Sylhet View 24 PRINT

হাওরাঞ্চলে যন্ত্রনির্ভর ধানচাষের লক্ষ্য সরকারের কমবে উৎপাদন ব্যয়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-২০ ১৪:১২:৪৭

শহীদনুর আহমেদ, সুনামগঞ্জ :: আগামী বোরো মৌসুমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের নতুন যুগে প্রবেশের যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার এর সুফল ভোগ করবেন সুনামগঞ্জের কৃষকেরা।

উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ৪ বছরের মধ্যেই দেশের প্রচলিত পদ্ধতির কৃষিকে যন্ত্রনির্ভর কৃষিতে রূপান্তরের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রতি বোরো মৌসুমে জমি চাষ, চারা রোপণ, বপন থেকে শুরু করে ধানা কাটার সময় শ্রমিক সংকটে পড়তে হয় বোরো প্রধান সুনামগঞ্জের চাষীদের। জেলায় প্রতি বছর প্রায় সোয়া দুই লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ হয় বোরো ধান। জমি চাষ ও মাড়াইয়ের ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হলেও প্রায় শতভাগ ধান কাটা হয় সনাতনী পদ্ধতি। এতে শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি উচ্চ মজুরি দিয়ে কাটা ধান পানির দামে বিক্রি করার কারণে লোকসানে পড়তে হয় কৃষকদের। ফলে প্রতিবছরই বোরো ধান আবাদের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকেরা।

কৃষকসহ কৃষিকাজে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সুনামগঞ্জের বোরো ধান আবাদে যন্ত্রের ব্যবহার হলে ব্যয় কমে আসবে। উৎপাদিত ফসল থেকে লাভবান হবেন কৃষকেরা।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সেচ এবং জমি তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রায় শতভাগ কাছাকাছি চলে গেলেও চারা রোপণ তথা ট্রান্সপ্লান্ট এবং ধান কাটা তথা হারভেস্টিংয়ে যান্ত্রিকীকরণে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে। এখন এই দুটি ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণেই মাঠে নেমেছে মন্ত্রণালয়। এই যান্ত্রিকীকরণের আওতায় চলতি মৌসুমে ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের ৫ হাজার ৩০০ যন্ত্র দেয়া হবে। শ্রমিক সংকট থেকে মুক্তি ও উৎপাদন খরচ কমাতে চারা রোপণ ও ধান কাটার জন্য তিন ধরনের যন্ত্র দেয়া হবে কৃষকদের। এগুলো হলো কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার ও রাইস ট্রান্সপ্লান্টার। এ সকল যন্ত্র ক্রয়ে কৃষকদের সরাসরি ৬০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদান করবে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৪১৫ কোটি টাকা। এই টাকা রাজস্ব বাজেট থেকে সংস্থান করা হবে।

আগামী দুই মাসের মধ্যে অর্থাৎ আসন্ন বোরো মৌসুমেই এসব যন্ত্র কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। এর মধ্যে চলতি আমন মৌসুমেই কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও রিপার দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ধান কাটা হবে এবং বোরো মৌসুমে চারা রোপণ ও ধান কাটা উভয়ই যন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশের ধান আবাদের সব কাজ অর্থাৎ জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ, সেচ, ধান কাটা সব কাজই যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে আমরা কৃষকদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে কৃষিযন্ত্র পৌঁছে দেব। এ ব্যাপারে আমরা সারাদেশে কৃষকদের কৃষিযন্ত্রের চাহিদা নিরূপণ করেছি। কোন এলাকার কৃষক কেমন যন্ত্র চায় তা আমরা নিরূপণ করেছি। এখন সেই চাহিদা অনুযায়ী আমরা কৃষকদের কাছে চারা রোপণ ও ধান কাটার যন্ত্র পৌঁছে দেব।

তিনি বলেন, আমরা জমিতে সেচদান ও জমি প্রস্তুতের ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণে শতভাগে পৌঁছে গেছি। কিন্তু ধানের চারা রোপণ ও ধান কাটার ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণে অনেক পিছিয়ে আছি। তাই এখন আমরা প্লান্টিং (চারা রোপণ) ও হারভেস্টিংয়ে (ধান কাটা) সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি। আমাদের টার্গেট হচ্ছে কৃষকদের কাছে ট্রান্সপ্লান্টার, হারভেস্টার ও রিপার পৌঁছে দেয়া। যাতে কৃষকদের ধানের চারা রোপণ ও ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকটে পড়তে না হয়।

তিনি আরো বলেন, এই মেশিন চালানোর বিষয়ে কৃষকদের কী ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় তা আমরা সার্ভে করে জেনেছি। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এই সার্ভে করেছে। আমরা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদেরও এই সার্ভেতে কাজে লাগিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা কৃষিযন্ত্রের ব্যাপারে কৃষকদের পছন্দ জেনেছি। সে অনুযায়ী কৃষকদের কৃষিযন্ত্র সরবরাহ করা হবে।

নতুনভাবে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের আওতায় সরকার কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকির ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে হাওর এলাকার জন্য ৭০ শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকি বিদ্যমান আছে। এ দুটিকে সরকার একটিতে নিয়ে এসেছে। এখন থেকে সব এলাকার জন্য কৃষি যন্ত্রে ৬০ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার।

গত বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জসহ হাওর অধ্যুষিত এলাকায় ধানকাটা শ্রমিক নিয়ে কৃষক চরম দুর্বিপাকে পড়ে। কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে দিনমজুরের দৈনিক মজুরি অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ধান কাটার মৌসুমের শুরুতে এই মজুরি ৪৫০-৫০০ টাকা থাকলেও, ব্যাপকভাবে ধান কাটা শুরু হলে জনপ্রতি এই মজুরি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় উঠে। অনেকক্ষেত্রে টাকা দিয়েও দিনমজুর পাওয়া যায়নি। অথচ বিপরীতে ধানের দাম শুরুতে ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে থাকলেও ধান কাটা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধানের দাম অস্বাভাবিক কমে যায়। কোথাও কোথাও এই মণপ্রতি এই দাম ৪০০ টাকায় নেমে আসে। অথচ জমি ও বীজ তৈরি থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত এক মণ ধানে খরচ পড়ে ৭৫০-৮০০ টাকা। এতে ধান উৎপাদন কমে কৃষককে চরম লোকসানের মুখে পড়তে হয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯/এসএনএ/এসডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.