Sylhet View 24 PRINT

বোতলভর্তি বিশুদ্ধ বাতাস বিক্রি!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৫-০১ ০৩:৩৫:১২

আশরাফুল আলম  :: যুক্তরাজ্যের কোস্ট ক্যাপচার এয়ার নামের একটি কোম্পানি কাচের বোতলভর্তি উপকূলীয় এলাকার টাটকা বাতাস বিক্রি করছে। শুনতে বিস্ময়কর মনে হলেও ঘটনা কিন্তু সত্যি। বোতলপ্রতি তারা বিক্রি করেছে ১০৫ ডলার; যা আমাদের দেশের প্রায় ৯ হাজার টাকার মতো! কোম্পানিটি বিশুদ্ধ বাতাসের গুরুত্বকে একটি স্মারক ও আলোচনার বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করতে বোতলবন্দি টাটকা বাতাস বিক্রি শুরু করে। বিশ্বের বিভিন্ন দূষিত এলাকার মানুষ ব্যবহারিক উদ্দেশ্যেই কিনতে শুরু করেছেন বোতলগুলো।

কোস্ট ক্যাপচার এয়ার বিশ্বের একমাত্র কোম্পানি নয় যারা এভাবে বাতাস বিক্রি করে। ভিটালিটি এয়ারের মতো বাতাস বিক্রির বড় বড় ব্র্যান্ডও রয়েছে, যারা কানাডিয়ান রকি মাউন্টেন, এয়ার ডি মন্টকুক কিংবা ফরাসি গ্রামাঞ্চল থেকে বাতাস সংগ্রহ করে বিকিকিনি করে।

ভিটালিটি এয়ার কোম্পানি বোতলপ্রতি ১০৫ ডলার নিচ্ছে; যা ইতোমধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল বোতলজাত বাতাসের স্থান পেয়েছে। প্রথম স্থানে আছে সুইজারল্যান্ডের জেনুইন মাউন্টেন এয়ার, যারা আল্পসের একটি গোপন স্থান থেকে সংগৃহীত সুইস পর্বতের বাতাস বোতলপ্রতি বিক্রি করে ১৬৭ ডলারে; যা প্রায় আমাদের দেশের ১৪ হাজার ৩০০ টাকা। যেটা দিয়ে অনায়াশে কয়েকটি পরিবারকে দেয়া যাবে মাসিক খাদ্যের জোগান।

কার্বন-মনোক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসগুলো মানুষের অনেক রোগের কারণ হতে পারে। আসলে বিশ্বব্যাপী প্রতি ৯ জনের মধ্যে ১ জনই কেবল বায়ুদূষণের কারণে মারা যায়। স্ট্রোক থেকে বার্ষিক ১.৪ মিলিয়ন এবং হৃদরোগে ২.৪ মিলিয়ন মারা যায়। ডব্লিউএইচও রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, স্বল্প-আয়ের এবং সাধারণ দেশগুলোতে বায়ুদূষণের উচ্চঝুঁকি রয়েছে, উচ্চআয়ের দেশ নয়। যে সমস্ত লোকেরা দূষিত বায়ুর পাশাপাশি ঘরের বাইরে বা ঘরের অভ্যন্তরে বায়ুদূষণের সংস্পর্শে থাকে তাদের ফুসফুসের ক্যান্সার এবং নিউমোনিয়াসহ শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৩২৩টি। এর মধ্যে বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৫০টি। ট্রাকের সংখ্যা ৭৪ হাজার ৩৩০টি। আর মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৮ লাখ ৯ হাজার ১৮৯টি। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা যায়, পুরনো ও লক্কড়ঝক্কড় বাস থেকে কালো ধোঁয়া বেশি নির্গত হয়। রাতে চলাচলকারী ট্রাক থেকেও কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। তবে করোনার লকডাউনের জন্য এখন কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে। গত বছর যখন সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল তখন দেখা গিয়েছিল এক নির্মল পরিবেশ।

মূলত ফিটনেসবিহীন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন থেকে কালো ধোঁয়া বেশি ছড়ায়। কালো ধোঁয়ার বিষয়টি মূলত কারিগরি যেটি কিনা খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই। কালো ধোঁয়া ছড়ায় এমন যানবাহন সড়কে না নামাতে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। মূলত এখানে বিআরটিএ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগই পারে এ কালো ধোঁয়া কমাতে।

ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎস হিসেবে মনে করা হতো ইটভাটাকে; তবে সাম্রতিক সময় বায়ুতে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি বলছে অন্যকথা। ইটভাটার সাথে সাথে শহরের যে বর্জ্য পোড়ানো হয় সেটাকেও দায়ী করা হচ্ছে বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে। বর্জ্য পোড়ানোর জন্য নাকি বায়ুতে মিথেন গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর এতে বাড়ছে গরমের পরিমাণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুন থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে যানবাহনের কালো ধোঁয়ার বিরুদ্ধে ৩৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া ছড়ানোয় বিভিন্ন যানবাহনকে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যানবাহনের পাশাপাশি ইটভাটা এবং বর্জ্য পোড়ানোর বিষয়টি নজরে আনা এখন সময়ের দাবি।

লেখক: পরিবেশকর্মী ও ইউটিউবার, গো ইউথ আশরাফুল আলম

সৌজন্যে : যুগান্তর

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/মিআচৌ-৩২

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.