সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৮ ২০:২১:৫৯
|| সাইফুর রহমান ||
প্রথমে আমার এলাকার একটা ঘটনা নিয়ে বলছি। ৭ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় জানতে পারি একজন সন্দেহভাজন করোনা লক্ষণধারী (কিশোর) স্থানীয় এক ফার্মেসি থেকে ৩ দফা ঔষধ নিয়েছেন সর্দি, কাশি ও গলা ব্যাথার নাম করে। ফার্মাসিস্ট সন্দেহ করলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে অবহিত করেন বিষয়টি । তারপর জনপ্রতিনিধি খোঁজ নিয়ে ওই সন্দেহভাজন কিশোরকে বাড়িতে পান নাই । বাড়ির লোকজন ধামাচাপা দিচ্ছেন বিষয়টি। পরে জানানো হয় সে মামাবাড়ি আছে। মামাবাড়ি খবর নিলে একই অবস্থা। তারাও ধামাচাপা দেন। দরজা বন্ধ রেখে বলেন, ওই কিশোর সেখানে এসেছিলো তবে সে তার বাড়িতে চলে গেছে। শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারফত জানা যায়, ছেলেটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যাওয়া হবে এবং পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ঘটনাটি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার।
এবার আসা যাক আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায়। গ্রামীণ পর্যায়ে সামাজিক অবস্থানগত কিছু ধ্যানধারণা কিংবা প্রচলন সর্বক্ষেত্রে বিদ্যমান। তাছাড়া গুজব, অজ্ঞতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং কুসংস্কার অনেক অংশে রয়েছে । যা কখনো কখনো সচেতন মহলের ভালো কাজেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে অনেকে রোগের লক্ষণ টের পেয়েও ধামাচাপা দিচ্ছেন । সন্দেহভাজন ব্যাক্তিকে যদি নিরাপদ কোন স্থানে বিচ্ছিন্ন অবস্থানে রেখে ব্যবস্থা নিতেন, তবে সমস্যা ছিল না। কিন্তু তা না করে নিজেরা যেমন আরো আবেগাপ্রবণ হয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছে মিশছেন তেমনি মানছেন না কোনপ্রকার কোয়ারেন্টিন বিধি। সামাজিকভাবে পাড়া-প্রতিবেশীর জানাজানির ভয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিজেকে আড়াল করার নিমিত্তে যাতায়াতও করছেন। এতে করে বেড়ে যাচ্ছে সংক্রমনের মারাত্মক ঝুঁকি।
আবার, সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বরের খবর জানাজানি হয়ে গেলে অনেকে এমনভাবে আচরণ করছেন যেন সামাজিক কোন পাপে কিংবা জনগর্হিত কজে লিপ্ত ছিল ঐ আক্রান্ত ব্যাক্তি ।যার কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আবার কেউ কেউ উল্টা আসছেন সন্দেহভাজন ব্যক্তির পরিবার কি করছে কিংবা সহমর্মিতার ঝুলি ফাটিয়ে খবর নিতে । কেউবা আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিলকে তাল বানিয়ে খবর রটিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে করে আক্রান্ত ও অন্য আরো স্বাভাবিক আট দশটা পরিবার উভয়পক্ষের মনে একদিকে আতঙ্ক যেমন বাড়ছে তেমনি স্বাভাবিক দিগ্বিদিক হারাচ্ছেন আক্রান্তের পরিবার। অনেকাংশে স্বাভাবিক জ্বর-সর্দি বর্তমান সামাজিক হট্টগোল তৈরি করছে। সামাজিক এমন প্রত্যেকটি ছোট ছোট ভুল বাড়িয়ে দিচ্ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি।
কারোনা'র লক্ষণ দেখা দিলে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে বাঘ-ভালুকের চোখে না দেখে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন এবং মাথা ঠান্ডা রেখে নির্ধারিত হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করুন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর লোক কিংবা স্থানীয় প্রশাসন বাকি ব্যবস্থা নিবে।
সামাজিকভাবে রোগীকে ভড়কে দিলে কিংবা ভয় দেখালে সুস্থ মানুষ ও আতঙ্কিত হয়ে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে। এখন পর্যন্ত ২১৮ জন আক্রান্ত বাংলাদেশে। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন, তবে যে কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারি। তাই সন্দেহভাজন বা আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে এমন কোন আচরণ আমরা না করি যাতে করে ঐ ব্যক্তি কিংবা তার পরিবার মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন । আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘৃণার চোখে দেখবেন না। আমরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখি তবে সামাজিক মমত্ব ও সহমর্মিতার জায়গা থেকে একে অন্যের পাশে এই মহামারি মোকাবেলায় এগিয়ে আসি।
লেখক: শিক্ষার্থী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়