Sylhet View 24 PRINT

অনলাইন গেইমে কিশোরদের আসক্তি, প্রতিকার প্রয়োজন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৫-২৭ ২০:২৫:০৪

আলী ফজল মোহাম্মদ কাওছার :: গতবছর থেকে করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে সরকার কর্তৃক এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে কিশোর-কিশোরীদের এখন অফুরন্ত অবসর। তাদের এই অবসর তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির ফলে তারা এই সময় বিভিন্ন অনলাইন গেইমের প্রতি আসক্ত হচ্ছে। কয়েক বছর আগে খেলার মাঠে কিশোরদের ভিড় থাকতো তারা বিভিন্ন খেলায় মেতে উঠতো। সেই ভিড় এখন অনেকাংশে কমে গেছে মোবাইলে অনলাইন গেইমের আসক্তির কারণে।

অনলাইন গেইমের মধ্যে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় গেইমের নাম ফ্রী-ফায়ার। ভয়ংকর ব্যপার হচ্ছে এই গেইমের ভিতর থাকা একেকটা ক্রেরেক্টার কিনে নিতে হয় চড়া মূল্যে যার মূল্য ৪০০ টাকা শুরু করে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। এই টাকা তারা তাদের মা-বাবার কাছ থেকে জোর করে আদায় করে থাকে। দীর্ঘক্ষণ এই গেইম খেলতে গিয়ে মোবাইল স্কিনে তাকাতে গিয়ে অনেকের মস্তিষ্ক বিকৃত হয়। যারা এই গেইম খেলছে তাদের আচার আচরণ আক্রমণাত্মক লক্ষ্য করা যায়। এই গেইম খেলতে যারা বারণ করে তাদেরকে তারা শত্রু মনে করে।

একটি প্রতিবেদন দেখলাম রাজশাহীর একজন অভিভাবক বললেন তার সন্তান এই গেইমে এত আসক্ত হয়েছে যে তিনি হালের বলদ বিক্রি করে স্মার্ট মোবাইল ফোন কিনে দিতে বাধ্য হয়েছেন। আর্থিক ভাবে অসচ্ছল এই অভিভাবক জানালেন অনলাইন ক্লাস করবে বলে এই মোবাইল কিনে এখন সারা দিন গেইম নিয়ে মেতে আছে। করোনার সংক্রমণ যেন ছড়িয়ে না পড়ে এর জন্য দীর্ঘদিন ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ আছে কিন্তু তারা স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কা না করে দল বেধে দিন-রাত এই গেইমে মেতে আছে। কোন নির্দিষ্ট অঞ্চল নয় সারাদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই গেইমে মেতে আছে।

এখন তাদের কাছে এই গেইম নেশার মতো কাজ করে। এই গেইমের অস্ত্র হচ্ছে ট্যাংক, একে-৪৭ সহ নানান ধরনের অস্ত্র। যার প্রতিটি কিনতে স্থানীয় এজেন্টদের কাছে টাকা পাঠাতে হয় বিকাশের মাধ্যমে। টাকার সাথে এজেন্ট কে দিতে হয় নিজের ফেইসবুক একাউন্টের ইমেইল পাসওয়ার্ড। এজেন্টকে ফেইসবুক একাউন্টের ইমেইল পাসওয়ার্ড দেওয়ার কারণে অনেককে হারাতে হয়েছে নিজেদের ফেইসবুক একাউন্ট। এর ফলে যারা ফ্রী-ফায়ারে আসক্ত তাদের অনেকের রয়েছে ৫-১০টি ভুয়া ফেইসবুক আইডি। যা সমাজে অপরাধ প্রবণতা বাড়াচ্ছে। অনেকে উপবৃত্তির টাকা খরচ করছে এই গেইমের পিছনে। অনেকে টাকার জন্য মা-বাবাকে করে জিম্মি। অনেকে আবার এই গেইমের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে সমাজে তৈরি হচ্ছে কিশোর গ্যাং। পাবজির পরে সবচেয়ে ভয়ংকর গেইমের নাম হচ্ছে ফ্রী-ফায়ার যা দিন দিন কিশোরদের নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তারা এত আসক্ত হয়েছে এই গেইমের প্রতি এর জন্য অনেক সময় তাদের আশেপাশে বিভিন্ন দূর্ঘটনা ঘটলে তারা টের পায়না।

এর কি কোন প্রতিকার নেই?
ফ্রী ফায়ার নামক গেইমটি বাংলাদেশে বন্ধ করা হোক। অতিরিক্ত গেইম খেলার কারণে কিশোরদের হচ্ছে চোখের ক্ষতি, ব্রেনের ক্ষতি, শরীরের ক্ষতি, সময় নষ্ট। এছাড়া এই গেইম খেলার জন্য এমবি কিনতে গিয়ে হচ্ছে টাকার ক্ষতি। পিতা-মাতা টাকা দিতে অপারগ হলে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

আমাদের আশেপাশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রতিনিয়ত আসক্ত হচ্ছে এই গেইমের প্রতি। এর থেকে মুক্তি পেতে কিংবা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তি দিতে এই গেইম তথা অনলাইন গেইম বন্ধ করা সময়ের দাবি। তা না হলে যেভাবে অনলাইন গেইমের প্রতি তারা আসক্ত হচ্ছে আমাদেরকে এর কঠিন মাসুল দিতে হবে।

লেখক: চাকুরীজীবি, সিলেট।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.