Sylhet View 24 PRINT

কুলাউড়ায় ৫ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের টাকা নিয়ে উধাও ছাত্রদলনেতা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-২২ ১৯:১৬:২১

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ছাত্রসংগঠনের নেতাদের দিয়ে কম টাকায় ফরম পূরণ করা যায়। তাই, উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীরা এক নেতার কাছে টাকা দেন। কিন্তু, ওই নেতা টাকা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগই করেননি। ফলে ৫ শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করা হয়নি।

শিক্ষাবোর্ড থেকে আসেনি প্রবেশপত্রও। এখন ঐ নেতার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে মোবাইল বন্ধ পাচ্ছেন এবং বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। এদিকে ১ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এ অবস্থায় ওই ৫ শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের পরীক্ষা। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সরকারি ডিগ্রি কলেজে।

কলেজের বিভিন্ন শ্রেণির অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী ও ১০ জন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নাম করে কতিপয় নেতারা ভর্তি ও ফরম পূরণে বাণিজ্য চালাচ্ছেন। কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে দেনদরবার করে তাঁরা কম টাকায় এসব কাজ করিয়ে দিতে পারেন। সিলেটের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গত বছরের (২০১৮) ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অনলাইনে ফরম পূরণের নির্দেশনা দেয়। বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২ হাজার ৪৬০ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য ২ হাজার ২৩০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কলেজের মাসিক বেতন ২০০ টাকা। ফরম পূরণের সময় বোর্ড নির্ধারিত ফি’র সঙ্গে বকেয়া বেতন ও ভর্তি ফি (একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি) পরিশোধ করতে কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থীর ফি ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা হয়ে যায়।

এ অবস্থায় কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী জামিল হাসান, দেলোয়ার হোসেন, প্রিয়াংকা চন্দ, সুইটি আক্তার এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের মো. আবু বকর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কলেজ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুর রহমানের শরণাপন্ন হন। সাইফুর কম টাকায় তাঁদের এ কাজ করে দেবেন বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাইফুলের দাবি অনুযায়ী, জামিল ৩ হাজার টাকা, দেলোয়ার হোসেন ৬ হাজার টাকা, প্রিয়াংকা চন্দ ৪ হাজার টাকা, সুইটি আক্তার ৪ হাজার টাকা এবং আবু বকর ৪ হাজার টাকা দেন। সাইফুল ফরমে তাঁদের সইও নেন। গত বুধবার (২০ মার্চ) কলেজে বোর্ড থেকে পাঠানো পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণ করা হয়। কিন্তু, পাঁচ পরীক্ষার্থী তা পায়নি। পরে কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাঁরা জানতে পারেন, ফরম পূরণ না হওয়ায় প্রবেশপত্র আসেনি।

শিক্ষার্থী জামিল হাসান, দেলোয়ার হোসেন ও আবু বকর বলেন, প্রবেশপত্র না পৌঁছানোয় তাঁরা তৎক্ষণাৎ সাইফুরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু, তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে কুলাউড়া পৌর শহরের লস্করপুর এলাকায় বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করেও তাঁকে মেলেনি। এ অবস্থায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।


শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের অনেক সহপাঠী ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের আরও কয়েক জন নেতাকে দিয়ে কম টাকায় ফরম পূরণ করিয়েছেন। ওই সহপাঠীদের প্রবেশপত্র এসেছে।

কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই কলেজে একটি সিন্ডিকেট চক্র বিভিন্ন ছাত্র রাজনৈতিক দলের প্রভাব দেখি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ, কলেজ ও শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন ফি কম করে দেওয়ার নাম করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। কলেজ প্রশাসনের নাকের ডগায় এই চক্র এমন কাজ করলেও কতৃপক্ষ নিরব থাকেন।

বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ছাত্রদল নেতা সাইফুরের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

কুলাউড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সৌম্যপ্রদীপ ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘কলেজে দীর্ঘ দিন ধরেই ছাত্রনেতারা এ কাজ করে আসছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কম টাকা এনে তাতেও নেতারা ভাগ বসায়। শিক্ষার্থীরা সরাসরি আমার সঙ্গে কথা বলতে পারত। তাদের অভিভাবকেরা কথা বলতে পারতেন। ফরম পূরণের ব্যাপারে দুই-এক জনের জন্য আমরা কাল (২০ মার্চ) বোর্ডে সুপারিশ করেছি। বোর্ড কি সিদ্ধান্ত দেয় জানি না। বাকিদের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ মার্চ ২০১৯/এসএ/ডিজেএস

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.