সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-১৮ ১১:৩৮:২৯
ছাতক প্রতিনিধি::ছাতকে ধর্ষণের শিকার হওয়া এক তরুণীর ভাইকে একঘরে (স্থানীয় ভাষায় পাঁচের বাদ) করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগীর পরিবারকে দেওয়া হয়নি কোরবানির মাংসও।
অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্ত মাওলানা আব্দুল হকের পক্ষ নিয়ে গ্রামের মোড়লরা ওই পরিবারকে এই শাস্তি দিয়েছেন। শাস্তি দেওয়ার কারণ হলো, পরিবারটি ধর্ষণের মামলা তুলে নেয়নি।
ভুক্তভোগী এতিম তরুণীর বাড়ি কালারুকা ইউনিয়নের একটি গ্রামে। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই তরুণীকে আব্দুল হক কয়েক বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছিলেন। তিন বছর আগে স্থানীয় এক নিঃসন্তান প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে হয় ওই তরুণীর। বিয়ের পর ওই তরুণীকে আব্দুল হক আবারও যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দেন।
তাতে রাজি না হলে তিনি ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। তরুণীর স্বামী মামলা করতে চাইলে ২০১৮ সালের নভেম্বরে আব্দুল হকের সমর্থক গ্রামের মোড়লরা দুই লাখ টাকায় বিষয়টি চাপা দিতে চান।
সেই সঙ্গে বিষয়টি গোপন রাখতে গ্রামে ফতোয়া জারি করেন।
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকমে ‘ছাতকে তরুণীকে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকের ধর্ষণ’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এর সূত্র ধরে তদন্ত করে
ঘটনার সত্যতা পায় মহিলা পরিষদ। কিন্তু মহিলা পরিষদের নেতারা ফিরে আসার পর আব্দুল হকের পক্ষ নেওয়া মোড়লরা তরুণীকে ও তাঁর পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। সর্বশেষ ৩০ অক্টোবর মাওলানা আব্দুল হক ও তাঁর স্ত্রী সাকেরা বেগমের নামে মামলা করেন ভুক্তভোগী তরুণী।
মামলা দায়েরের পরই মোড়লরা তাঁর পরিবারকে একঘরে করার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। গত ৪ মার্চ আদালতে জামিন নিতে গেলে আব্দুল হককে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর আব্দুল হকের স্বজন ও মোড়লরা ভুক্তভোগীর বড় ভাই আসাদ মিয়াকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিতে থাকেন। সর্বশেষ গত ১২ আগস্ট কোরবানির মাংসও তাঁকে দেয়নি মোড়লরা।
এরপর গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর এ নিয়ে গ্রামের মসজিদে বৈঠক করেন মোড়লরা। সেখানে আসাদকে একঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদা সুলতানা বলেন, ‘শুক্রবারই নির্যাতিত তরুণী ও তার ভাই আমাদের বিষয়টি জানিয়েছে। আমরা তাদের আইনি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছি। ’
সালিশে উপস্থিত থাকা আরশ আলী বলেন, ‘আসাদ মিয়া সমাজের সিদ্ধান্ত মানেনি। এ কারণে তাকে সমাজের কোনো কর্মকাণ্ডে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে মসজিদে আর কী কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা আমি জানি না। ’
আমিনুল হক বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। কিছু জানার থাকলে গ্রামে গিয়ে জানুন। ’ আরেক মোড়ল আব্দুল হান্নানকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তাপস শীল বলেন, ‘বিষয়টি কিছুক্ষণ আগে শুনেছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে তলব করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ আগস্ট ২০১৯/এমএ/মিআচ