Sylhet View 24 PRINT

করোনায় থেমে নেই নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উন্নয়ন কার্যক্রম

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৫-২২ ২০:৪০:৩২

:: ইসরাইল আলী সাদেক ::
করোনা মহামারিতে চ্যালেঞ্জের মুখে বিশ্ব। কঠিন সময় পার করছে গোটা দুনিয়া। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক ভাইরাস থমকে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন। আতঙ্কজাগানিয়া এই সময়ে যারা মানবতার তরে নিজেদেরকে সঁপে দিয়েছেন তাদের মধ্যে নার্সরা অন্যতম। নিজেদের জীবনবাজী রেখে, পরিবার-পরিজনের মায়া ভুলে তারা মমতার পরশ দিয়ে সেবা দিয়েছেন রোগীদের। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তারা দাঁড়িয়েছেন আর্ত-মানবতার পাশে। কোভিড আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে ইতোমধ্যে অনেক নার্স নিজেরাই আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুমুখ থেকে কেউ ফিরে এসেছেন, আর কেউ পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে।

দেশ ও জাতির কঠিন এই দু:সময়ে সারাদেশের নার্সদের যিনি উৎসাহ দিয়েছেন, সাহস সঞ্চার করেছেন তিনি হচ্ছেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার। শুধু নার্সিং কর্মকর্তাদের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হওয়াই নয়, তার নিরলস প্রচেষ্ঠায় বদলে গেছে পুরো অধিদপ্তরের কার্যক্রম। করোনা মহামারিতেও থেমে থাকেনি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উন্নয়ন কার্যক্রম। বরং কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলায় নার্সিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিভাবে তাদেরকে আরো দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়, সে ব্যাপারে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে অধিদপ্তর। এর অংশ হিসেবে সারাদেশের ৫০০ নার্সিং কর্মকর্তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এর বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২শ’ নার্সিং কর্মকর্তা এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। আগামী ২২ মে থেকে শুরু হচ্ছে আরো ৩শ’ নার্সিং কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণ করোনা চিকিৎসাসেবায় বড় ভূমিকা রাখবে।

বিশেষ এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রিয়ভাবে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তারকে এই প্রশিক্ষণ ঢাকায় না করে বিভাগীয় পর্যায়ে করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউসহ প্রশিক্ষণের সুবিধা থাকা ও কোভিড পরিস্থিতির বিষয়টি মহাপরিচালককে বুঝাতে সক্ষম হই। ফলে সারাদেশের প্রশিক্ষণার্থীদের নিজ নিজ বিভাগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। এতে ঢাকায় গিয়ে প্রশিক্ষণের দুর্ভোগ লাঘব হয় প্রশিক্ষণার্থীদের। আগে ঢাকায় এরকম প্রশিক্ষণের আয়োজন করায় অনেকের মাঝে তাতে অংশ নিতে অনীহা দেখা যেত। কিন্তু বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় সারাদেশের নার্সিং কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। কর্মীবান্ধব কর্মকর্তা হওয়াতেই মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার নার্সদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণের এই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। এর মাধ্যমে আগামীতে বিভাগীয় পর্যায়ে আরো অনেক প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে সারাদেশের নার্সরা আশাবাদী।

বর্তমান সরকারের আমলে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে যতো উন্নয়ন হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে বর্তমান মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তারের সময়ে। ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের পর প্রশিক্ষিত ও দক্ষ নার্স গড়ে তোলার পাশাপাশি নার্সিং কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক হয়রানি লাঘবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ীভাবে কর্মরত নার্সিং কর্মকর্তাদের চাকুরি স্থায়ীকরণ। এর মধ্যে অনেকে নার্সিং কর্মকর্তা ছিলেন যাদের অবসরের সময় হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু চাকুরি স্থায়ী হয়নি। তাদের চাকুরিও তিনি স্থায়ী করেন।
২০১৬ সালে নার্স নিয়োগবিধি ও অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত করা হলেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে সাধারণ নার্সিং কর্মকর্তাদের মনে অনেক সন্দেহ ছিল। কিছুদিন আগে বহুকাঙ্খিত এ নিয়োগবিধি ও অর্গানোগ্রাম প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

