জুলাই ২০১৯/পিএস/এক
 

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.