Sylhet View 24 PRINT

স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা....

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৬ ১৮:০৯:৫৩

লেখক

ডি এইচ মান্না :: বিশ্ব আজ অসহায়ের মত হার মেনে যাচ্ছে একটি ভাইরাসের কাছে। প্রাণঘাতী এই  ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নানান দেশে বেড়ে চলেছে  মৃত্যুর মিছিল। কিছুতেই যেন থামছে না তা। হাসপাতাল গুলোতে এখন সারি সারি লাশের স্তূপ। মর্গে আর জায়গা নেই।

না এটি  কোনো ধরণের অস্ত্র নয়; কিংবা কোনও ধরণের পারমাণবিক বোমা নয়; ক্ষুদ্র সামান্য কয়েক ন্যানো মিটারের একটি অণুজীবের কাছে সারা পৃথিবীর মানুষ আজ অসহায়।

এটি একটি সংক্রামক ব্যাধি, যার সংক্রমণ একটি নতুন ভাইরাস এর মাধ্যমে হয়। যাকে করোনা ভাইরাস বা COVID-19 হিসাবে চিনে আজ পুরো বিশ্ব। এই রোগটি শ্বাসযন্ত্রের নানা সমস্যা এবং অসুখ তৈরী করে, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু। এর উপসর্গ হিসাবে কাশি, জ্বর এবং আরো গুরুতর ক্ষেত্রে শ্বাসক্রিয়ায় সমস্যা তৈরী করে। এখন পর্যন্ত এই ব্যাধির কোনো নিরাময় কিংবা টিকা আবিষ্কৃত হয় নি। বাংলাদেশ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (IEDCR) এদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস এর রোগী সনাক্ত করে ৭ মার্চ, ২০২০ তারিখে ক্রমশ-ই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের কথা বিবেচনা করলে, আমরা এই মুহূর্তে জাতীয় পর্যায়ে এই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছি। যদি এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো না যায় তাহলে আমাদের জন্য মহা বিপদ অপেক্ষমান।

আমি আজ সমাজকর্মীদের (স্বেচ্ছাসেবী) উদ্দেশ্য কিছু কথা বলতে চাই। 

প্রিয় স্বেচ্ছাসেবী বৃন্দ আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে যখন জনজীবন অসহায়। লকডাউনে কর্মহীন হয়েছে অনেক মানুষ  বিশেষ করে এদেশের দিনমজুর ও খেটেখাওয়া মানুষ গুলো। তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের পাশে দাড়িয়েছে এদেশের  স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও নেতৃবৃন্দ কিন্তু আমাদের সবার মনে রাখা প্রয়োজন এটি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্যা নয়। এটি একটি মারাত্বক ছোঁয়াচে মহামারী ভাইরাস। এর ভয়াল গ্রাসে তীব্রতা আমরা ইউরোপ-আমেরিকার মতো আধুনিক দেশের দিকে তাকালেই দেখতে পাচ্ছি.. তাই আমাদেরকে সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী আগাতে হবে। এই ধরণের মহামারী দুর্যোগে সেবার স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা কয়েক ধাপে, কয়েক বছর ব্যাপী করতে হয়। একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং নির্দেশনার আলোকেই আগাতে হবে। এবং প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে, এই মুহূর্তে আবেগী সিদ্ধান্ত কিংবা ত্রাণ  বিতরণের সময় অসচেতন হলে (কোনো ধরনের সুরক্ষা পোশাক ছাড়া  ত্রাণ বিতরণ )  কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের সবচেয়ে বড় ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে আসবে। ইতিমধ্যে যে পরিমাণে লোকের ভিতরে এই ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে তার ফলাফল আগামী ৮/১০ দিনের মধ্যেই আমাদের সামনে চলে আসবে। এবং সেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন ধরনের কর্মকাণ্ডে আমরা নিয়োজিত হব। রাখতে হবে যুদ্ধে গোয়ার্তুমির থেকে কৌশল অনেক বেশি কার্যকর। আর এই যুদ্ধে তো প্রতিপক্ষ অদৃশ্য সুতরাং ভাবতে হবে। বর্তমানে একদিন দুইদিন ত্রাণ বিতরণ করা, একজনের সাথে আর একজন হুমরি খেয়ে ছবি তোলা, এভাবে অবাধে মেলামেশা করে ভাইরাসকে একাকার করে দেওয়া এবং দিনশেষে নিজেই একটা ভাইরাসের ডিপো হিসেবে ঘরে ফেরা, প্রচন্ড রকমের হঠকারী সিদ্ধান্ত। বর্তমানে যে পরিস্থিতি সে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। আমরা তো অনেক করেছি এখন আমাদের আপাতত কাজ হলো ঘরে অবস্থান করার মাধ্যমে নিজেকে পরিবারকে সমাজকে সুরক্ষিত রাখা যাতে ভাইরাসটি আর ছড়াতে না পারে। এবং আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাসার আশেপাশে যে অসহায় প্রতিবেশী আছে তাদের খোঁজ খবর রাখা, তাদের ভিতরে কেউ অভুক্ত থাকলে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা, যারা স্বল্প শিক্ষিত অসচেতন তাদেরকে মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। কিভাবে তারা সুরক্ষা নিবে কিভাবে তারা শিষ্টাচার মানবে এই বিষয়গুলো তাদেরকে বুঝিয়ে বলা। লোক দেখানো হই হুল্ল সেলফি বাজি,মাইক বাজিয়ে অতিথি ডেকে ত্রাণ বিতরণ না করে যদি আমরা আপাতত এই কাজ ‌টুকু করি , তাহলে অনেক লোকই খেতে পাবে এবং সুরক্ষিত থাকবে।

অন্যথায়, এই  ত্রাণ বিতরণ শুধু আপনাকেই না আপনার পরিবারকে আপনার কমিউনিটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সবার সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ অবস্থান কামনা করছি সবাই ভাল থাকবেন। সবার প্রতি সতর্ক থাকবেন এবং বিশেষ করে পরিবারের জুনিয়ার এবং সিনিয়র সদস্যদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হবেন।

লেখক: একজন সমাজকর্মী।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.