এছাড়া তাঁর গৃহিত পদক্ষেপের মধ্যে ছিল-  
১. ১৯৯৯ সাল হতে যোগদানকৃত ৪ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্সদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্খিত সিলেকশন গ্রেড প্রদান। বাকিদের সিলেকশন গ্রেডও প্রক্রিয়াধীন।

২. দেশের নার্সদের উচ্চ শিক্ষার সুবিধার্থে সকল নার্সিং কলেজে পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স চালু। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে দেশে প্রথম একটি নার্সিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ।
৩. বদলি ও ইনচার্জ নীতিমালা বাস্তবায়ন।
৪. বিএসসি ইন নার্সিং ভর্তির নীতিমালা বাস্তবায়ন।
৫. নামের বানান ভুল সংশোধন ও পিআইএমএস-এ স্বল্প সময়ে অন্তর্ভূক্তিকরণ।
৬. ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যোগদানকৃত ১২ হাজার নার্সের ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাকরণ।
৭. নার্সদের পেশাগত দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ।
৮. নার্সিং ইনোভেশন প্রশিক্ষণ ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া।
৯. গ্রেডেশন তালিকা চুড়ান্তকরণ ও পদন্নোতি প্রক্রিয়া।
১০. করোনাকালীন সময়ে নার্স সুষম বন্টন।
১১. নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিকায়নের পরিকল্পনা গ্রহন এবং কাজ চলমান।
১২. শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহন ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান।
১৩. শিক্ষক সংকট নিরশন ও শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য পরিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ ও ২৫৫ জনকে প্যানেলভূক্ত করা ও ৫৯ জনের টিচার্স ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং শেষ করা এবং অন্যদের ট্রেনিং প্রক্রিয়া চলমান।
১৪. শিক্ষকদের রিসার্চ বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য রিসার্চ মেন্টরশীপ ট্রেনিং প্রদান।
১৫. শিক্ষকদের পারসোনাল ডেভেলপমেন্টের জন্য ও মানসম্মত শিক্ষাপ্রদানের জন্য ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ট্রেনিং ও কম্পিউটার ট্রেনিং প্রদান ও চলমান।
১৬. নার্সদের বেতন বাজেট কোনরকমের হয়রানি ছাড়াই নার্সিং কোডে প্রদান।
১৭. প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৬টি নার্সিং ইন্সটিটিউটের জন্য দেশে ৬টি নার্সিং ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণের প্রস্তাব প্রেরণ।
১৮. পিএসসির মাধ্যমে ৩২৮ জন নার্সকে নবম গ্রেডে পদোন্নতি প্রদান।
১৯. করোনাকালে রোগীর সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে কর্মসম্পাদন।
২০. সকল নার্সিং ইন্সটিটিউটকে নার্সিং কলেজে উন্নীতকরণের প্রস্তাব প্রেরণ।
২১. দেশের নার্সদের উচ্চ শিক্ষার সুবিধার্থে সকল নার্সিং কলেজে পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স চালু।

২২. পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ যোগদানপত্র গৃহীতকরনের প্রক্রিয়াগুলো ত্বরান্বিতকরণ।
২৩. আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে আরো ৩০ হাজার নার্সিং কর্মকর্তার পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ।
২৪. কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ফ্রন্টলাইনযোদ্ধা নার্সদের প্রণোদনা  প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ। সকল নার্সিং কর্মকর্তার জন্য প্রনোদনা নিশ্চিতকরণে উদ্যোগ গ্রহণ।

এছাড়া কোভিড পরিস্থিতিতে যেখানে বেশিরভাগ অধিদপ্তর বন্ধ বা আংশিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেখানে নার্সিং অধিদপ্তরের নৈমিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তার নেতৃত্বে চলছে টিমভিত্তিক দৈনন্দিন কার্যক্রম।

দেশের নার্সিং পেশার উন্নয়নে বর্তমান মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তারের আপোষহীন মনোভাব ও তার টিমের সদস্যরা যেভাবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাতে এ পেশা উন্নয়ন আরো বহুদূর এগিয়ে যাবে বলে সারাদেশের নার্সদের দৃঢ় বিশ্বাস।

ইসরাইল আলী সাদেক,সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ), সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখা।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.