Sylhet View 24 PRINT

‘ভালো কাজের কোন মুল্যায়ন নেই এই মরকির দেশে’

পূর্ণদৈর্ঘ্য জীবনের স্বল্পদৈর্ঘ্য রোজনামচা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-১৪ ১৩:৫৫:০৮

লিনু ফারজানা :: বেখাইছলতি খাদ্যাভাসের কারণেই মুলত চীনারা প্রথম আক্রান্ত হয় করোনা নামক ভয়ানক ব্যাধিতে। প্রথমে ভেবেছিলাম চায়নিজরা কঠোর হস্তে দমন করবে কোভিড ১৯ ভাইরাসকে।

শক্তিধর দেশ চীন। চিকিৎসা, জ্ঞান বিজ্ঞান ও নকল পন্য তৈরিতে সিদ্ধ হস্ত। প্লাস্টিকের চাল, প্লাস্টিকের ডিমসহ প্রাণীর ক্লোন করেও তারা বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগিয়েছে।

ধরাকে সরা জ্ঞান গণ্যকারী ব্যাপক শক্তিধর চীনের করোনার চিকিৎসা নিয়ে কিন্তু লেজে গোবরে অবস্থা। করিৎকর্মা চায়নিজদের বোকা বানিয়ে করোনার বিশ্বজয় অব্যাহত রয়েছে।

করোনার বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনে খোদ ইউরোপে মানবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনার প্রতিষেধক ও চিকিৎসা নিয়ে পুরা বিশ্ব বেকায়দায়। ইউরোপের বাজারে টিস্যু, স্যনিটাইজারের সাথে খাদ্যপণ্যেরও ব্যাপক সংকট।

জাপানের বাজারে টিস্যুর সংকট মোকাবিলায় গনশৌচাগার, বিশ্রামাগার ও দোকান থেকে টিস্যু, স্যানিটাইজার চুরি হচ্ছে দেদারসে। চুরি ঠেকাতে টিস্যুর গায়ে অভিনব অভিসম্পাত লিখে রেখেছেন, দোকানিরা, ‘যে টিস্যু চুরি করবে তাকে ক্ষুধার্ত দৈত্য ধরে খাবে’।

শৌচকর্মে বদনা ও পানির ব্যবহার নিশ্চিত হলে হয়তো এমনটি হতো না। ভেতো বাঙালির এমন ধারণা ফেলে দেওয়ার নয়।

দুনিয়ার তাবত সাদারা ‘বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট’। প্রাকৃতিক কর্ম সেরে যেখানে শৌচকর্মে পানির ব্যবহার নেই, সেখানকার হাইজিন কেমন তাতো বুঝাই যাচ্ছে। সেই নোংরা তথাকথিত এলিটদের অনুকরণ করে এখন টিস্যু, স্যানিটাইজার আর মাস্কের জন্য আমাদের জান তেজা শুরু হইছে।

অন লাইনে, অফলাইনে আগাম অর্ডার দিয়ে স্যানিটেশন পন্য মজুদের প্রতিযোগিতায় আমরা বেশ এগিয়ে।

করোনা নির্বংশকারী আলমের এক নম্বর পচা সাবান, গোল্লা সাবান, ইউরেকার বক মার্কা সাবান ও কামাল সাবানে কারো আস্থা নেই।

রুমাল সেই কবে হারিয়ে যাওয়া হ্যারিটেজের তালিকায় উঠেছে আল্লাহ মালুম। অবশ্য সর্দিওয়ালা নোংরা রুমালের ব্যবহার বিধিও খুব সুখকর ছিলো না। টিস্যু বা রুমালের সুব্যবহার নিশ্চিত হয়না আমাদের কুঅভ্যাসের কারণে।

‘ময়লা যায় না ধুইলে, স্বভাব যায়না মইলে।’

করোনা নিয়ে আদেশ উপদেশ শুনতে শুনতে আমাদের কর্ণগহ্বর ঘা ও চুলকানি এখন নতুন ব্যাধি। টিভি অন করলেই সেরেছে। মুখ থমথমে বানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলবেন, করোনা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু পরের লাইন থেকেই শুরু হয় ভয়ানক সব কথাবার্তা। ভয় দূরীকরণের প্রেসক্রিপশনেই ভয়ের জীবাণু।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আরো কয়েক কাঠি এগিয়ে। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো বিনা পয়সার উপদেশে সয়লাব সোশ্যাল মিডিয়া।

করোনা কখনো বাতাসে, কখনো আকাশে,কখনো মাটিতে। করোনা নিরাময় যোগ্য, করোনা অনিরাময় যোগ্য। করোনা ঠান্ডায় মরে, করোনা গরমে মরে। ইনবক্সে,আউটবক্সে স্ববিরোধী ব্যবস্থাপত্র নিয়ে দ্বিধা কাটেনা। ঋতু পরিবর্তন জনিত শরীরে ব্যাথা, হালকা জ্বর, গলা ব্যাথা ও সর্দি কাশি এখন বেশিরভাগ মানুষের। করোনা আতংকের কারণে এইসব লক্ষণ সারবে কি, আরো ভয়াবহ হচ্ছে।

ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া আমার অভ্যাস। এইবার আসল কথায় আসি। চীন, ইউরোপ, আমেরিকাকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশে কিন্তু করোনার প্রতিষেধক ও চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়েছে। হোমিও, বনাজি, ঝাড়ফুঁকে সেরে যাচ্ছে করোনা। ফেসবুকে এই খবর চাউর হয়েছে ক'দিন আগে।

কেন্দুয়ার বাজারে মাইকিং করে করোনার প্রতিষেধক বিক্রি হচ্ছে এমন খবর পৌছে যায় ইউএনওর কানে। বেরসিক ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে আটক করেন দুই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে। পুলিশের উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই প্রতারককে দুইবছর করে কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন।

করোনার ঔষধ রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি আবিষ্কারের স্বীকৃতি হারিয়ে জাতির দিশেহারা হওয়া আর সময়ের ব্যাপার মাত্র।

দুর যা!! ভালো কাজের কোন মুল্যায়ন নেই এই মরকির দেশে।

লেখক : শিক্ষিকা ও গল্পকার

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.