সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৪-১৬ ১১:০০:৫৮
ভয়েস বা কণ্ঠস্বর মানুষের প্রধানতম যোগাযোগের মাধ্যম। কণ্ঠ প্রত্যেক মানুষের ইউনিক আইডেনটিটি। আমরা কণ্ঠস্বর শুনে ব্যক্তিকে চিনতে পারি। মানুষের পারসোনালিটি, সামাজিক অবস্থান ও ইমোশনালিটি তার কথার মাধ্যমে ফুটে উঠে। বয়ঃসন্ধিকালে সাধারণত পুরুষদের কণ্ঠস্বর পরিবর্তত হয়, গাম্ভীর্যতা বাড়ে। কোন কোন পুরুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় মেয়েলি কণ্ঠস্বর থাকে একে পিউবারোফোনিয়া বলে।
এমন সমস্যায় ভোক্তভোগীদের ভয়েস থেরাপী বা অপারেশন করে সমাধান করা সম্ভব। পুরুষের গলার সামনে একটি বাড়তি একটি অংশ থাকে যা এডামস আপেল নামে পরিচিত। এটা পুরুষের ক্ষেত্রে ৯০ ডিগ্রি এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১২০ ডিগ্রি হয়ে থাকে। কেউ কেউ এটাকে আবার রোগ বা টিউমার মনে করে ডাক্তারের শরনাপন্নও হন। অনেক সময় এর স্বাভাবিক ডেভেলপমেন্ট না হলেও কণ্ঠস্বরে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আসুন আমরা তাহলে কথা বলার পদ্ধতিটাতে একটু আলোকপাত করি। বাতাস ফুসফুস থেকে উপরে উঠে আসে আমাদের ল্যারিংসে থাকা দুটি ভোকাল কর্ডকে ভাইব্রেট করে এবং শব্দ উৎপন্ন হয় এবং শব্দকে অর্থপূর্ণ করার জন্য প্রয়োজন রেজোনেন্স ও আর্টিকুলেশন যা আমাদের গলার ভিতর, মুখগহবর, জিহবা, দাঁত, ঠোঁট ও তালুর সাহায্যে হয়ে থাকে তাই আমরা একটি অর্থপূর্ণ শব্দ শুনতে পাই। সুতরাং ফুসফুস, ল্যারিংস মুখগহবর ও অন্যান্য অংশে কোন সমস্যা হলেই কিন্তু আমাদের কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়। বিশেষ করে ভোকাল কর্ডে সামান্যতম সমস্যা যেমন কোন আলসার, পলিপ নডিউল বা ক্যান্সার ইত্যাদি হলেই কিন্তু প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে এই স্বর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ জন্য ভোকাল কর্ডের ক্যান্সার হলে দ্রুত রোগ নির্ণয় করা যায় এবং প্রাথমিকভাবে চিকিৎসায় সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
স্বরভঙ্গের কারণ -
* ভোকাল কর্ড এর অধিক ব্যবহার বা অপব্যবহার যেমন- গায়ক, হকার, টিচার, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, স্বর বিকৃত করে কথা বলা বা অধিক সন্তানের মা ইত্যাদি।
* ঠান্ডা বা ভাইরাস জনিত সংক্রমন-যা প্রথমে একিউট এবং পরে ক্রনিক আকার ধারণ করে।
* কোন আলসার বা পলিপ হলে।
* স্ট্রোক এর পর।
* ক্যান্সার হলে।
মনে রাখতে হবে গলার স্বরভঙ্গ ২ সপ্তাহের অধিক স্থায়ী হলে, অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে এবং ভিডিও ল্যারিংগস্কোপি করে স্বর ভঙ্গের কারণ নির্ণয় করে দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে। প্রথমিকভাবে চিকিৎসা করলে ক্যান্সারও নিরাময়যোগ্য।
কণ্ঠস্বরের যত্নে যা করবেন :-
১/ উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
২/ ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পরিহার করুন।
৩/ ধুমপান পরিহার করুন।
৪/ ঝাল-ভাজা পুড়া খাবার পরিহার করুন।
৫/ বেশি করে পানি পান করুন (৩/৪ লিটার দৈনিক)।
৬/ সকালে কুসুম গরম লবণ জলের গড়গড়া করুন।
৭/ নিয়মিত মধু পান করুন।
৮/ নিয়মিত কণ্ঠের ব্যায়াম করুন।
৯/ হঠাৎ স্বরভঙ্গ হলে ঘরোয়াভাবে যা করবেন?
১০/ কথা বলা বন্ধ রাখুন ৭-১৫ দিন।
১১/ মেনথল মেশানো গরম পানির ভাঁপ নিবেন রোজ ২-৩ বার।
১২/ বেশি করে পানি পান করুন।
১৩/ ফিস ফিস করেও কথা বলা নিষেধ।
১৪/ মুখে লবঙ্গ/আদা রাখতে পারেন।
১৫/ কুসুম গরম লবন জলের গড়গড়া করুন।
১৬/ গরম রং চা পান করুন।
১৭/ ২ সপ্তাহের অধিক স্থায়ী হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিকার :-
* প্রথমিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করলে অনেক সময় কমে যায়।
* কোন কোন ক্ষেত্রে ভয়েস বা স্পীচ থেরাপী এর প্রয়োজন হয়।
* কিছু রোগে মাইক্রো ল্যারিনজিয়াল সার্জারী করা লাগে।
* ক্যান্সার হলে রেডিওথেরাপী ও নিতে হয়।
* চিকিৎসা পদ্ধতি এখন অনেক উন্নত এবং সাম্প্রতিক ডিজিটাল ও উন্নত যন্ত্রপাতির সাহায্যে একদম স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর বজায় রেখেও অপারেশন করা যায় যেমন-লেজার সার্জারী, কবলেশন সার্জারী বা রোবোটিক সার্জারী ইত্যাদির মাধ্যমে শুধুমাত্র রোগাক্রান্ত অংশকে সুক্ষভাবে কেটে আনা সম্ভব।
ডাঃ নূরুল হুদা নাঈম
নাক, কান, গলা ও হেড-নেক বিশেষজ্ঞ লেজার সার্জন
পরিচালক
কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কর্মসূচী
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল